মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

খেলাধুলার মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি ক্যাসিনো সামগ্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

খেলাধুলার মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি ক্যাসিনো সামগ্রী

মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা হতো জুয়া খেলার সামগ্রী ক্যাসিনো মেশিন। খেলাধুলার সরঞ্জাম হিসেবে দেখানো হতো এসব সামগ্রীকে। দেশীয় একাধিক  প্রতিষ্ঠান এসব মেশিন আমদানির সঙ্গে যুক্ত। ঢাকার বিভিন্ন ক্যাসিনোতে অভিযানের পর এসব মেশিন আমদানির তথ্য খুঁজতে শুরু করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি চালান চিহ্নিত করেছে। এসব চালানে বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনোর যন্ত্রপাতি এসেছে দেশে। কারা এর সঙ্গে যুক্ত, ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে কিনা সেসব খতিয়ে দেখছে কাস্টমস অধিদফতর। কাস্টমস অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে অভিযানের পর কাস্টমস কর্মকর্তাদের নজরে এসেছে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম সম্পর্কে। ডিজিটাল খেলার সরঞ্জাম হিসেবে আমদানি করা এসব মেশিনপত্র আমদানির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি চালানে বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত পণ্য আমদানির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব আমদানির সঙ্গে জড়িত একাধিক প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা হলো- ১৮ দক্ষিণ কমলাপুর। আরেকটি এ বি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। যার ঠিকানা ১৪ মোহাম্মদিয়া হাউজিং, মোহাম্মদপুর। এ দুটি প্রতিষ্ঠান আমদানি ঘোষণাপত্রে আমদানি পণ্যের বিবরণ হিসেবে ‘গেম মেশিন’র কথা উল্লেখ করা হয়। ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানিতে দুটি বন্দর ব্যবহার করা হয়। বেনাপল কাস্টমস ও কমলাপুর আইসিডি থেকে পণ্যগুলো খালাস করা হয় বলে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা গেছে। কাস্টমসের অনুসন্ধানে দেখা গেছে ভারত, চীন, হংকং থেকেই বেশির ভাগ জুয়া খেলার সামগ্রী আমদানি করা হয়েছে। আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে ক্যাসিনো ওয়ার গেম, রুলেট, পুকার সেট ও পুকার চিপ। এসব সরঞ্জাম আমদানি করার এলসি খুলতে ডিজিটাল খেলার সামগ্রী হিসেবে দেখানো হয়েছে। এসব পণ্য আমদানিতে অর্থ পাচারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যেসব ব্যাংকে এলসির মাধ্যমে এসব সরঞ্জাম আমদানি করা হয়েছে সেসব ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে কাস্টমস অধিদফতর থেকে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখতে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ক্যাসিনোতে রুলেট ও স্লাট মেশিনে কোটি কোটি টাকার জুয়া খেলা হয়। এ ছাড়া পোকার নামের এ ধরনের সুসজ্জিত জুয়ার বোর্ড থাকে ক্যাসিনোতে। আন্তর্জাতিক জুয়া নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে ক্যাসিনোতে রুলেট ও স্লাট মেশিন থাকা বাধ্যতামূলক। ক্যাসিনোতে নগদ অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত চিপ নামের বিশেষ ধরনের একটি টোকেন। যা বাংলাদেশে ঘুঁটি নামে পরিচিত। এসব টোকেন বিশ্বের যে কোনো ক্যাসিনোতে ভাঙিয়ে নগদ টাকায় রূপান্তর করা যায়। ক্যাসিনোতে জুয়া খেলার জন্য ১ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার চিপ ব্যবহৃত হয়। তবে ঢাকার বিভিন্ন ক্যাসিনোতে ১ হাজার, ১০ হাজার, ৫০ হাজারসহ বিভিন্ন মূল্যমানের রংবেরঙের চিপ ব্যবহৃত হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার কয়েকটি ক্লাবের ক্যাসিনো হল থেকে রুলেট ও স্লাট মেশিন জব্দ করা হয়েছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ কোথা থেকে সংগ্রহ করেছে তার তথ্য দিতে পারেননি। আমদানিকারক মেশিনগুলো কার কাছে কত দামে বিক্রি করেছেন তারও কোনো তথ্য নেই। তবে অবিশ্বাস্য কম মূল্য দেখিয়ে রুলেট ও স্লাট মেশিনসহ ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানি করা হয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানি করা হয়েছে। আমরা পাঁচটি চালান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি। এসব আমদানির সঙ্গে জড়িত একাধিক আমদানি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ তথ্য নিয়ে এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর