ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আশ্বাস সত্ত্বেও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছেই। গতকালও দিল্লি ও উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন স্থানসহ পাঞ্জাব, রাজস্থান, কেরালা, পশ্চিমবঙ্গে হাজার হাজার মানুষ প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করেছেন। বেশ কয়েক স্থানে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। দিল্লির মৌন বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। এদিকে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের জেরে ঝাড়খন্ড রাজ্যের নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটেছে ক্ষমতাসীন বিজেপির। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গত চার দিনের বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ২৮ জন বিক্ষোভকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এদিকে আন্দোলন প্রতিহত করতে গতকালও বিজেপি কিছু স্থানে মিছিল করেছে। তবে এসব মিছিল উত্তেজনা বাড়ানো ছাড়া কোনো ফল দেয়নি। পাশাপাশি পুলিশও ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়ে যাচ্ছে। বিক্ষোভ করায় মহারাষ্ট্রের তিন জেলায় গতকাল ১০৪ জনকে গ্রেফতার, ১২ হাজারেরও বেশি মানুষকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া এখনো বহু স্থানে বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেটসহ মোবাইল সার্ভিস। গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধও জারি রয়েছে। গতকাল কংগ্রেস দিল্লিতে বিশাল মৌন মিছিলের আয়োজন করে। এতে নেতৃত্ব দেন সোনিয়া গান্ধী। এ সময় দলের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী এক টুইটে তরুণদের মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্যস্থান রাজঘাটে এক হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘শুধু মনে ভারতীয় অনুভব করলেই হবে না। এই মুহূর্তে আপনার দেখাতে হবে যে, আপনি ভারতীয় এবং আপনি কোনো বিদ্বেষে ধ্বংস হবেন না।’
আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে বহিষ্কার : আন্দোলনে যুক্ত থাকায় নজিরবিহীন এক পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতের উত্তর প্রদেশের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (এএমইউ) উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে বহিষ্কার করেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা’। এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। তারা ওই বিবৃতিতে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তারিক মনসুর ও রেজিস্ট্রার এস আবদুল হামিদকে বহিষ্কার করা হলো। তারা উল্লেখ করেন, ভিসি এবং রেজিস্ট্রার পদত্যাগ এবং ক্যাম্পাস না ছাড়া পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বর্জন করবে বলে বিবৃতিতে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ঝাড়খণ্ডে বিজেপির ভরাডুবি : ঝাড়খ রাজ্যের নির্বাচনে ভড়াডুবি ঘটেছে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)। ৮১ আসনের ঝাড়খ- বিধানসভা দখল করেছে কংগ্রেস-জেএমএম-আরজেডি জোট। বিজেপিকে ছিটকে দিয়ে রাজ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে জেএমএম। ধারণা করা হচ্ছে এ রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন এই দলের নেতা তথা শিবু সোরেনপুত্র হেমন্ত সোরেন। গতকাল সকাল ৮টা থেকে ভোটের ফলাফল গণনা শুরু হয়। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) পেয়েছে ৩০ আসন, কংগ্রেস দল ১৬ আসন, বিজেপি ২৫ আসন, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ১ আসন, অল ঝাড়খন্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আজসু) ২ আসন, ঝাড়খন্ড বিকাশ মোর্চা (জেভিএম) ৩ আসন, অন্যান্য ৪ আসন।পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন করার কারণে ঝাড়খে ক্ষমতা হারাতে হলো বিজেপিকে। ঝাড়খন্ডে কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরপিএন সিং জানিয়েছেন, তাদের বিজেপিবিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রী হবেন হেমন্ত সোরেন। তিনি আরও বলেছেন, বিজেপিকে হারাতে সব সমমনস্ক দলকেই একজোট হতে আহ্বান করা হয়েছিল। প্রত্যেকেই সাড়া দিয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র বিজয় সোনকার শাস্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন, তারা যা আশা করেছিলেন, তার থেকে উল্টো হয়েছে ঝাড়খে র ফলাফল। এদিকে মহাজোটের জয়ের খবর আসতেই টুইট করে অভিনন্দন জানিয়ে মমতা ব্যানার্জি লিখেছেন, ‘তাঁদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে আপনাদের ওপর ভরসা করেছেন ঝাড়খ-বাসী। ঝাড়খন্ডের সব ভাইবোনদের জন্য শুভেচ্ছা। সিএএএনআরসির প্রতিবাদের মধ্যেই ভোট হয়েছিল। এই রায় নাগরিকদের পক্ষে।’