সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে বক্তারা

খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে আন্দোলন

গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের একাংশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে গতকাল রাজধানীতে সমাবেশ করেছে বিএনপি। সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেয়। সমাবেশের সব বক্তাই বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে আন্দোলনে নামার কথা বলেন। তারা বলেন, বেগম জিয়ার মুক্তি না দিলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি লক্ষ্যে রাজপথে গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, সমাবেশের জন্য এখন থেকে আর অনুমতি নয়, যখন খুশি তখনই রাজপথে নামব।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ হয়। খোলা ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতারা বক্তব্য দেন। বেলা ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই নয়াপল্টন সড়কে বিভিন্ন থানা থেকে আসা মিছিলের ঢল নামে। কাকরাইল থেকে ফকিরেরপুল পর্যন্ত এই জনস্রোত দেখা যায়। খালেদা জিয়ার ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে তার মুক্তির দাবিতে নেতা-কর্মীরা স্লোগান দেন। নয়াপল্টনের সড়কের এক পাশে সারিবদ্ধভাবে পুলিশ দাঁড়িয়ে যানচলাচলের কার্যক্রমে নেতা-কর্মীরাও সহযোগিতা করতে দেখা গেলেও একপর্যায়ে মানুষের ঢলে যানচলাচল একেবারেই আটকিয়ে যায়। আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা মো. শাহজাহান, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, নাজিমউদ্দিন আলম, আজিজুল বারী হেলাল, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, মীর সরফত আলী সপু, আহসান উল্লাহ হাসান, বজলুল বাসিত আনজু, নবী উল্লাহ নবী, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, আনোয়ার হোসেন, সুলতানা আহমেদ, হাসান জাফির তুহিন, হেলেন জেরিন খান, আবদুর রহিম, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, রফিকুল আলম মজনু, শফিকুল আলম মিল্টন, এস এম জিলানী ও ফখরুল ইসলাম রবিন বক্তব্য দেন। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি এ দেশের গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য একটি গণঅভ্যুত্থান গড়ে তোলার জন্য। আজ আর কোনো বিভেদ নয়, এক হয়ে একসঙ্গে আমাদের আন্দোলনে নেমে পড়তে হবে। অতিদ্রুত আমরা সংগঠিত হয়ে, জনগণকে সংগঠিত করে রাজপথে নেমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করব। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনব ইনশা আল্লাহ। আসুন, আগামী দিনে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য দেশনেত্রীকে মুক্ত করার জন্য আমরা সবাই আন্দোলনে নেমে পড়ি। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে যে বিচারক সাজা দিয়েছিলেন এবং তারেক রহমানকে যে বিচারক সাজা দিয়েছিলেন-এই সরকার পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে হাই কোর্টে বিচারপতি বানিয়েছে। আর যে বিচারক তারেক রহমানকে অপর এক মামলায় নির্দোষ বলে খালাস দিয়েছিলেন সেই বিচারক জীবনের ভয়ে নিজের দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে নিজকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এই সরকারের মাথা থেকে পা পর্যন্ত আজকে পচন লেগেছে। এই সরকার ক্ষমতা থাকাকালে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাদের নেত্রীকে তারা মুক্তি দেবে না। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে  বলেন, নির্দেশিত অর্ডারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে আছেন। আমরা যেখানে যাচ্ছি বাধা দেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তির মিছিল ও সমাবেশে। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশের জনগণ সমাবেশ-মিছিলে জমায়েত হচ্ছে। একটা সময় আসবে দেশনেত্রীকে জেল থেকে বের করে নিয়ে আসবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এই সরকার দেবে না, এই আদালত দেবে না। যদি এই সরকার থাকে তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। এখন আমরা মুক্তির আন্দোলন করব নাকি সরকার পতনের আন্দোলন করব? এই সরকার পতন না হলে খালেদা জিয়ার মুক্তি পাবেন না। আপনারা কি সরকারের পতন নিয়ে আন্দোলন করবেন? তা হলে প্রস্তুত হন। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। আইনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের নেত্রীকে বের করে নিয়ে আসব, এটা বিশ্বাস করা যায় না। আমাদেরকে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের মাধ্যমে নেত্রীকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর