রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিটুমিন প্লান্টের যাত্রা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

যাত্রা শুরু হলো দেশের প্রথম বেসরকারি বিটুমিন কারখানা ‘বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টের’। সরকারি-বেসরকারি নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ড ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে গতি আনতেই বেসরকারি পর্যায়ে বিটুমিন উৎপাদনের পদক্ষেপ নেয় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ছাড়াও বিশিষ্টজনরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বেলা পৌনে ১২টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। একে একে বক্তব্য রাখেন উপস্থিত অতিথিরা। বিটুমিন প্লান্ট প্রসঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপ জানিয়েছে, বিটুমিন জ্বালানি তেলের একটি বাই-প্রোডাক্ট পণ্য। এটি মূলত রাস্তাঘাট নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে বছরে বিটুমিনের চাহিদা কয়েক লাখ টন। এর প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি ৭০ হাজার টন উৎপাদন করে। বাকি বিটুমিন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে প্রায়ই বিদেশ থেকে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি করে সড়কে ব্যবহারের কারণে সড়ক টেকসই হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় দেশেই সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন বিটুমিন উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে নতুন প্লান্ট স্থাপন করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপের বিটুমিন প্লান্ট থেকে বছরে সাড়ে ৮ লাখ টন বিটুমিন ও পিচ উৎপাদন হবে। বসুন্ধরা গ্রুপ জানায়, দেশের উন্নয়নের জয়যাত্রায় অংশীদার হতেই বসুন্ধরা গ্রুপ বিটুমিন প্লান্ট চালু করেছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিশেষ করে সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণে বিটুমিনের চাহিদা পূরণে এই প্লান্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর আমরা উৎপাদিত উচ্চমানের বিটুমিন বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছি। দেশের চাহিদা বাড়লে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টে। দেশে বর্তমানে বিটুমিনের চাহিদা প্রায় ৫ লাখ টন, এর ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। বাকি ১০ শতাংশ বিটুমিন সরবরাহ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্টার্ন রিফাইনারি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল অনুযায়ী টেকসই হচ্ছে না। এতে দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি মাসে বিটুমিনের চাহিদা প্রায় ৪২ হাজার টন। উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্প্রসারিত হওয়ায় প্রতি বছর এর চাহিদা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। সড়কে ব্যবহারের জন্য পেনেট্র্যাশন গ্রেডের বিটুমিন উৎপাদন ছাড়াও বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টে প্রিমিয়াম মানের পিচ উৎপাদনের সক্ষমতাও রয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কাটব্যাক, ইমুলসিফাইড, অক্সিডাইজড ও পলিমার (এসবিএস, রাবার পাউডার) উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সাধারণ পেনেট্র্যাশন গ্রেড (৬০-৭০/৮০-১০০) ও উন্নত গ্রেডের বিটুমিন চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে ২২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক রয়েছে, এর বড় অংশই সম্প্রসারিত হচ্ছে। সরকার দেশের প্রতিটি জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এ ছাড়া জেলা পর্যায়েও সড়ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সারা দেশে স্থানীয় সরকারের অধীনে ৩ লাখ ৫৪ হাজার কিলোমিটার রাস্তা হয়েছে, এর মধ্যে এক লাখ পাঁচ হাজার কিলোমিটার পিচঢালা পাকা রাস্তা। ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকারের পুরো রাস্তাই পাকা করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। ফলে দিন দিন বাংলাদেশে বিটুমিনের চাহিদা বাড়বে। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ হিসেবে বসুন্ধরা এরই মধ্যে সিমেন্ট, পেপার, টিস্যু, এলপিজি উৎপাদন ও বিপণন, জ্বালানি এবং  ট্রেডিং খাতে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টও রপ্তানিনির্ভরতা দূর করে অভ্যন্তরীণ চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদন করে বিদেশে বিটুমিন রপ্তানিতে উদ্যোগী হবে।

সর্বশেষ খবর