মুজিববর্ষে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করল আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর পর্যন্ত দীর্ঘ দুই কিলোমিটার মিছিল করেন ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয়, সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এই মিছিলে শামিল হয়েছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও। মুজিববর্ষ উপলক্ষে র্যালি করা হলেও মূলত তা নির্বাচনী শোডাউনে পরিণত হয়। ভোটের প্রচারণার শেষ দিন এতে নেতা-কর্মীর ঢল নামে। এতে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। তবে এই সমাবেশের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেতা-কর্মীদের মুখে স্লোগান ছিল উন্নয়নের জন্য নৌকার প্রার্থী ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী করার। র্যালিপূর্ব সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিএনপি-জামায়াতের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। একই সঙ্গে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের ভোট কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দেন তারা। বেলা ৩টায় মিছিল শুরু করার কথা থাকলেও বেলা ১টা থেকে দক্ষিণের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেত হতে থাকেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে। র্যালির আগে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, দলীয় মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ রায় প্রমুখ। আমির হোসেন আমু ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ফজলে নূর তাপসের জন্য ভোট চেয়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন তিলোত্তমা ঢাকা। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য ঢাকায় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে এবং শক্তিশালী করতে হলে যেই পুরান ঢাকা একদিন বঙ্গবন্ধুকে ভোট দিয়ে বাঙালির আশা পূরণ করেছিল, আজকে সেই পুরান ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর রক্ত, বঙ্গবন্ধুর নাতি শেখ ফজলে নূর তাপসকে নৌকায় ভোট দিয়ে তিলোত্তমা ঢাকার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সে জন্য সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচাল করার জন্য প্রথম থেকেই নানা ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। এদিকে সমাবেশ সফল করতে দুপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিট থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। বরাবরের মতো এবারও সমাবেশে দৃশ্যমান উপস্থিতি ঘটায় যুবলীগ। চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে বিশাল এক মিছিল আড়াইটার দিকে সমাবেশে যোগ দেয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে বিশাল মিছিল রমনা থেকে মতিঝিলে পৌঁছায়। মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল বাহার মজুমদারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মিছিল বের করেন। দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর দক্ষিণের নেতারা বিশাল মিছিল করেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।