রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সর্দি জ্বর কাশি নিয়ে আরও ছয় জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মানিকগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, মাদারীপুর ও লক্ষ্মীপুরে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার একটি গ্রামে ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। গতকাল দুপুরে তার মৃত্যু হয়। করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় এলাকাবাসী অনুরোধে গত ১২ দিন তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন।

ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তপন কুমার বালো বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির করোনা উপসর্গ থাকায় গ্রামবাসী তার দাফনের আগে নমুনা সংগ্রহ করার দাবি জানিয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ওই ব্যক্তির দাফন হবে এবং  নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।’

গতকাল সকাল ৭টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাউতলী এলাকার ভাড়া বাসায় করোনার উপসর্গ নিয়ে ৩৫ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। স্বজনের বরাত দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘৩১ মার্চ জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট সমস্যায় ওই নারী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সে সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি ঢাকায় যেতে রাজি না হওয়ায় বাসাতেই তার চিকিৎসা চলছিল।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, ‘মৃত নারীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী মেডিকেল টিমের সদস্যরা তার দাফন সম্পন্ন করবেন।’

শনিবার ভোররাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছয় মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শিশুটি জ্বর, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। আমরা নমুনা সংগ্রহ করেছি। পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে শিশুটি করোনায় আক্রান্ত ছিল কিনা।’ হাসপাতালসূত্র জানান, শুক্রবার বিকাল ৩টায় শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকাল ৫টায় চিকিৎসকরা তাকে আইসোলেশন ইউনিটে স্থানান্তর করেন। শিশুটির বাবা-মা নগরীর খালিশপুর ক্রিসেন্ট গেট এলাকায় বসবাস করেন। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪৫ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। সেদিন সন্ধ্যায় স্বজনরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ধারণা করা হচ্ছে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। আনুমানিক রাত ৯টার দিকে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ১১টার দিকে তিনি মারা যান। করোনার উপসর্গ থাকায় আমরা তার নমুনা সংগ্রহ করেছি।’

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও কালকিনি সার্কেল) বদরুল আলম মোল্লা বলেন, ‘আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ওই নারী দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন। তার পরও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় তার বাড়ি আমরা লকডাউন করেছি।’

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকালে ও রাতে বাড়িতে তারা মারা যান। উপজেলার চরফলকন জাজিরা এলাকায় মৃত ব্যক্তির বয়স ৫৭ বছর। কয়েকদিন ধরে তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। উপজেলার পূর্ব চরমার্টিন এলাকায় মৃত ব্যক্তির বয়স ৫৫ বছর। স্থানীয়রা জানান, শ্বাসকষ্টে তার মৃত্যু হয়েছে। করোনার উপসর্গ থাকায় স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে পাঠিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের বলেন, সতর্কতার অংশ হিসেবে দুই এলাকায় ১৮টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এর আগেও কমলনগর উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর