বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বে আক্রান্ত ২০ লাখ ছাড়াল

মৃত্যু ১ লাখ ২৮ হাজার, শীর্ষে আমেরিকা

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বে আক্রান্ত ২০ লাখ ছাড়াল

মহামারী করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে এক লাখ ২৮ হাজার। আর এ মৃত্যু তালিকার শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। এদিকে এমন অবস্থায়ও অর্থনীতি বাঁচাতে বেশ কিছু দেশে লকডাউন শিথিল করা করেছে। আমেরিকাও এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এ পথে রয়েছে ইউরোপের কয়েকটি দেশসহ ভারতও।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ইউরোপ ছাড়িয়ে করোনার নতুন ভরকেন্দ্র এখন আমেরিকা। সেখানে গত মঙ্গলবার একদিনেই সর্বাধিক মৃত্যু হয় দুই হাজার ২২৮ জনের। এখন পর্যন্ত ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা ২১ হাজারের বেশি, স্পেনে ১৮ হাজারের বেশি। ফ্রান্সে মোট মৃত্যু প্রায় ১৬ হাজার। ব্রিটেনও মৃতের সংখ্যায় ১২ হাজারের গ-ি ছাড়িয়েছে।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই রাশ টানা যাচ্ছে না আক্রান্তের সংখ্যায়। গোটা বিশ্বে ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে আক্রান্তের সংখ্যা। মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষের। এর মধ্যে শুধু আমেরিকায় আক্রান্ত হয়েছে ছয় লাখ। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত বা মৃতের হিসাবে আমেরিকার ধারেকাছে কেউ নেই। মৃত্যুর হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইতালিতে গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ৬০২ জন মারা গেছেন। সব মিলিয়ে মৃত বেড়ে হয়েছে ২১ হাজার ৬৭ জন। স্পেনেও একদিনে ৫০০’র মতো মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয় ১৮ হাজার ২৫৫।  ফ্রান্সে ২৪ ঘণ্টায় ৭৬২ মৃত্যুসহ এ সংখ্যা বেড়ে মোট হয়েছে ১৫ হাজার ৭২৯। জার্মানিতে মৃতের সংখ্যা  বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৫। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩০১ জন। এদিকে ব্রিটেনে মঙ্গলবার করোনায় মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ওইদিন ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ছিল ৭৭৮ জন।

মৃত্যুর উপত্যকা আমেরিকা : সংবাদ সংস্থা এএফপি বলছে, আমেরিকার পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে পরিস্থিতি। মঙ্গলবার পর্যন্ত আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ছয় লাখেরও বেশি মানুষ, যা বিশ্বের বাকি তিন সংক্রমিত দেশের আক্রান্তের সংখ্যার যোগফল প্রায়। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মঙ্গলবপার ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ২২৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা এতদিনের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। নিউইয়র্ক এখন সংক্রমণের ভরকেন্দ্র। দুই লাখেরও বেশি আক্রান্ত এ শহরে। মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের। আমেরিকায় মৃতের সংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজে দৈনন্দিন প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, করোনার মতো অদৃশ্য শত্রুর হামলায় মৃতদের জন্য সরকার শোকাতুর। কিন্তু এ লড়াইয়ে জেতার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে প্রশাসন। অন্ধকার কেটে একদিন আশার আলো দেখার অপেক্ষায় আছে আমেরিকা। ‘সুরঙ্গের শেষে আলো দেখতে পেয়েছেন’ বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু ট্রাম্পের কথায় মন ভুলছে না দেশবাসীর। মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়ে থাকা এখন প্রত্যেক মার্কিনি শেষের প্রহর গুনছেন।

ব্রিটেনে ২৪ ঘণ্টায় ৭৭৮ জনের মৃত্যু : যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি জানিয়েছেন মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত) আরও ৭৭৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে স্কাই নিউজ ও দ্য সান-এর খবরে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় ইংল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৪৪ জন, স্কটল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪০, ওয়েলসে ১৯ জন এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ১০ জন। মোট হিসাব করলে দেখা যায় ৮১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৭১৭ জন। ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড স্যোশাল কেয়ার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১০৭ জন। এর আগে গত রবিবার ৭৩৭ জন মৃত্যুবরণ করেন, শনিবার ৯১৭ জন এবং বৃহস্পতিবার ছিল সর্বোচ্চ ৯৮০ জন। এ মৃত্যুর পরিসংখ্যা শুধু যারা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের। স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে প্রতি ১০ জনের একজন হাসপাতালের বাইরে নিজ করে কিংবা কেয়ার হাউজে মৃত্যুবরণ করছেন। এদিকে মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হন ৫ হাজার ২৫২ জন। সোমবার আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪৩৪২ জন, রবিবার ৫২২৮ জন, শনিবার আক্রান্তের পরিসংখ্যান ছিল ৫২৩৪ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৭৩ জন।

লকডাউন শিথিল হচ্ছে ইউরোপের কয়েক দেশে : ইউরোপের কয়েকটি ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র ভাইরাস সংক্রান্ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে শুরু করেছে। এসব দেশ জানায়, আগেভাগে লকডাউন জারি করাতে তাদের পক্ষে লকডাউন শিথিল করা সম্ভব হচ্ছে। সোমবার স্পেনে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা কমতে থাকায় অত্যাবশ্যকীয় নয়- এমন কর্মীরা তাদের কাজে ফিরে যান। শিল্প খাত ও নির্মাণশিল্পের কর্মীরা দুই সপ্তাহের লকডাউন শেষে কাজে যোগ দিয়েছেন। অন্য দেশগুলোও নিষেধাজ্ঞা বিষয় সতর্ক রয়েছে। তারা জানায়, শিথিলতা আনতে আরও অন্তত এক সপ্তাহ সময় লেগে যাবে। স্পেন থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে স্পেনের মানুষ। তারপরেও গত মঙ্গলবার দেশটিতে জরুরি সেবা খাতে নেই- এমন প্রায় তিন লাখ কর্মী কাজে যোগ দিয়েছেন। টানা কয়েক দিন মৃত্যুহার ও সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যারা কাজে যোগ দিয়েছেন, তাদের মধ্য আছেন নির্মাণকর্মী এবং ম্যানুফাকচারিং খাতের শ্রমিকরা। তবে দোকান, বার বা রেস্তোরাঁ বন্ধই থাকছে। তবে দেশটিতে সত্যিকারের স্বাভাবিক অবস্থা কবে আসবে, তা নিয়ে চিন্তিত প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যানচেজ। শিথিল করা হলেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে স্পেনে। ডেনমার্ক থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে মাসব্যাপী বন্ধ থাকার পর ডেনমার্কের স্কুলগুলো গতকাল থেকে খুলতে শুরু করছে। ইউরোপে ডেনমার্কই প্রথম তাদের নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন ও প্রাইমারি স্কুল খুলতে শুরু করেছে। ফলে মিউনিসিপ্যালিটির প্রায় অর্ধেক স্কুল তাদের ক্লাস শুরু করছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রেও লকডাউন তুলে নেওয়ার তোড়জোর শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময়সীমার অনেক আগেই আমেরিকাকে সচল করতে লকডাউন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার প্রশাসন। সেই সঙ্গে চীনকেও বিঁধেছেন ট্রাম্প। তার দাবি, কভিড সংক্রান্ত  তথ্য গোপনের চূড়ান্ত খেসারত দিতে হবে চীনকে। খবরে বলা হয়, গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে রুটিন সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের লকডাউন তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ার পরই প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ। তারা মনে করছেন, কভিডের সংক্রমণকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ না করা পর্যন্ত দেশের চাকা গড়াতে শুরু করলে হিতে বিপরীতই হবে। তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করেননি ঠিক কবে থেকে দেশকে তালাবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি দেবেন। শুধু এটাই বলেছেন, ‘আমেরিকাবাসীকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর পরিকল্পনা শেষ করতে আমরা আর বেশি দূরে নেই। এ ব্যাপারে প্রাদেশিক রাজ্যগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। গড়া হয়েছে পৃথক একটি টাস্ক ফোর্সও।’ 

লকডাউন শিথিল করছে ভারত : করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভারতে জারিকৃত লকডাউনের কারণে দেশটির কোটি কোটি মানুষ নজিরবিহীন দুর্দশায় পড়েছেন। বিশেষ করে দেশটির নিম্নবিত্ত শ্রেণির লাখ লাখ মানুষ কাজের সন্ধানে রাস্তায় নেমে এসেছেন। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য ও কাজের দাবিতে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে গত মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নপ্রন্দ্র মোদি দেশটিতে করোনার বিস্তাররোধে জারিকৃত লকডাউনের মেয়াদ আগামী ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে বুধবার এক বিবৃতিতে দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার বলছে, এক সপ্তাহ পরে ভারতের কম সংক্রমিত এলাকাগুলোতে লকডাউনের বিধি-নিষেধ শিথিল করা হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনার পর আগামী ২০ এপ্রিল থেকে দেশটির কৃষি খাত, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সড়ক ও ভবন নির্মাণ, আইটি, ই-কমার্স ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল হবে। তবে করোনাভাইরাসের হটস্পট হিসেবে শনাক্ত স্থানগুলোতে লকডাউন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দিনমজুর এবং অন্যান্য শ্রেণির মানুষের জন্য কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড পুনরায় পুরোদমে শুরুর অনুমতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় পণ্য পরিবহন আগামী ২০ এপ্রিলের পর থেকে পরিবহনের অনুমতি পাবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, লকডাউনের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি মুখথুবড়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পসহ গ্রামাঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট, সেচ প্রকল্প, ভবন এবং শিল্প প্রকল্প; সেচ ও পানি সংরক্ষণের কাজ অগ্রাধিকারভিত্তিতে ফের শুরু হবে।

পাকিস্তানে খাবার দেওয়া হচ্ছে না হিন্দু-খ্রিস্টানদের : মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে বিশ্বের সব দেশেই দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক বিপর্যয়। খাদ্য সংকটে পড়েছেন বিশ্বের অগণিত মানুষ। এ সময় ধর্ম বা জাতিগত বিদ্বেষের নয়। তাই পাকিস্তানে হিন্দু ও প্রিস্টানদের খাদ্য দিতে না চাওয়ার খবর সামনে আসতেই পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে মার্কিন সরকারি সংস্থা।

ইসলামাবাদকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে তারা জানিয়েছে, ধর্ম নির্বিশেষে সবার কাছে খাবার পৌঁছে দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংস্থার কমিশনার অণুরিমা ভার্গভ গত সোমবার বলেন, ‘কভিড-১৯ দ্রুত সংক্রামিত হচ্ছে। পাকিস্তানে প্রত্যেকে নিজের পরিবারকে সুস্থ রাখার জন্য অনাহারের সঙ্গে লড়ছে। কারও ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য এভাবে তাকে খাদ্য সাহায্য থেকে বাদ দেওয়া যায় না। খবর মিলেছে পাকিস্তানে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের খাদ্য সাহায্য দিতে অস্বীকার করা হয়েছে। এসব একেবারেই বরদাস্ত করা হবে না।’ তিনি জানান, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সবার মধ্যে যাতে সমানভাবে খাদ্য বিনিময় করা হয়, পাকিস্তানের সরকারের সঙ্গে সে বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, করাচিতে সায়লানি ওয়েলফেয়ার নামে একটি বেসরকারি সংস্থা হিন্দু ও খ্রিস্টানদের খাবার দিতে অস্বীকার করে। তাদের বক্তব্য, ‘খাবার শুধু মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত।’

সর্বশেষ খবর