বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনার ভ্যাকসিন

টিকায় অনুমতি চীনের সক্রিয় জিএসকে ও সানোফি

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অবশেষে চীন তাদের টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে। এই টিকার প্রতি সবচেয়ে বেশি ভরসা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এদিকে ইরানও ৫ সেকেন্ডের মধ্যে করোনা শনাক্ত করার একটি মেশিন উন্মোচন করেছে। এ ছাড়া দুই জায়ান্ট কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) ও সানোফি করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন তৈরিতে সক্রিয় হয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের দুটি টিকা পরীক্ষামূলকভাবে মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে চীন। দেশটিতে বিদেশ থেকে ফেরা ব্যক্তিদের কারণে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের শিকার হয়েছে। এই পরিস্থিতি বেইজিং করোনার টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিল। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের সিনোভেক বায়োটেক ও উহানের ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রডাক্টস পরীক্ষামূলক টিকা দুটির উন্নয়ন ঘটিয়েছে। চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে গত মার্চে বেইজিং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য একটি টিকার অনুমোদন দিয়েছিল। ওই টিকা তৈরি করে দেশটির মিলিটারি একাডেমি পরিচালিত মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেস ও জৈবপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান কেনসিনো বায়ো। এ হিসেবে বলা যায়, চীন ভিন্ন ভিন্ন তিনটি টিকা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পরীক্ষা করছে। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশন এ-ও বলে রাখছে, যদি এই টিকার কার্যকারিতা সফল হয় তাহলে তারা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক উৎপাদনে যেতে পারবে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, মানবশরীরে পরীক্ষণের অনুমতির বিষয়টিকে সাহসী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন হংকং ইউনিভার্সিটির প্যাথলজির ক্লিনিক্যাল প্রফেসর জন নিকলস। তিনি বলেন, হুট করেই টিকা মানব শরীরে  দেওয়া যায় না। প্রথমে ছোট প্রাণী, তার পর বনমানুষ, এরপর পর্যায়ক্রমে মানব শরীরে প্রয়োগ করতে হয়। তবে চীনের এই সিদ্ধান্তটি খুবই সাহসী। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধদের শরীরে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে খুব সহজে বোঝা যাবে এই উদ্ভাবন কতটা কার্যকর। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য প্রথম দফায় ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচন করা হয়েছে। এর পরের স্তরের জন্য আরেকটি দল গঠন করা হচ্ছে।

ইরানের যুগান্তকারী উদ্ভাবন : ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলুশন গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) কমান্ডার গতকাল এক অনুষ্ঠানে একটি নতুন করোনা পরীক্ষা মেশিন উন্মোচন করেছেন। এই ডিভাইসে পাঁচ  সেকেন্ডের মধ্যে শনাক্ত করা যাবে করোনাভাইরাস। মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেন, এই অর্জনটি যুগান্তকারী। এটি বাসিজ (ইরানের স্বেচ্ছাসেবক দল) উদ্ভাবন করেছে। তিনি বলেন, যন্ত্রটিতে এক ধরনের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করা। এটি একশ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত স্থানগুলো দেখিয়ে দেবে। করোনা রোগীদের জন্য রক্তের পরীক্ষা করার প্রয়োজন হবে না। এটি একটি নির্দিষ্ট দূরবর্তী অবস্থান থেকে কাজ করে। জেনারেল  হোসেইন সালামি বলেছেন, ডিভাইসটি বিভিন্ন হাসপাতালে পরীক্ষা করা হয়েছে। এটি ৮০ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। মহামারী করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ এবং ভয়াবহ এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর লক্ষেই এই যুগান্তকরী উদ্ভাবন।

ভ্যাকসিন একসঙ্গে বানাবে জিএসকে ও সানোফি : কোভিড-১৯ এর বিস্তাররোধে ভ্যাকসিন তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করবে ওষুধ প্রস্তুতকারক দুই জায়ান্ট কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) ও সানোফি। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত অনেক ওষুধ কোম্পানিই কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন তৈরির কাজে এগিয়ে এসেছে। তবে এটি তৈরিতে সফল হলেও আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না। জিএসকের প্রধান নির্বাহী এমা ওয়ালএমসেলি গত মঙ্গলবার বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, একটি ভ্যাকসিনের তৈরি ও পরীক্ষা করতে সাধারণত এক যুগ সময় লেগে যায়। একটি ভ্যাকসিনকে ১৮ মাসের মধ্যে আনার মানে হলো সাধারণ নিয়মের  চেয়ে কাজ ব্যাপক গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। জানা গেছে, সরকারকে সাহায্য করার জন্য যুক্তরাজ্যভিত্তিক জিএসকে এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের আরেক জায়ান্ট কোম্পানি অস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে করোনা পরীক্ষায় কাজ করছে। এপ্রিলের শেষ নাগাদ এক লাখ পরীক্ষা করার লক্ষ্য তাদের। এমা ওয়ালএমসেলি আশা করছেন, তারা দুই কোম্পানি মিলে মে মাস থেকে প্রতিদিন ৩০ হাজার পরীক্ষা করতে সক্ষম হবেন। জিএসকের প্রধান নির্বাহী জানান, ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম থেকে তারা যে মুনাফা পাবেন, তা ভবিষ্যতে ভাইরাসের বিস্তার রোধে ও গবেষণার কাজে সরবরাহ করা হবে। কভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ২০টি প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থা ভ্যাকসিন  তৈরিতে কাজ করছে।

হুর ভাষ্য, টিকাই ভরসা : কভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বক্তব্য, রোগটি সোয়াইন ফ্লুয়ের চেয়ে ১০ গুণ শক্তিশালী। নভেল করোনাভাইরাস ছড়ায় অতি দ্রুত, কিন্তু এর শক্তিক্ষয় হয় খুব ধীরে। হু-প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাসের কথায়, ‘বিশ্বের অর্ধেক মানুষ এখন লকডাউনে বন্দী। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ তুলে নিলে অতিমারী চলতেই থাকবে। কারণ, প্রতিষেধক তথা টিকা ছাড়া নভেল করোনাভাইরাসকে পুরোপুরি রোখা যাবে না।’

সর্বশেষ খবর