শিরোনাম
সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

লাখো রোহিঙ্গার মহাসমাবেশ

পাঁচ দফা পূরণ ছাড়া একজনকেও ফেরত পাঠানো হলে প্রতিরোধ, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব, নাগরিকত্ব দিলেই ফেরার প্রতিশ্রুতি, মিয়ানমারকে বাধ্য করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান

জুলকার নাইন ও আইয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার থেকে

লাখো রোহিঙ্গার মহাসমাবেশ

কক্সবাজারের উখিয়ায় গতকাল মহাসমাবেশ করে রোহিঙ্গারা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তাসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ করতে মিয়ানমার সরকারকে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। দাবি পূরণ ছাড়া একজনকেও ফেরত পাঠানো হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা। এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে প্রতিরোধের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে নেতাদের আহ্বানে উচ্চ কণ্ঠে অঙ্গীকারও করেছে লাখো রোহিঙ্গা। বাংলাদেশে আসার দুই বছর উপলক্ষে গতকাল কক্সবাজারের উখিয়ায় এক মহাসমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, শুধু দাবি পূরণ হলে সবাই একসঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে যাবেন। মিয়ানমার সরকারকে দাবি পূরণে বাধ্য করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি ফের আহ্বান জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, প্রত্যাবাসনের আগে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা, সুরক্ষিত রাখাইন রাজ্য, চলাফেরার স্বাধীনতা, জাতিসত্তার স্বীকৃতি এবং আশ্রয়কেন্দ্রে নয়, নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরে যেতে দিতে হবে।

২৫ আগস্টকে ‘গণহত্যা দিবস’ উল্লেখ করে কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্পে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। রাখাইনে গণহত্যা, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতন এবং জড়িত সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থি মগদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবিতে নিহত রোহিঙ্গাদের স্মরণে মহাসমাবেশে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত চলা এ সমাবেশে যোগ দিতে ভোর থেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা কুতুপালং চলে আসেন। মাথায় টুপি, সাদা শার্ট ও লুঙ্গি পরা রোহিঙ্গাদের অনেককেই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা টিশার্ট গায়ে জড়ানো দেখতে পাওয়া যায়। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নামের সংগঠনের চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমরা পরবাস জীবন যাপন করছি। নিজ ভিটেমাটিতে এখনো ফিরতে পারিনি। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের দেখতে আসেন, সহানুভূতি জানান। কিন্তু কেউ আমাদের নিজ দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নেননি। এতে মিয়ানমারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাসীও ব্যর্থ।’

আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটির নেতা মাস্টার মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে শুধু অধিকার ফিরে পেতে। আমরা নিজেদের দেশে ফিরতে চাই। কিন্তু অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া কখনো ফিরব না। মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখা বোকামি।’ নারীনেত্রী হামিদা বেগম বলেন, ‘দুই বছর ধরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এ জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা এখন ঘরে ফিরতে চাই। পাশাপাশি আমাদের যারা নির্যাতন করে এ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, তাদের বিচার চাই।’ রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম বলেন, ‘বাংলাদেশে থাকার ইচ্ছা আমাদের নেই। তবে বিপদে পড়ে আজ আমরা শরণার্থী। আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের সরকার ও নাগরিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তবে এ অবস্থায় আমরা ফিরে গেলে আবারও নির্যাতন হতে পারে।’ ‘মিয়ানমার সরকার আলোচনার কথা বলে আমাদের সঙ্গে ছলনা করছে’ উল্লেখ করে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘যেখানে গত বৈঠকে আরও আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়, সেখানে হঠাৎ প্রত্যাবাসনের ঘোষণা দেয় মিয়ানমার সরকার। কিন্তু বৈঠকে দাবি মানার বিষয়ে আরও আলোচনার কথা বলা হয়েছিল, সেখানে প্রত্যাবাসনের ঘোষণা অবান্তর।’

সমাবেশে আসা রোহিঙ্গা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যে দাবিগুলো পেশ করা হয়েছে, তা আমাদের অধিকার। মিয়ানমার সরকার আমাদের অধিকার দিতে রাজি নয়। তাই এত ছলনা করছে। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা মিয়ানমারে ফিরে যাব না।’ সমাবেশ শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা নুরুল ইসলাম। মোনাজাতে নিজেদের নাগরিক অধিকার ও আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের জন্য দোয়া কামনা করা হয়। এদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে উখিয়ার বালুখালী ও টেকনাফের পুঁটিবুনিয়া শিবিরে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে নাগরিকত্বসহ পাঁচ শর্ত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ২৫ আগস্ট উপলক্ষে রোহিঙ্গাদের ছোট পরিসরে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য সমাবেশস্থলের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর