মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’ বলায় রাঙ্গাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড়

শহীদের পরিবার ক্ষমা চাইতে বলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’ বলায় রাঙ্গাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড়

নব্বইর স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্যে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথ কাঁপানো মিছিলের অগ্রভাগে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন খালি গায়ে বুকে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক,’ আর পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে পুলিশের গুলির টার্গেট হয়ে শহীদ হন। বদলে যায় রাজনৈতিক দৃশ্যপট। পতন হয় এরশাদের। সেই শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’, ‘ফেনসিডিলখোর’ বলেছেন রাঙ্গা। এ জন্য রাঙ্গাকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন শহীদ নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবি। রাঙ্গার বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রাঙ্গার বিচার চাওয়া হচ্ছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাঙ্গার বক্তব্যের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শহীদ নূর হোসেনের পরিবার। শহীদ নূর হোসেনের মা ছাড়াও অংশ নেন, তার ভাই আলী হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, বোন শাহানা বেগমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।

এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে শহীদ জননী মরিয়ম বিবি বলেন- নূর হোসেন আমার একার ছেলে নয়, সে জনগণের ছেলে। রাঙ্গা জনগণের ছেলেকে নেশাখোর বলেছেন। সে যদি নেশাখোর হতো, তাহলে গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিতে পারত না। আমি জনগণের কাছে বিচার চাই, আল্লাহর কাছে বিচার চাই। নূর হোসেনের মা আরও বলেন- আমার ছেলে বুকে-পিঠে স্লোগান লিখে রাজপথে নামল গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের জন্য। কীসের জন্য নামল? ও কি পাগল ছিল, ওর কি জ্ঞান, বিচার ছিল না? আজ ৩২ বছর পরে ওরে নেশাখোর বলা হলো। আমি এ বিচারের দায়ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম। জনগণের কাছে রাঙ্গার ক্ষমা চাইতে হবে।

রাঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা করবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মরিয়ম বলেন- আমি আমার ছেলেকে বলেছি, মামলা করা উচিত। আমি মামলা করতে রাজি আছি।

ওই কর্মসূচিতে শহীদ নূর হোসেনের ভাই আলী হোসেন বলেন, আমার ভাইকে দেশের জনগণ ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। সেই নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’, ‘ফেনসিডিলখোর’ বলা হলো কেন? হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাদের বাসায় গিয়ে আমার বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে এসেছিলেন। তিনি সংসদেও ক্ষমা চেয়েছিলেন। আমরা তো ক্ষমা করে দিয়েছিলাম, কেন ৩২ বছর পর আবার পুরনো ক্ষতে আঘাত করা হলো? সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাই বলেন, তখন কি দেশে ইয়াবা ছিল? ফেনসিডিল ছিল? নূর হোসেন দেশের জন্য, জনগণের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিল। জনগণের কাছেই আমরা বিচার চাই। মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবারের সবাই এখনো বসি নাই। পরিবারের অন্য মুরব্বিরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।

প্রসঙ্গত, গত ১০ নভেম্বর ছিল শহীদ নূর হোসেন দিবস। এই দিনকে জাতীয় পার্টি ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে। এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলটির মহাসচিব রাঙ্গা বলেন, নূর হোসেন ‘ইয়াবাখোর’, ‘ফেনসিডিলখোর’ ছিলেন।

রাঙ্গাকে ক্ষমা চাইতে হবে : শহীদ নূর হোসেনকে ‘মাদকাসক্ত’ বলায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু। গতকাল ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

রাঙ্গার কুশপুত্তলিকা দাহ : স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও রাঙ্গার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, মসিউর রহমান রাঙ্গা জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ১৯৮৭ সালের দিকে বাংলাদেশে ইয়াবা বলতে কোনো শব্দের জন্ম হয়নি। রাঙ্গা জাতির কাছে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। যেহেতু জাতীয় পার্টির সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী সমঝোতা আছে, তাই জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্যের স্বার্থে অবিলম্বে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং মসিউর রহমান রাঙ্গার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর