প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সহযোগিতা দরকার। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত সার্বজনীন স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গতকাল নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতরে ইকোসোক চেম্বারে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা : সমতা, সার্বজনীন উন্নয়ন এবং সবার জন্য সমৃদ্ধির চালিকা শক্তি’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় কো-চেয়ারের বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে আজ নিউইয়র্কে লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলের কেনেডি রুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত রবিবার বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮ দিনের সরকারি সফরে নিউইয়র্কে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রীকে বিপুল সংবর্ধনা জানান। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে একদিনের যাত্রাবিরতি করে নিউইয়র্ক আসেন।
প্যানেল আলোচনায় কো-চেয়ারের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্ণ, ধর্ম, রাজনৈতিক বিশ্বাস, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবেচনা ছাড়াই সুস্বাস্থ্য উপভোগ করা সব মানুষের মৌলিক অধিকার। তিনি সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি (ইউএইচসি) অর্জনে অভিন্ন লক্ষ্যের অগ্রগতি এগিয়ে নিতে জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজও ‘ইউএইচসি সমতা, অংশীদারিত্বমূলক উন্নয়ন ও সবার জন্য সমৃদ্ধির চালিকাশক্তি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সহ-সভাপতিত্ব করেন। এতে বাংলাদেশের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে ২৪ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রমুখ।
শেখ হাসিনা বলেন, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা অনুযায়ী সবার সুস্বাস্থ্য এবং ভালো থাকার অধিকার সবার জন্য উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি দুটি বিষয়কে বোঝায়। প্রথমত, সামাজিক অবস্থা বিবেচনা ছাড়াই প্রত্যেকে অবশ্যই সমান সুবিধা ভোগ করবে। দ্বিতীয়ত, সম্পদ ও লাভে প্রত্যেকের সমান ও সাধারণ প্রবেশাধিকার থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সার্বজনীন উন্নয়নের অনুপস্থিতি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এবং সামাজিক ঐক্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সহযোগিতা দরকার।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি (ইউএইচসি) অর্জনের অভিন্ন লক্ষ্যের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার ভিত্তি। ২০৩০ সালের মধ্যে ইউএইচসি ও এসডিজিস অর্জনে প্রতিটি দেশের জন্য স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন কৌশল প্রণয়নে কার্যকর বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পদের সুষম বণ্টন ও প্রবেশাধিকার ছাড়া শুধু প্রবৃদ্ধি অর্জন যথেষ্ট নয়। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত সার্বজনীন স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিব লোকজন সাধারণত বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সেবা নিতে পারে না। ফলে তাদের জীবন-জীবিকা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে। সমাজের দরিদ্র মানুষের সাশ্রয়ী ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মাধ্যমে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যসেবার সমতা আনা যেতে পারে। স্বাস্থ্যে সংকটময় পরিস্থিতির কারণে মানুষকে যেন দরিদ্রতর হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো যায় আমাদের সে চেষ্টা করতে হবে, তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিমাসে ১০ মিলিয়নের বেশি মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা নেয়। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য চাহিদা পূরণ হতে পারে স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক পর্যায়ে। শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় প্রথম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হতে পারে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে আমাদের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা হতে পারে কার্যকর ও সার্বজনীন উপায়।
প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন। ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ হলে ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে বক্তব্য রাখবেন এবং ‘রিকগনাইজিং পলিটিক্যাল লিডারশিপ ফর ইম্যুনাইজেশন ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
এ ছাড়াও তিনি লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।