রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিপথে গেলে কাউকে ছাড়ব না : প্রধানমন্ত্রী

যুবলীগের চেয়ারম্যান পরশ, সাধারণ সম্পাদক নিখিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিপথে গেলে কাউকে ছাড়ব না : প্রধানমন্ত্রী

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেসে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতিতে জড়িতদের প্রতি কোনো সহানুভূতি থাকবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিপথে গেলে কাউকে ছাড়ব না। সে যে-ই হোক আমি তাদের ছাড়ব না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদক-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি করে হয়তো ধনার্জন ও বিলাসিতা করা যায়, কিন্তু তাতে সম্মান মেলে না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী গতকাল দুপুরে  ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন। এর আগে তিনি শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম। এ সময় শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। কংগ্রেস অনুষ্ঠানের মঞ্চ বানানো হয়েছিল পদ্মা সেতুর আদলে। কংগ্রেসে উপস্থিত ছিলেন সারা দেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা ও ৮টি জেলার মর্যাদাসম্পন্ন বৈদেশিক শাখার প্রায় ৩ হাজার কাউন্সিলর ও ২৫ হাজার ডেলিগেট এবং ৮ হাজার আমন্ত্রিত অতিথি। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুবলীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ, সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন।

কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশন হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যুবলীগের চেয়ারম্যান পদে শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাঈনুল হোসেন খান নিখিলের নাম ঘোষণা করেন। পরশ হলেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির বড় ছেলে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো ত্যাগের আদর্শ নিয়ে সবাইকে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটা দেশকে গড়ে তুলতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যুব সমাজের মেধা, শক্তি, তাদের মননকে কাজে লাগানো- যারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ করবে দেশ গড়ার জন্য। তিনি বলেন, রাজনীতিক হতে হলে আদর্শ থাকতে হবে। নিজে কী পেলাম সেটা না ভেবে কতটুকু মানুষকে দিতে পারলাম, কতটুকু মানুষের জন্য করতে পারলাম, সেটাই হবে রাজনীতিকের চিন্তা। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের যুব সমাজকে সরকার সেভাবে গড়ে তুলতে চাইছে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা রাজনৈতিক আন্দোলনে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে যুবলীগের অবদান রয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুবলীগের শহীদ নূর হোসেন জীবন দিয়েছেন। প্রতিটি নেতা-কর্মীকে আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মনে রাখতে হবে যে, আওয়ামী লীগ সৃষ্টি হয়েছিল দেশের মানুষের মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে। উড়ে এসে জুড়ে বসা কিংবা ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগীদের হাতে এই সংগঠন বিকশিত হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রতিটি সহযোগী সংগঠনও গড়ে উঠেছে স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। মনে রাখতে হবে আদর্শবিচ্যুত হয়ে দেশের কল্যাণে কিছু করা যায় না। বঙ্গবন্ধুর লেখা দুটি বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এগুলো পড়লে বোঝা যাবে একজন নেতা কীভাবে লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে গিয়ে দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে ওঠেন। দেশের যুব সমাজকে আত্ম-কর্মসংস্থানে ব্রতী হওয়ার জন্য সরকারের নানা পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেওয়া হয়েছে। এ দেশে কেউ বেকার থাকবে না। এ প্রসঙ্গে কারিগরি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হয়ে ওঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

‘এভাবে তুলনা করাটা ম্যান্ডেলাকে অপমান’ : শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তুলনা করে দলটি নেলসন ম্যান্ডেলাকে অপমান করছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী, যিনি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেন, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে, তার সঙ্গে ম্যান্ডেলার তুলনা করাটা ম্যান্ডেলাকে অপমানের নামান্তর। শেখ হাসিনা বলেন, যারা অস্ত্র-অর্থ দিয়ে এদেশের সমাজকে ধ্বংস করেছে, যাদের দুর্নীতিই ছিল নীতি, তাদের সঙ্গে সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তির তুলনা এরা কোন মুখে করে? তিনি বলেন, যিনি ক্ষমতায় থাকতে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, তার তুলনা ম্যান্ডেলার সঙ্গে কীভাবে এরা করে! গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করায় বিএনপির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দল যে মহাজোট করে, সে জোট বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট যে ২৯টি আসন পেয়েছিল সে কথা অনেকেই ভুলে যায়। তারা নির্বাচন নিয়ে এখন কত কিছু বলছে। ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে তো কথা বলে না। বিএনপি যদি এতই জনপ্রিয় সংগঠন হয়ে থাকত, তাহলে মাত্র ২৯টি আসন পায় কেন?

‘ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়ার বেদনা’ : দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন আটকানোর প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। কিন্তু একজন আছেন যিনি একটা ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়তে চান না। বয়সের কারণে তাকে এমডির পদ ছাড়তে হলো। সেই মনোবেদনায় তিনি বিশ্বব্যাংকের কাছে ধরনা দিলেন। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দিল। কিন্তু দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারল না। যখন দুর্নীতি খোঁজা  শুরু হলো তখন পাওয়া গেল খালেদা জিয়া, তারেক, কোকোর দুর্নীতি। আমাদের কোনো কিছু পায়নি। আমি বলেছিলাম, পদ্মা সেতু নিজের অর্থায়নে হবে। আমরা এখন তা-ই করছি। সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে আমরা কারও কাছে মাথা নত করে চলব না। ধার করে ঘি খাব না। নিজের অর্থে নিজেরা চলব।

সর্বশেষ খবর