বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সব বয়সীই আক্রান্ত

আরও পাঁচজনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৪১ : স্বাস্থ্য অধিদফতর

জুলকার নাইন ও গোলাম রাব্বানী

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে মারা গেলেন ১৭ জন। নতুন শনাক্ত হয়েছেন আরও ৪১ জন। গত ৮ মার্চ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এটাই সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে শনাক্ত হলেন ১৬৪ জন। আক্রান্ত এই ১৬৪ জনের মধ্যে রয়েছেন ছোট-বড় সব বয়সী মানুষই। বৃদ্ধ, প্রাপ্তবয়স্ক, যুবক, কিশোর ও শিশু সবাই আছেন আক্রান্তের তালিকায়।

বাংলাদেশে আক্রান্তদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা। ১৬৪ জন আক্রান্তের মধ্যে এই বয়সেরই ৪০ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৩১ জন। এরপর আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যায় রয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। এই বয়সের ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় সমানসংখ্যক ২৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী এবং ৬০ বছরের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু-কিশোররাও আছেন। ১০ বছরের কম বয়সী ৬ শিশু আক্রান্ত হয়েছে এবং ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী কিশোর আক্রান্ত হয়েছে ৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই পুরুষ এবং ৩০ শতাংশ নারী। এখন পর্যন্ত ১১৪ জন পুরুষ এবং ৫০ জন নারী আক্রান্ত হয়েছেন।

গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায়, ৯০ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৮৪ জন ও ঢাকা জেলায় ৬ জন। এরপরই  নারায়ণগঞ্জে ৩৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তৃতীয় সর্বোচ্চ মাদারীপুরে ১১ জন করোনা রোগী আছেন। ৫ জন রোগী আছেন গাইবান্ধায়। চট্টগ্রাম ও মানিকগঞ্জে আছেন ৩ জন করে রোগী। ২ জন করে আক্রান্ত আছেন কুমিল্লা, জামালপুর ও নরসিংদীতে। একজন করে আক্রান্ত আছেন চুয়াডাঙ্গা, কক্সবাজার, গাজীপুর, মৌলভীবাজার, রংপুর, শরীয়তপুর, শেরপুর ও সিলেটে। নতুন শনাক্ত ৪১ জনের মধ্যে ২০ জন ঢাকার এবং ১৫ জনই নারায়ণগঞ্জের। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, ঢাকায় আক্রান্তদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বাসাবোতে ৯ জন। এরপর ওয়ারীতে ৮, উত্তর টোলারবাগে ৬ ও মোহাম্মদপুরে ৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। চারজন করে আক্রান্ত হয়েছেন লালবাগ ও যাত্রাবাড়ীতে। উত্তরা, সোয়ারীঘাট ও ধানমন্ডিতে তিনজন করে আক্রান্ত হয়েছেন। দুজন করে আক্রান্ত হয়েছেন ইসলামপুর, পুরানা পল্টন, ভাটারা, মিরপুর ১০, মিরপুর ১১ ও শাহআলী বাগে। এ ছাড়া আদাবর, বসিলা, জিগাতলা, সেন্ট্রাল রোড, গ্রিনরোড, শাহবাগ, বুয়েট এলাকা, হাজারীবাগ, উর্দু রোড, লক্ষ্মীবাজার, নারিন্দা, কোতোয়ালি, বংশাল, ইস্কাটন, বেইলি রোড, মগবাজার, রামপুরা, বাড্ডা, নিকুঞ্জ, আশকোনা, গুলশান, মহাখালী, কাজীপাড়া, মিরপুর ১৩, মিরপুর ১, পীরেরবাগ, টোলারবাগ এলাকায় একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন।  গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে পুরুষ চার ও নারী একজন। মৃতদের মধ্যে ৬০-এর বেশি বছরের দুজন, ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে দুজন এবং ৪১ থেকে ৫০-এর মধ্যে একজন রয়েছেন। মৃতদের দুজন ঢাকার, তিনজন বিভিন্ন জেলার।

খুলনায় প্রথম দিনে নমুনায় ত্রুটি, সিলেটে শুরু : খুলনা ও সিলেটে গতকাল থেকে করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজে প্রথম দিনে ৪৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু নমুনাগুলোর মান ভালো না হওয়ায় আবার সংগ্রহ করা হবে। খুলনার সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ জানান, প্রস্তুতি শেষে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে নমুনা সংগ্রহে ত্রুটির কারণে সেটা ভালো ছিল না। এ কারণে আবার নমুনা সংগ্রহ করা হবে। খুলনা মেডিকেল কলেজের তৃতীয়তলায় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে তৈরি হয়েছে মলিকিউলার ল্যাব। সেখানে পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে পিসিআর মেশিনে টেস্ট শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে সিলেটে ১১৬টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। সিলেট ও খুলনা মিলিয়ে এখন দেশের ১৫টি স্থানে পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকার আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, শিশু হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি, আইপিএইচ, আইডিসি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন, চট্টগ্রামের বিআইটিআইডি, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজে ইতিমধ্যে এই ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

রূপগঞ্জে ৩ করোনা রোগী শনাক্ত, উপজেলা লকডাউন : রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের  রূপগঞ্জে ৩ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের ৩ জনই নারী। করোনায় শনাক্ত উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের সিংলাব এলাকার এক মহিলা ঢাকার উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আরেকজনের বাড়ি উপজেলার তারাব  পৌরসভার নোয়াপাড়া এলাকায়। সোমবার তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর একজন উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট রোগীর পরিবারসহ ১৩০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাঈদ আল মামুন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে পুরো রূপগঞ্জকে লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ ছাড়া করোনা শনাক্ত এলাকাগুলোতে স্থানীয়ভাবে বাড়তি নজরদারি ও সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। সোমবার রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় রূপগঞ্জ উপজেলাকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত হয়। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, রূপগঞ্জের প্রবেশপথগুলো বন্ধ করা হয়েছে। বাইরের কোনো মানুষ এখন রূপগঞ্জে প্রবেশ করতে পারবে না। আর রূপগঞ্জ থেকে কোনো মানুষ বাইরে যেতে পারবে না। কায়েতপাড়া, ইছাপুরা, আধুরিয়া, যাত্রামুড়া, ৩০০ ফিট শেখ হাসিনা ক্রিকেট  স্টেডিয়াম দিয়ে রূপগঞ্জে প্রবেশপথগুলো বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রূপগঞ্জ লকডাউনের আওতায় থাকবে। তিনি বলেন, বাজারগুলো সপ্তাহে দুই দিন শুক্র ও সোমবার খোলা থাকবে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বাজার ও মুদি দোকান। ফার্মেসিগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। খাবারের গাড়ি চলতে পারবে। বিনা প্রয়োজনে কেউ বাইরে বের হলে তাকে কঠোর শাস্তি  দেওয়া হবে।

পরীক্ষা বাড়াতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী : এদিকে রোগী শনাক্ত করতে পরীক্ষা বাড়াতে বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। চিকিৎসক-নার্সদের নিজেদের সুরক্ষার দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, পিপিই যা লাগে নেন। যা পাচ্ছি, দিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজনে আরও দেব। পরীক্ষা বাড়ান। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে গতকাল ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন স্থানের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ঢাকায় ৯টি ও বাইরে ৭টি ল্যাব বসানো হয়েছে। প্রত্যেকটি উপজেলায় ভালো করে টেস্ট করানোর দায়িত্ব আপনাদের। যত বেশি নির্ণয় করতে পারি। পজিটিভ হলে আইসোলেট করে রাখতে পারব। টেস্ট কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। এখন ফ্যাসিলিটিজ বেড়েছে। তবে সুরক্ষা পোশাকের (পিপিই) সঠিক ব্যবহার যেন হয়, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত। এ ধরনের পরিস্থিতি আমরা কখনো দেখিনি। তবে আমরা এখনো অন্য দেশের তুলনায় ভালো আছি। মৃত্যুর সংখ্যাও কম, আক্রান্তের সংখ্যাও কম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর