গভীর রাত। ট্রেন ছুটছে চট্টগ্রামের দিকে। যাত্রীর বেশির ভাগই গভীর ঘুমে। কেউ আবার অলস সময় পার করছিলেন গল্পগুজবে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। যে এলাকা দিয়ে ট্রেনটি অতিক্রম করছিল, সেখানকার মানুষও ঘুমে। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ট্রেন তার গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ! শব্দটা যেন থামছিল না। এর পরই মানুষের আর্তনাদ। বাঁচাও বাঁচাও গগনবিদারী চিৎকারে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে বহদূর চলে যায়। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এলাকাবাসী জেগে ওঠে এলাকা কাঁপানো ভয়ঙ্কর শব্দে। পুরো গ্রাম একসঙ্গে জেগে ওঠে। গ্রামবাসী ছুটতে থাকে দুর্ঘটনাস্থলের দিকে। কাছাকাছি গিয়েই হতবাক তারা। দোমড়ানো-মোচড়ানো ট্রেনের বগিগুলো লাইন থেকে ছিটকে পড়ে আছে। আর ভিতরে আটকে রয়েছে শত শত রক্তাক্ত মানুষ। বাঁচার করুণ আর্তনাদ তাদের। যেন মহাপ্রলয় ঘটে গেছে সেখানে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেলস্টেশনে আন্তনগর তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষের পর এমন দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। উদ্ধারকর্মী ও আহতদের কাছে এমন বিভীষিকাময় বর্ণনা পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন থেকে চিৎকার আর কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। দোমড়ানো-মোচড়ানো বগিগুলোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যাত্রীদের হাত, পা। এমনকি মাথাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে। কোথাও কোথাও রক্তের জমাট দেখা যায়। এ অবস্থায় গ্রামবাসীরাই প্রথম উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে আসে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। উদয়ন এক্সপ্রেসের তিনটি বগি থেকে উদ্ধারকারীরা একে একে লাশ বের করে আনতে থাকেন। বীভৎস অবস্থা। কারও পা, হাত, মাথা শরীর থেকে আলাদা হয়ে বিভিন্ন স্থানে পড়ে রয়েছে। উদ্ধারকারী দলের আনিস মিয়া জানান, ‘স্ত্রীর ডাকে ঘুম ভাঙে। দ্রুত আমরা কয়েকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি শুধু কান্নার শব্দ। তারপর উদ্ধারকাজে লেগে যাই।’ গ্রামের লোকজন গাড়ির ব্যবস্থা করে হতাহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মসজিদের মাইকে মুয়াজ্জিনের ঘোষণা শুনে অসংখ্য মানুষ উদ্ধারকাজে অংশ নেন। ভয়াবহ এ দৃশ্য দেখে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা-সিলেট রেলপথে সোমবার দিবাগত ভোররাত প্রায় ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেলস্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তনগর তূর্ণা নিশীথা ৭৪১ ও সিলেট থেকে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ৭২৪ ট্রেনের এ সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক নারী-পুরুষ। হতাহত সবাই উদয়নের যাত্রী।এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রেলওয়ে মহাপরিচালক, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থলে থেকে তদারকি করেন।
ঘটনার পর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট, নোয়াখালী-ঢাকা, নোয়াখালী-সিলেট রেলপথে সব ধরনের ট্রেন চলা ৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আখাউড়া ও লাকসাম থেকে রিলিফ ট্রেন এসে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, জেনেটিক কম্পিউটার একাডেমি মুক্ত স্কাউট গ্রুপ, সিডিসি মুক্ত স্কাউট গ্রুপ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করেছে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের যুব রেড ক্রিসেন্ট, পিস ভিশন ও জেলা ছাত্রলীগের কর্মীরা রক্ত প্রদানসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করেছেন।
রেলস্টেশন, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে আসা আন্তনগর ট্রেন ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা সোমবার দিবাগত ভোররাত ২টা ৪৮ মিনিটে শশীদল রেলস্টেশন অতিক্রম করে মন্দবাগ স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। মন্দবাগ স্টেশনমাস্টার স্টেশনে প্রবেশের আগেই আউটারে থামার জন্য লালবাতি জ্বালিয়ে সংকেত দেন। অন্যদিকে সিলেট থেকে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস কসবা স্টেশন ছেড়ে মন্দবাগ স্টেশনে প্রবেশের পথে স্টেশনমাস্টার তাকে মেইন লাইন ছেড়ে দিয়ে ১ নম্বর লাইনে আসার সংকেত দেন। ওই ট্রেনের চালক ১ নম্বর লাইনে প্রবেশ করার সময় ছয়টি বগি প্রধান লাইনে থাকতেই অন্যদিক থেকে আসা তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক সিগন্যাল (সংকেত) অম্যান্য করে দ্রুতগতিতে ট্রেন চালান। ফলে উদয়ন ট্রেনের মাঝামাঝি তিনটি বগির সঙ্গে তূর্ণা নিশীথার ইঞ্জিনের সংঘর্ষ হয়। এতে উদয়ন ট্রেনের তিনটি বগি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে মারা যান উদয়নের ১৬ যাত্রী এবং আহত হন শতাধিক নারী-পুরুষ-শিশু।
মন্দবাগ স্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘তূর্ণার চালক তথা লোকো মাস্টারকে ট্রেন থামানোর জন্য আউটার ও হোম দুই স্থানেই লাল বাতি সংকেত দেওয়া হয়েছিল। উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১ নম্বর লাইনে ঢুকছিল। তূর্ণা নিশীথাকে আউটারে থাকার সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চালক ট্রেন দাঁড় না করিয়ে সেই সিগন্যাল অমান্য করে মূল লাইনে ঢুকে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আমার কোনো দোষ নেই।’ দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন দুটি উদ্ধার করতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুমিল্লার লাকসাম ও আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ট্রেন চলা স্বাভাবিক হতে কয়েক ঘণ্টা লাগতে পারে। আহত রবিউল হোসেন সুমন জানান, তূর্ণা ট্রেনের ধাক্কায় উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের পেছনের বগিগুলো উল্টে যায়।
এদিকে কসবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আটকে পড়া যাত্রীদের খাবারের ব্যবস্থাও করেছে তারা। আটকে পড়া যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, পুলিশ সার্বিকভাবে উদ্ধারকাজে সহায়তা করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান জানান, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে লাশ নেওয়ার সুবিধার্থে। এ ছাড়া আহতদের সেবায় জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধান থাকবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন শাহ আলম জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের সদর, কসবা ও আখাউড়া হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম জানান, উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি সাইড দেওয়ার জন্য অন্য লাইনে যাওয়ার সময় তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটি ধাক্কা দেয়। এতে বগিগুলো দুমড়ে-মুচড়ে যায়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী শফিক তুহিন জানান, ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লাগবে উদ্ধারকাজ শেষ হতে।
যে কারণে দুর্ঘটনা
তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। মন্দবাগ রেলস্টেশনে দাঁড়ানোর জন্য সিগন্যাল দেওয়া হয়। ওই সিগন্যালে সিলেট থেকে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ১ নম্বর লাইনে দাঁড়ানো শুরু করে। ট্রেনটির ছয়টি বগি ১ নম্বর লাইনে উঠতে সক্ষম হয়। অন্য বগিগুলো লাইনে থাকা অবস্থায় তূর্ণা নিশীথা সিগন্যাল অমান্য করে ওই ট্রেনের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায়। এতে উদয়নের তিনটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। নিহত ১৬ জনের সবাই উদয়নের যাত্রী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চাচা-চাচির লাশ খুঁজে পেলেন ভাতিজা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগে উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথা ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের দেখতে এসেছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁওয়ের মোহাম্মদ শাহাদাত মিয়া। সেখানে এসে নিজের চাচা মজিবুর রহমান (৫০) ও চাচি কুলসুম (৪৩) লাশ পেলেন তিনি। তাদের লাশ কসবা উপজেলার বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় রাখা ছিল। শাহাদাত মিয়া জানান, মন্দবাগে তিনি কাঠের ফার্নিচার তৈরির কাজ করেন। মন্দবাগ রেলস্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন লাশ দেখতে। স্কুলের বারান্দায় রাখা ছিল তার চাচা ও চাচির লাশ। তিনি চাচা-চাচির লাশ দেখে হতবাক হয়ে পড়েন। তিনি জানান, মজিবুর রহমান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যবসা করতেন। উদয়ন এক্সপ্রেসে সস্ত্রীক চাঁদপুরে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাদের ছেলে ফোন দিয়েছেন খবর জানার জন্য। চাচা-চাচির মৃত্যুর খবর এখনো তাদের জানাতে পারেননি।
তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন
কসবায় তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের সঙ্গে উদয়ন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশ রেলওয়ের সচিব মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন জানান, রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুটি ও জেলা প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলের দুটি কমিটির একটিতে প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। চার সদস্যের অন্য কমিটির প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে। আর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়মকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
যাদের লাশ শনাক্ত হয়েছে
ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা-সিলেট রেলপথে সোমবার দিবাগত ভোররাত প্রায় ৩টার দিকে কসবার মন্দবাগ রেলস্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর তূর্ণা নিশীথা ৭৪১ ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ৭২৪ ট্রেনের সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এদের পরিচয় শনাক্ত করেছে প্রশাসন। নিহতরা হলেন মৌলভীবাজারের জাহেদা খাতুন (৩০), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের আল-আমিন (৩০), হবিগঞ্জের আনোয়ারপুরের আলী মোহাম্মদ ইউসুফ (৩২), চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের পশ্চিম রাজারগাঁওয়ের মজিবুর রহমান (৫৫), তার স্ত্রী কুলসুম বেগম (৪৩), হবিগঞ্জের ভোল্লার ইয়াছিন আরাফাত (১২), চুনারুঘাটের তিরেরগাঁওয়ের সুজন আহমেদ (২৪), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের আদিবা (২), সোহামণি (৩), চাঁদপুরের উত্তর বালিয়ার ফারজানা (১৫), হাইমচরের কাকলি (২০), মরিয়ম (৪), হবিগঞ্জের রিপন মিয়া (২৫), নোয়াখালীর মাইজদীর রবি হরিজন (২৩), চাঁদপুর সদরের ফারজানা (১৫), হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের পিয়ারা বেগম (৩২)।
আহতরা হলেন
আহতদের মধ্যে সুমী (২১), আবুল কাসেম (৪০), মনির (৪০), রাকিব (২৮), হাসান আলী (৭০), দুলাল মিয়া (৬৫), মইন মিয়া (৩৫), হাফসা (১৪), আসমা (২৪), আশিক (৩২), বোরহান (৪০), আসমা বেগম (২৫), নাজমা (৩০), রাজন (২৮), রাহুল (১), জনি (২৪), অজ্ঞাত (৩০), অলিউল্লাহ (৩৬), আলমগীর (৪০), মুখলেস (৪৩), জজ মিয়া (২৬, মীম (৭), রহিমা (৪৫), লোকমান (২২), রুবেল (৩৫), আনোয়ার (৩৩), সুব্রত (৪৫), সুরাইয়া খাতুন (৬০), তারা হরিজন (৬৫), ইমন (১৮), সৈকত (৩৫), রায়হান (২০), শাহিদা (৪৫), রেণু (৩৫), আবুল কালাম (৩৫), অজ্ঞাত (৪), অজ্ঞাত (৩০)-কে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে বেশির ভাগ আহতকে ঢাকা মেডিকেল, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শওকত হোসেন বলেন, ‘আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়েই জরুরি বিভাগ, সার্জারি ও অর্থোপেডিক ওয়ার্ড ও অপারেশন থিয়েটার জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তুত করে একটি মেডিকেল টিম গঠন করি। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজের ১২ জন চিকিৎসকের একটি টিমও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। আহতের বেশির ভাগই হাত-পা ভাঙা ও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত। তার বেশির ভাগকেই ঢাকা ও সিলেটে পাঠানো হয়েছে।’
রেলমন্ত্রীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন
রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ‘তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের লোকোমোটিভ মাস্টার সিগন্যাল ভঙ্গ করেছেন। আমরা বিস্তারিত জানার জন্য জেলা প্রশাসন ও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।’ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। রেলমন্ত্রী বলেন, ‘নিহতদের পরিবারের ক্ষতি টাকা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। তবু রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১ লাখ করে ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তাৎক্ষণিকভাবে তূর্ণা নিশীথার লোকোমোটিভ মাস্টার ও সহকারী মাস্টার এবং গার্ডকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এখানে উদয়ন এক্সপ্রেসের কোনো ত্রুটি দেখছি না।’