রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত্যু আক্রান্ত বাড়ছেই

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৩০৬ মারা গেছেন ৯ জন, আক্রান্ত দুই হাজার ছাড়াল, নতুন হটস্পট গাজীপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

মৃত্যু আক্রান্ত বাড়ছেই

করোনাভাইরাসে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৯ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৩০৬ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮৪ জন, আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ১৪৪ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ঢাকা শহরে এরপরে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ। তবে নতুন করে আশঙ্কাজনক হারে রোগী বাড়ছে গাজীপুরে। এরপরেই রয়েছে নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসক।

গতকাল কভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ১১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন আট জন। এ নিয়ে সর্বমোট ৬৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনা আক্রান্তে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে চার জন। ৫১-৬০ বছরের মধ্যে আছেন একজন, ৪১-৫০ বছর বয়সের মধ্যে আছেন দুজন, ৩১-৪০ বছর বয়সের মধ্যে একজন এবং আর একজনের বয়স জানা যায়নি। এদের মধ্যে ছয়জন ঢাকার, দুজন নারায়ণগঞ্জের এবং একজন সাভারের। গত ২৪ ঘণ্টায় যারা শনাক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ২১-৩০ বছরের কোঠায় শতকরা ২৭ ভাগ, ৩১-৪০ বছর বয়সী ২২ ভাগ, ৪১-৫০ বছর বয়সী আছেন ১৯ ভাগ। নতুন সংক্রমিতদের মধ্যে পুরুষ শতকরা ৬২ ভাগ, ৩৮ ভাগ নারী। ২ হাজার ১৪৪ জন আক্রান্ত রোগীর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫৬৪ জন। বাকিরা হোম আইসোলেশনে আছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১১ জন আছেন আইসিইউতে। বাকি সবার অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল।

তিনি আরও বলেন, জেলাভিত্তিক বিশেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ঢাকা শহরে, যা শতকরা ৩২ ভাগ। গাজীপুরে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গাজীপুরে শনাক্ত হওয়া রোগীদের বেশিরভাগই নারায়ণগঞ্জ থেকে গেছেন। গাজীপুরের পরই নতুন সংক্রমণ দেখা গেছে নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জে।

বুলেটিন উপস্থাপনে আরও ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২১ হাজার ১৯১টি। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে আছেন ৬৬ জন। মোট আইসোলেশনে আছেন ৫৯৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ৩২ জন। সব মিলিয়ে মোট মুক্ত হয়েছেন ৫১২ জন।

তিনি জানান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন পরীক্ষাগার চালু হয়েছে। যশোর ও আশপাশের জেলার নমুনা সেখানেই পরীক্ষা করা হবে। এ নিয়ে দেশের ১৯টি পরীক্ষাগারে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা চলছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩ হাজার ৬৪১ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৭৪ জন। এখন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪ হাজার ৮৩৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৮১৫ জনকে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৬৪ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ৪ হাজার ২৬ জন। মোট ছাড়া পেয়েছেন ৭১ হাজার ৩৯৩ জন।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ছয় চিকিৎসক আক্রান্ত : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসক। তাদের মধ্যে দুজন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বাকি চারজন বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম বড়ুয়া এ তথ্য জানান।

উত্তম বড়ুয়া বলেন, আমাদের হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসকের করোনা পজেটিভ এসেছে। তারা সবাই চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। কীভাবে তারা আক্রান্ত হয়েছেন এখনো জানা যায়নি। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন চিকিৎসক স্বামী-স্ত্রী, তারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কভিড পজেটিভ আক্রান্ত এক চিকিৎসক বলেন, বুধবার তার স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছিল। আজ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। তিনি বাসাতেই আইসোলেশনে আছেন। তার স্ত্রী চিকিৎসক, আগামীকাল (আজ) তার নমুনা টেস্ট করা হবে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া ও আইসিইউ বিভাগের ১৫ জনের বেশি চিকিৎসক কোয়ারেন্টাইনে আছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালকে কভিড-১৯ রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী বুধবার থেকে করোনা রোগী ভর্তি করা হবে বলে জানান ডা. উত্তম বড়ুয়া। তিনি বলেন, যদিও অফিসিয়ালি করোনা রোগী ভর্তি শুরু হয়নি, তারপরও আমাদের এখানে চারজন রোগী ভর্তি আছে। কভিড আক্রান্ত একজন প্রেগনেন্ট রোগীকে কুয়েত-মৈত্রী, কুর্মিটোলা ও মহানগর হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি, তাই আমরা এখানে ভর্তি করেছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর