শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বাগত কলকাতা প্রস্তুত ইডেন

নিউমার্কেটের বুক চিরে এদিক-ওদিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে মার্কুইজ স্ট্রিট, লিন্ডসে স্ট্রিট। হাড় জিরজিরে, কঙ্কালসার লোকগুলো ব্যস্ত স্ট্রিটগুলোতে এখনো দিনরাত টাঙা চালাচ্ছেন। এক সময় কলকাতার সর্বত্র টাঙা চলত।

এখন গন্ডি কমে নিউমার্কেট লাগোয়া স্ট্রিটগুলোতেই সীমাবদ্ধ। টাঙাওয়ালাদের ঘামঝরানো পরিশ্রম ও কষ্ট দেখে ফরাসি সাহিত্যিক ডোমিনেক লাপিয়ের লিখেছিলেন অমর সাহিত্য ‘সিটি অব জয়’ বা ‘আনন্দ নগরী’। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, সৌরভ গাঙ্গুলী, অমর্ত্য সেন, চানক্যের শহর কলকাতা এখন ‘আনন্দ নগরী’। চারশ বছরের পুরনো কলকাতা, গঙ্গা পাড়ের কলকাতায় ক্রিকেটকে ঘিরে ফের আনন্দের বান লেগেছে। উৎসবের নগরীতে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের গোলাপি বলে ও দিবারাত্রির ঐতিহাসিক টেস্ট ঘিরে পুরো কলকাতা এখন ক্রিকেট জ¦রে আক্রান্ত। বুঁদ হয়ে আছে গোলাপি বলে। গোলাপি বলে টেস্ট এবারই প্রথম নয়, ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড প্রথম খেলেছিল গোলাপি বলে। এখন পর্যন্ত গোলাপি বলে টেস্ট হয়েছে ১০টি। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ছাড়াও খেলেছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে। এই প্রথম খেলবে বাংলাদেশ ও ভারত। সেটা আবার আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে। শুরুতে দুই দলের সূচিতে ছিল না গোলাপি বলের টেস্ট। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব নিয়ে গাঙ্গুলী তড়িতগতিতে সিদ্ধান্ত নেন গোলাপি বলে টেস্ট আয়োজনের। গাঙ্গুলীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এরপর বাকি সব ইতিহাস। আগামীকাল শুরু টেস্ট। নন্দন কানন ইডেন টেস্টকে সোনায় মুড়িয়ে রাখতে চেষ্টার শতভাগ ঢেলে দিচ্ছেন গাঙ্গুলী। আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট খেলা ক্রিকেটারদের। শুধু তাই নয়, গোলাপি বলের ঐতিহাসিক টেস্টটিকে ইতিহাসের ব্রাকেটবন্দী করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব, মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন, শচিন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়কে। এ ছাড়াও ভারতীয় ক্রিকেটের পঞ্চপা-বের অন্যতম সদস্য অনীল কুম্বলেকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খেলার শুরুর দিন সকালে আসবেন। তবে আসছেন না মোদি। অমিত শাহ আসছেন টেস্টের দ্বিতীয় দিন। রাতের কুয়াশা যেন বড় বাধা না হয়, সেজন্য নির্ধারিত সময় থেকে খেলা এক ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়েছে।

টেস্টটিকে বর্ণিল করতে শুরুতেই আকাশ থেকে প্যারাট্রুপার নেমে দুটি গোলাপি বল উপহার দিবেন অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ ও বিরাট কোহলিকে। ১২টা ৫৫ মিনিটে স্টেডিয়ামের ডা. বিধান চন্দ্র রায় স্ট্যান্ডে টাঙানো ঘণ্টি বাজিয়ে টেস্ট শুরুর ঘোষণা দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এরপর বিশেষভাবে তৈরি সোনার কয়েন দিয়ে টস করবেন অধিনায়ক। অধিনায়কসহ পাঁচজন বিশেষ ব্যক্তিত্বকে সোনার কয়েন উপহার দেবেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। খেলা শুরুর পর লাঞ্চ বিরতিতে মাঠে ‘টক শো’ করবেন পাঁচ ভারতীয় ক্রিকেট কিংবদন্তি সৌরভ, টেন্ডুলকার, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ ও কুম্বলে। অবশ্য খেলার শুরুর আগে বাংলাদেশের কিংবদন্তি গায়িকা রুনা লায়লা দুটি বাংলা ও একটি হিন্দি গান গাইবেন। টেস্টটিকে সামনে রেখে নতুন সাজে সেজেছে ইডেন গার্ডেন। সেজেছে কলকাতাও। ৪২ তলা উঁচু শহরের সবচেয়ে বড় দালানটিকে গোলাপি করা হয়েছে। গঙার বুকে একটি ক্রুজ ভেসে বেড়াচ্ছে গোলাপি রং ছড়িয়ে। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে শোভা পাচ্ছে গোলাপি বলের টেস্ট ম্যাচের বিলবোর্ড।

ঐতিহাসিক টেস্টেও সাক্ষী হতে বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকেই উপস্থিত হচ্ছেন কলকাতায়। অভিষেক টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়সহ বিকাশ রঞ্জন দাস, মেহরাব হোসেন অপি, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত,  হাসিবুল হোসেন শান্ত, আকরাম খান, রাজিন সালেহরা আসবেন। কাজ থাকায় আসছেন না প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশের এসব ক্রিকেটারকে গলফ কার্ট দিয়ে ল্যাপ অব অনার দেবে।

সব মিলিয়ে গোলাপি বলে দিবারাত্রির টেস্ট নিয়ে মারমার কাটকাট অবস্থা কলকাতায়। চার দিনের সব টিকিট বিক্রয়ই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

সর্বশেষ খবর