রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আগামীতে আপনাদের নতুন নেতা খুঁজতে হবে : শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা নবমবারের মতো দলীয় সভানেত্রীর দায়িত্ব পেয়ে আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমি চাইছিলাম, অন্তত আমাকে একটু ছুটি দেবেন। দীর্ঘ ৩৮ বছর আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু আমার এখন ৭৩। তাই আগামীতে আপনাদের নতুন নেতা খুঁজতে হবে, নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে’।

গতকাল টানা নবমবারের মতো আওয়ামী             লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে এ সময় ‘নো নো’ ধ্বনিতে গোটা প্যান্ডেল প্রকম্পিত করে তোলেন সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলররা। কাউন্সিলরদের উদ্দেশ করে আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাবা-মা, ভাইসহ সবাইকে রেখে আমরা দুই বোন বিদেশে গিয়েছিলাম। দেশে ফিরে পরিবারের কাউকে ফিরে পাইনি। কিন্তু পেয়েছিলাম সারা দেশের মানুষের ভালোবাসা। দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আমার বাবা-মার ভালোবাসা পেয়েছি। তিনি বলেন, আমার দায়িত্বে থাকা ৩৯ বছর হতে চলছে। তাই একটু ছুটি দেবেন চাচ্ছিলাম। কারণ আমি কোনো পদে থাকি বা না থাকি, আওয়ামী লীগেই আছি, আওয়ামী লীগেই থাকব। এটাই আমার পরিবার।

আপনাদের দেওয়া গুরুদায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ ও ত্যাগের মহিমা নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। দলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। দেশের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। আমাদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে দলের নেতা-কর্মীদের বলব, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে, মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। কী পেলাম, কী পেলাম না সে চিন্তা না করে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। দেশের এই উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা যেন থাকে, সেটাই আমরা চাই। নানা চড়াই-উৎরাই, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র পেরিয়ে আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তাই দলকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে, যাতে মানুষ যেন আবারও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করে। আমরা যেন জনগণের সেবা করে যেতে পারি। সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সবাইকে জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, স্বভাবতই ক্ষমতায় থাকলে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যায় না। কিন্তু আমরা সেটা করতে পেরেছি, আমরা মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছি, এই জনপ্রিয়তা আমাদের ধরে রাখতে হবে। ১৯৮১ সাল থেকে ৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও আওয়ামী লীগকে গড়ে তোলার কথা তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা এমনভাবে সংগঠনটি গড়ে তোলেন এবং এর মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের যত অর্জন রয়েছে, তা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি শহীদ হন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়া এবং তার পরবর্তী বাংলাদেশের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর সেখানে গণতন্ত্র ছিল না। দেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন গণতন্ত্র নয়, তখন কারফিউ গণতন্ত্র চলেছে, স্বৈরশাসন চলেছে। দুর্নীতি, অপশাসন, মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র-অর্থ তুলে দিয়ে অবক্ষয়ের মাধ্যমে পুরো দেশকেই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কাউন্সিলরদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। জাতির পিতার আদর্শ মেনে সবাইকে চলতে হবে। যেসব জেলায় এখনো সম্মেলন হয়নি, সেগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, জাতির পিতা যে লক্ষ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই স্বাধীনতার অধিকার যাতে মানুষ পায়, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং বিশ্বের দরবারে মর্যাদা নিয়ে চলবেÑ জাতির পিতা সেই লক্ষ্য নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন। তাই আমাদের একটাই লক্ষ্যÑ বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ করা। সেটা আমরা পূরণ করব। দেশকে আমরা ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, যা দেখে আমার বাবা-মার আত্মা যেন শান্তি পায়। লাখো শহীদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়। তিনি বলেন, বিশ্বসভায় দেশের মানুষ স্থায়ীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।

সুনাম ধরে রাখতে হবে : এদিকে ২১তম কাউন্সিলের পর গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নেতারা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে কাউন্সিলের সব কিছু ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। সব উপকমিটি তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করেছে। আপনাদের সহযোগিতায় আজকে আমি এখানে, না হলে সম্ভব ছিল না। কাজেই সংগঠনের সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হচ্ছে জনগণের দল। যারা উড়ে এসে জুড়ে বসা দল তাদের মানুষের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কিন্তু আমাদের আছে। আওয়ামী লীগ মানুষের কথা, মানুষের অধিকারের কথা বলার জন্য গড়ে উঠেছিল। এটা সব সময় মনে রাখতে হবে। দলের মান-সম্মান যেন থাকে।

 মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের দিকে লক্ষ্য রেখে সবাই সংগঠনকে গতিশীল করবেন। আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলো সেভাবেই গড়ে উঠুক। সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করেছি, তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা দরকার। এটা দ্রুত করা দরকার। অনেকগুলোকে আমরা সময় দিয়েছিলাম কিন্তু ডিসেম্বর মাস অত্যন্ত ব্যস্ত মাস; কাজেই করা যায়নি। সে জন্য আগামী মাসে এটা আমরা শুরু করব। আপনারা দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে ফেলবেন, এটা আমরা চাই।

বক্তব্যের শেষ দিকে নিজের বয়স নিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রসিকতা করে শেখ হাসিনা বলেন, বয়স তো কম হলো না। মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়েছে। ’৮১ সালে এসেছি। তখন মাত্র ৩৪ বছর বয়স। তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার নেই।  এখন বয়স ৭৩ বছর। কাজেই এটা মাথায় রেখেই আগামী দিনের নেতৃত্ব আপনারা গড়ে তুলবেন সেটাই আমি চাই।

সর্বশেষ খবর