রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
রাতে আইন মানলেও দিনে মানছে না অনেকেই

রাজধানীতে কঠোর হচ্ছে পুলিশ সারা দেশে তৎপর সেনা র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে কঠোর হচ্ছে পুলিশ সারা দেশে তৎপর সেনা র‌্যাব

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গতকাল বাজারে মানুষের ঢল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে শনিবার থেকে কঠোর ভূমিকা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এর আগে শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসায় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাতে আইন মানলেও দিনে মানছে না কেউ। তাই ঢাকায় আরও কঠোর হচ্ছে পুলিশ এবং সারা দেশে তৎপরতা বাড়িয়েছে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঢাকার দুই সিটির ১৩৯টি ওয়ার্ডে ত্রাণ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি ওয়ার্ড কমিটিতে পুলিশের একজন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সূত্র জানায়, প্রায় দেড় ঘণ্টার এ বৈঠকে আরও অংশ নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে দেশজুড়ে কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুলিশকে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া যত্রতত্র ত্রাণ বিতরণ না করতেও নিষেধ করেছেন তিনি। ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি পুলিশের সহযোগিতাও নিতে বলেছেন। রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় দেখা গেছে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আইন মানলেও দিনের বেলায় তা কেউই মানেন না। এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠকের পরই রাজধানীর গাবতলীতে প্রবেশমুখে গতকাল সকাল থেকেই কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ। ফিরিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীবাহী সব যানবাহন। এরপর যারা হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ কিংবা ছাড়ার চেষ্টা করেছেন তাদের বেধড়ক মারধর করা হয়। ব্যক্তিগত পরিবহন নিয়ে মহাসড়কে যারা নেমেছেন তাদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। যে কোনো মূল্যে করোনা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় কাজ করার কথা জানান তারা। গাবতলীতে পুলিশের কড়াকড়ি থাকলেও ঢাকার আরেক প্রবেশমুখ কাঁচপুরে তেমনটা চোখে পড়েনি। অবাধে যাওয়া-আসা করতে দেখা গেছে ব্যক্তিগত যানবাহনকে। এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গতকালও কঠোর অবস্থানে ছিল সশস্ত্র বাহিনী ও র‌্যাব। সেনা, র‌্যাব ও পুুলিশের তৎপরতায় ফাঁকা ছিল রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো। সারা দেশের চিত্রও ছিল একই। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর হাতিরঝিল, বাড্ডা, শান্তিনগর, পল্টন, জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, গুলশান, মিরপুর, মহাখালী, উত্তরা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কারওয়ান বাজার ও সায়েদাবাদ এলাকায় সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের টহল লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মোড়ে সেনা ও পুলিশের চেকপোস্ট ছিল নজরে পড়ার মতো। মোড়ে মোড়ে সকাল থেকে বিভিন্ন যানবাহনের আরোহী ও চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা। এদের মধ্যে বেশ কজন বাইরে বের হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে না পারায় তাদের ভর্ৎসনা ও করোনা প্রতিরোধে বাসায় থাকার আহ্বান জানায় পুলিশ। সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাজার, পাড়া-মহল্লায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। রাজধানীর মতো সারা দেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল। 

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীর ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (আর্টডক) এর অন্তর্ভুক্ত প্রশিক্ষণ সেন্টার ও প্রতিষ্ঠানসমূহ বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতার পাশাপাশি দরিদ্র ও দুস্থ মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। গতকাল সদর দফতর আর্টডক-এর অন্তর্ভুক্ত ৪০৩ ব্যাটল গ্রুপ ময়মনসিংহ শহর, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী ও নাটোরে অবস্থিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় স্ব স্ব এলাকায় দরিদ্র পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। আর্টডকের ব্যবস্থাপনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েকদিনে ২ হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার, মাস্ক এবং ১ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া বৃদ্ধ ও সহায় সম্বলহীন পরিবারকে নিয়মিত চিকিৎসা সহায়তা অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী।

সর্বশেষ খবর