সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুরনো সমস্যা সংকটের কোনো সমাধান দেখতে না পেয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই আতঙ্ক ভর করেছে। শেয়ারবাজারে যে বড় দরপতন হচ্ছে এর কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন। অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন অনেক নিচে নেমে গেছে। তবে এই আতঙ্কের পেছনে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে। তারা কারসাজিতে জড়িতদের বিচার করতে পারেনি। সুশাসন ফেরাতে পারেনি। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমায় শেয়ারবাজারে এখন তারল্য মারাত্মক। এসব কারণে বাজার এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মির্জ্জা আজিজ বলেন, ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা, বৃহৎ মূলধনী ও সরকারি কোম্পানির শেয়ার না আনা, গ্রামীনফোনের সংকট। এই তিনটি কারণে বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাতের চরম দুরবস্থা। খেলাপি ঋণ, অনিয়ম যেমন রয়েছে তেমনি তারল্য সংকট আছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ১০ শতাংশের নিচে। ব্যাংকগুলোতে ঋণ দেওয়ার মতো অর্থ নেই। বেসরকারি খাতে যদি ঋণ প্রবাহ না থাকে শেয়ারবাজারেও বিনিয়োগ হবে না। আবার এখন ৯ শতাংশে ঋণ সুদ হার থাকলে সাড়ে চার শতাংশে চলে আসবে আমানতের হার। তাহলে ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ করতে আরও কঠিন সমস্যার মুখে পড়ছে। ব্যাংকিং খাতের এ দুরবস্থা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে শেয়ারবাজারে পুঁজি কোথা থেকে আসবে? ফলে বাজারে এখন আমরা দেখছি চরম তারল্য সংকট। তিনি বলেন, আগের অর্থমন্ত্রী ২৬টি সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার কথা বলেছিলেন। একটিও তালিকাভুক্ত করা যায়নি। বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা যায়নি। ভালো ও বৃহৎ মূলধনী কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে না পারলে বাজার স্থিতিশীল হবে না। গত কয়েক বছরে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে তার বেশির ভাগের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। খুবই ছোট মূলধনী কোম্পানি। যেগুলো নিয়ে নানা কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গ্রামীণফোনের সংকট বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রতিদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর কমছে। এটা বাজার ধসে পড়ার একটি কারণ। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই এর জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কর্তৃপক্ষ কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। বিনিয়োগকারীরা হতাশ। দীর্ঘদিন পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটায় নতুন বিনিয়োগ আসছে না। এতে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে ভালো কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে। কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।