সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইয়ংমেন্স ওয়ান্ডারার্সসহ ১২ ক্লাবে জুয়া প্রশ্নে রুল নিষ্পত্তি হয়নি ১০ বছরেও

পুলিশ অভিযানের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জুয়া চলছে বছরের পর বছর

আরাফাত মুন্না

ইনডোর গেমের নামে জুয়া খেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের ওপর উচ্চ আদালত থেকে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বছরের পর বছর ধরেই রাজধানীর ক্লাবগুলো বেআইনি এই কর্মকা- চালিয়ে আসছিল। ২০১০ ও ২০১১ সালে ইয়ংমেন্স, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ ১২টি ক্লাব উচ্চ আদালতে পৃথক রিট করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের ওপর তিন মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি রুল জারি করে হাই কোর্ট। তবে এই ৮-৯ বছরেও এসব রিট শুনানির উদ্যোগ নেয়নি রাষ্ট্রপক্ষ। এখন পর্যন্ত ওইসব রুলের শুনানি করে রিট নিষ্পত্তি না হওয়ার সুযোগ নিয়ে ক্লাবগুলো চালিয়ে যাচ্ছিল অবৈধ ক্যাসিনো (জুয়া) ব্যবসা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অভ্যন্তরীণ খেলার (ইনডোর গেম) নামে নিপুণ, ওয়ানটেন, ওয়ানএইট, চোড়চোড়ি, ডাইস, অশ্লীল যাত্রাপালা, জুয়া ও হাউজি খেলাকে অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করে ২০১৪ সালের ১৮ জুন রায় ঘোষণা করে হাই কোর্ট। এ রায় বাস্তবায়নেরও কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। রাজধানীর এই ১২ ক্লাব হচ্ছে- আরামবাগ ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া চক্র, ক্লাব প্যাভিলিয়ন ফকিরাপুল ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব, ডিটিএস ক্লাব, আজাদ বয়েজ ক্লাব, বিজি প্রেস স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সোসাইটি ক্রীড়াচক্র বিমানবন্দর কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। সম্প্রতি এই ১২ ক্লাবের অধিকাংশতেই র‌্যাব ও পুলিশ চলমান অভিযান পরিচালিত করে জুয়া বন্ধ করেছে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ক্লাবগুলোতে জুয়া খেলা বন্ধ ছিল। পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ক্লাবগুলোতে আবারও চালু হয় ইনডোর গেমের নামে জুয়া। জুয়া বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অভিযান চালু করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিষেধাজ্ঞা নিতে আদালতের দ্বারস্থ হয় ক্লাবগুলো। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ইনডোর গেম পরিচালনার বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে ওই রিটগুলো করা হয়েছিল। আদালত এরকম অনুমতি দিলে আমাদের কিছু করার থাকে না। তিনি বলেন, ওই রিটগুলোর চূড়ান্ত শুনানি হয়নি এখন পর্যন্ত। আদালত কিছু সময় দিয়েছিল। তবে এখন এসব রিটের চূড়ান্ত শুনানি করতে সুপ্রিম কোর্টের ছুটি শেষ হলে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। আরামবাগ ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পক্ষে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে হাই কোর্টে রিট পরিচালনা করেন আইনজীবী মাসউদ আহমেদ সাইদ। তিনি বলেন, ওই সময় এই ক্লাবগুলোতে যে ইনডোর গেমস হতো, তা শুধু টাকার বিনিময়ে হতো না। সেখানে নানাভাবে বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল। যা নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সেখান থেকে ক্লাবের একটা উপার্জন হতো। এটি ওই ক্লাবগুলোর এক ধরনের ব্যবসা বলা চলে। তিনি বলেন, রিট আবেদনে এরকম জুয়ার পক্ষে কোনো আবেদন ছিল না। রিটে বলা হয়েছিল, ক্লাবের এই ব্যবসা পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রশাসন যাতে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে না পারে, সেই নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, তবে ক্যাসিনো বা নতুন যেসব জুয়া চলছে তা কোনোভাবেই চলতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের ছুটি শেষ হলে রিট নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান আইনজীবী মাসউদ আহমেদ সাইদ।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আদালত তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। চার সপ্তাহের রুল জারি করেছিল। পরবর্তীতে বেঞ্চ ভেঙে যাওয়ায় নতুন কোনো বেঞ্চে রিটের চূড়ান্ত শুনানির উদ্যোগ না নেওয়াকে কাজে লাগিয়ে ক্লাবগুলো ইনডোর গেমের নামে জুয়া চালাচ্ছিল। তবে এই রিট নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আরও অনেক আগেই সচেতন হওয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন তিনি।

জুয়া নিষিদ্ধ করে হাই কোর্টের রায় : সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অভ্যন্তরীণ খেলার (ইনডোর গেমস) নামে নিপুণ, ওয়ানটেন, ওয়ানএইট, চোড়চোড়ি, ডাইস, অশ্লীল যাত্রাপালা, জুয়া ও হাউজি খেলাকে অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করে ২০১৪ সালের ১৮ জুন রায় ঘোষণা করে হাই কোর্ট। তবে সরকার ঘোষিত জনগণের জন্য উন্মুক্ত স্থানে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি সাপেক্ষে ইনডোর গেমস করা যেতে পারে বলে রায়ে বলা হয়েছে। সেটিও হতে হবে দিনের বেলায় নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য। বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই রায় ঘোষণা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর