বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ

মধ্যপ্রদেশে গতকাল নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ মিছিল -এএফপি

ভারতের রাজধানী দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশের ভুপালে গতকালও নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধনের (এনআরসি) বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি জোটের মধ্যে ভাঙনের আভাস পাওয়া গেছে। যদিও এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ভাষণে জনগণকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। গতকাল মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের নেতৃত্বে সিএএ ও এনআরসির বিরুদ্ধে ভুপালে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। এ মিছিলে কংগ্রেস নেতা-কর্মী, অন্যান্য দলের প্রতিনিধি, এনজিও, প্রাক্তন সেনাবাহিনীর সদস্য, অ্যাডভোকেট এবং শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। এ ছাড়া এদিন আরেকটি বড় বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর ক্যাম্পাসে। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন লেখক অরুন্ধতী রায়। দিল্লির মান্ডি হাউস থেকে যন্ত্ররমন্ত্রর পর্যন্ত আরেকটি বিক্ষোভ-সমাবেশ করা হয়। এতে স্বরাজ ভারত নেতা যোগেন্দ্র যাদব এবং জেএনইউএসইউর প্রাক্তন ছাত্রনেতা উমর খালিদও যোগ দেন। এ কর্মসূচি থেকে সরকার ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়। সমাবেশে চন্দ্রশেখর আজাদ, রাজগুরু এবং ভগত সিংয়ের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের ছবিও বহন করা হয়। এদিকে বড়দিন উপলক্ষে এক ভাষণে গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আন্দোলনকারী জনতার উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা নিজেরা নিজেদের সম্পদই ধ্বংস করছেন। জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। আপনারা শান্তির পথে ফিরে আসুন।’ পাশপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও আপসরফার পথে হাঁটার ইঙ্গিত দেন। তিনি গতকাল গণমাধ্যমকে জানান, আন্দোলন পরিস্থিতি নিয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বসতে চান। তিনি জানান, নাগরিকত্ব সংশোধন বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে করে কেন্দ্র আলোচনার পথে থাকতে চায়। তাই তিনি মমতা ব্যানার্জি ও পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে বসতে চান। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশ উত্তাল হয়ে ওঠায় মোদি সরকারের জোটে ভাঙনের আলামত শুরু হয়েছে। জোট শরিক শিরোমণি অকালি দল নেতা নরেশ গুজরাল গতকাল অভিযোগ করেছেন, ‘অটল বিহারি বাজপেয়ির আদর্শ মেনে চলছে না বিজেপি। বাজপেয়ি শরিকদের মতামত নিয়েই সব সিদ্ধান্ত নিতেন। কিন্তু মোদি-অমিত শাহরা শরিকদের গুরুত্ব না দিয়েই এককভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিজেপিকে সমর্থনের বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।’

ভুল স্বীকার উদ্ধব ঠাকরের : হিন্দু ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কট্টর সংগঠক শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এতদিন বলে এসেছেন, ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতিই আসল।’ কিন্তু দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হওয়ায় এখন তিনি বলছেন, ‘রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম জুড়ে আমরা ভুল করেছিলাম।’ তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না ধর্ম হেরেছিল জুয়ার কাছে। তাই এটাকে সঠিক জায়গায় রাখতে হবে। আমরা সেটা ভুলে গিয়েছিলাম।

 উল্টো ধর্ম ও রাজনীতি মিশিয়ে ফেলেছিলাম, যার থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি।’ তিনি বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এতদিন রাজনীতি করে এলেও মহারাষ্ট্রের গত বিধানসভার নির্বাচনে সে বাঁধন আলগা হয়ে গেছে। এখন তিনি বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায়। তাই আগে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধাকেও ভুল হিসেবে দেখছেন তিনি।

সোনিয়া-প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে মামলা : নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী ও তাঁর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার আলিগরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এ মামলা করেন আইনজীবী প্রদীপ গুপ্ত। এ ছাড়া তামিলনাড়ুতে পুলিশের অনুমতি ছাড়া সিএএবিরোধী বিক্ষোভ করায় ডিএমকে পার্টির নেতা এম কে স্টালিনসহ প্রায় ৮ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারলেন না রাজ্যপাল : ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধনের (এনআরসি) পক্ষে কথা বলায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য) জগদীপ ধনখড়কে ঐতিহ্যবাহী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ঢুকতে দেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর