রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে জি কে শামীম আতঙ্ক

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে জি কে শামীম আতঙ্ক

নারায়ণগঞ্জে জি কে শামীমের বাড়ি

রাজধানীর মাফিয়া ঠিকাদার জি কে শামীমকে নিয়ে আতঙ্কে আছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে জেলার শীর্ষপর্যায় থেকে জি কে শামীম নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের কেউ নন বলে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে শামীমের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পরপরই তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বলে প্রচার হয়। নথিতে তার নাম না থাকলেও শূন্য পদে তার নাম প্রস্তাব করেছিলেন জেলা সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল। কিন্তু জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর আবদুল হাই দাবি করেন তিনি দলের কেউ নন। গত বছর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আবু হাসনাত শহীদ বাদল। তখন আবদুল হাই ও জি কে শামীম শহীদ বাদলকে দেখতে যান। ছবিতে তা দেখা গেছে। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর আবদুল হাইকে সভাপতি এবং আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি গঠনের ১৩ মাস পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৪ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দীয় আওয়ামী লীগ। তবে এ কমিটিতে ৮টি পদ খালি ছিল। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই জেলা আওয়ামী লীগের ৮টি পদ পূরণের লক্ষ্যে সভায় সদস্য হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান দিপুর নাম সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সেই সভার প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ‘সে সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পক্ষে কাদির, জি কে শামীম ও শরফুদ্দিনসহ আরও দুজনের নাম প্রস্তাব করা হয়। ওই সংবাদ অনুযায়ী, জি কে শামীমকে পদ দেওয়ার ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শামসুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ অনেকেই আপত্তি করেন। শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া দাবি করেছিলেন, জি কে শামীম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি জানান, তার কাছে প্রমাণ আছে,  জি কে শামীম বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের পিএস (একান্ত সচিব) ছিল। এ নিয়ে সভাপতির সঙ্গে শামসুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ জেলা আওয়ামী লীগের অন্য নেতার বাকবিত া হয়। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়।

নারায়ণগঞ্জে সর্বত্র আলোচনা কে এই জিকে শামীম : নারায়ণগঞ্জের সোনারগঁাঁও উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে জি কে শামীম। তিন ছেলে নাসিম, শামীম ও হোসাইনের মধ্যে শামীম ছিলেন দ্বিতীয়। তার বাবা ছিলেন হরহরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শামীমরা তিন ভাই-ই রাজনীতি করেন। বড় ভাই নাসিম জাতীয় পার্র্টি আর শামীম যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শামীম সোনারগাঁও বারদী আলিয়া মাদ্রাসা থেকে এসএসসি ও পঞ্চমীঘাট কলেজ থেকে ১৯৮৮ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় লেখাপড়া করতে সোনারগাঁও ত্যাগ করেন। তিনি ঢাকায় এসে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।  জানা যায়, ঢাকায় প্রথমে একটি মেসে থাকতেন শামীম। সেখান থেকে ধীরে ধীরে নিজের বাড়ি গাড়িসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান তিনি। বাসাবো ও সবুজবাগ এলাকায় বেড়ে ওঠা তার। সেখানে নিজস্ব বাহিনী তৈরি করেন তিনি। সোনারগাঁওয়ে বাড়ি থাকলেও এখানে থাকতেন না শামীম। বাবার বাড়িতে নতুন করে ভবন নির্মাণ করেন। সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় ১০ শতাংশ জমির ওপর তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। বাড়িটিতে বিলাসবহুল আসবাবপত্র ও কোটি টাকার মালামালসহ একজন কেয়ারটেকার থাকেন শুধু। তবে দুই দিন আগেই কেয়ারটেকার ছুটি নিয়ে দরজায় তালা দিয়ে চলে যান। এখন সুনসান নীরবতা ওই বাড়িটিতে। তিনতলা বাড়িটি শামীম একা থাকার জন্যই তৈরি করেছেন। ভিতরে রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের বিশাল ব্যবস্থা।  জানা যায়, গত রমজানের ঈদে সর্বশেষ বাড়ি এসেছিলেন শামীম। ঈদের দিন কাটিয়ে আবার তিনি ফিরে যান ঢাকায়। তবে তার সঙ্গে অস্ত্রসহ ৬ জন গানম্যান আনার বিষয়টি নজর কাড়ে এলাকাবাসীর। স্থানীয়রা জানান, জি কে শামীম সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না তারা। তারা শুধু জানেন, তিনি  ঢাকায় বড় ব্যবসা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তারা জানান, বাবার রেখে যাওয়া ১০ কানি (৩০০ শতাংশ) জমি ছাড়া এখানে আর তাদের কোনো সম্পত্তি নেই। তবে শামীম বাড়িটিতে অনেক খরচ করেছেন এবং ভিতরে অনেক বিলাসবহুল আসবাবপত্র কিনেছেন। তার ভাতিজা সনমান্দি ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার জানান, চাচা তো যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। শেষ ঈদে বাড়ি এসেছিলেন। কেয়ারটেকার চলে গেছে দুই দিন আগে। তবে কোথায় গেছে জানি না।

সর্বশেষ খবর