বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

জ্বর ও সর্দি উপসর্গ নিয়ে সারা দেশে ১০ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে গত মঙ্গলবার ও বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ১০জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, দিনাজপুর, গাজীপুর, কক্সবাজার, শরীয়তপুর, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহের বাসিন্দা তারা। তাদের মৃত্যুর পর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এলাকাগুলোয়। তাদের বাড়িঘর ও এলাকা লকডাউন করা হয়। পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শাহিন নামের এক তরুণ (১৮) মারা গেছেন। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে নিজ বাড়িতে মারা যান ওই তরুণ। ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের ছরিলদা গ্রামে তার বাড়ি। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন জানান, ওই তরুণের করোনার উপসর্গ ছিল। পরিবার তা গোপন করেছিল। ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুর রহমান খান জানান, মৃতের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে। এ ছাড়া বাড়ির লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলা হয়েছে। এদিকে, ফরিদপুরের নগরকান্দায় দুজনের শরীরে করোনা পজিটিভ হওয়ায় নগরকান্দা উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে আসমা বেগম (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারী মারা যান। তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গহওরডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আসমা বেগম নামের ওই নারী জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর তাকে চিকিৎসা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি মারা যান। নমুনার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত পরিবারের অন্য সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য বলা হয়েছে।

দিনাজপুরের বিরামপুরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে আজিজার রহমান (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।  গত মঙ্গলবার সকালে বিরামপুরের কাটলা ইউপির শৈলান গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। আজিজার রহমান পেশায় একজন সাইকেল মিস্ত্রি ছিলেন। করোনা সন্দেহে মৃত ব্যক্তিসহ তার পরিবারের পাঁচজনের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকার ২৩টি বাড়ির ৭৪ জন সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল আজিজার রহমান জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে দিনাজপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকরা তাকে আইসোলেশনের থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু তার পরিবারের লোকজন তাকে আইসোলেশনে রাখতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়। দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবদুল কুদ্দুছ জানান, মৃত্যুর সময় তার শরীরে করোনার লক্ষণ ছিল। দিনাজপুর থেকে একটি টিম নিহতসহ ওই পরিবারের সদস্যদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে তার শরীরে করোনা আছে কি না। গাজীপুরের টঙ্গী আউচপাড়া মোল্লাবাড়ি এলাকায় গত মঙ্গলবার রাতে করোনার উপসর্গ নিয়ে মিনারা বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। ওই বৃদ্ধা ঠা া জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় এক ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় তার মৃত্যু হয়। পরে হাজী কছিমউদ্দিন ফাউন্সেডশনের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা তার মরদেহ উদ্ধার করে দাফনের ব্যবস্থা করেন। কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে মোহাম্মদ সেলিম (৪৮) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে দ্বীপের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।  তবে গত তিন দিন ধরে ওই জেলে শ্বাসকষ্ট ও বুকব্যথা অনুভব করছিলেন। এ নিয়ে দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত ব্যক্তি সেন্টমার্টিন পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল জানান, ওই ব্যক্তির শরীরে করোনা সংক্রমণ ছিল কি না তা নিশ্চিত নই। তবু তার দাফন প্রক্রিয়া করোনা রোগীর মতো সম্পন্ন করা হয়েছে এবং দাফন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া লোকজন এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারসহ আশপাশের বাড়িগুলো লকডাউন করা হবে।

শরীয়তপুরে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক নৈশ প্রহরির মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নড়িয়া উপজেলার ভেজেস্বর ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। ঘটনা নিশ্চিত করে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের। জানানো হয়, কয়েক?দিন ধরে ওই বৃদ্ধ জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছিল। পরে ডায়রিয়া শুরু হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর ওই বৃদ্ধের নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ। পাশাপাশি ওই বাড়িসহ কয়েকটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তারা মরদেহ দাফনের জন্য গঠিত কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লার দেবিদ্বারে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র দুলাল ভূঁইয়ার মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই কলেজ ছাত্রের শ্বাস কষ্ট দেখা দিলে তাকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. উম্মে ফাতেমা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দুলাল উপজেলার বড়শালঘর গ্রামের কালু মিয়া ভূঁঁইয়ার ছেলে। সে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। চিকিৎসক ডা. উম্মে ফাতেমা জানান, তিনি দীর্ঘদিন এজমা রোগে ভুগছিলেন। কিছু দিন ধরে তার জ্বর, সর্দিও ছিল। তাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে তার করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মো. শাজাহান নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকদিন আগে জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে গতকাল সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে নগরীর অপর একটি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম মসিউল আলম। এদিকে ময়মনসিংহ জেলা সদরসহ চার উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত সাত রোগীকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জনকে নগরীর এসকে হাসপাতালের আইসোশেলন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ব্রাহ্ম?ণবাড়িয়া থেকে আক্রান্ত হওয়া এক নারী চিকিৎসককে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তার স্বামী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক হওয়ায় তাকেও হাসপাতাল কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। টাঙ্গাইলের নাগরপুরে নতুন করে আরও একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

গোপালগঞ্জের মুকসেদপুরে এক নারী শিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুুপুরে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিকে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে শাওন (৩) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে জ্বর ও বমি নিয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়। তারও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ নিয়ে নাগরপুর উপজেলায় মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুজন। মঙ্গলবার রাতে শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্ত যুবককে তার বাড়িতে আলাদা করে এক ঘরে রেখে আশপাশের ৩০ বাড়ি লকডাইন করেছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল সকালে তাকে চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানো হয়।

সর্বশেষ খবর