রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বৈশ্বিক মৃত্যু আরও ভয়াবহ

চীন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের পর আফ্রিকা

প্রতিদিন ডেস্ক

বৈশ্বিক মৃত্যু আরও ভয়াবহ

মহামারী করোনাভাইরাসে বৈশ্বিক মৃত্যু ভয়াবহতার দিকে চলে গেছে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন মৃত্যু, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গতকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় পৌনে ২ লাখের কাছাকাছি। প্রথমে চীন, এরপর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোয় এ ভাইরাস দাপিয়ে বেড়াতে থাকলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনার পরবর্তী টার্গেট হতে পারে আফ্রিকা মহাদেশ। সেখানে প্রাণ যেতে পারে অন্তত ৩ লাখ মানুষের।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর বিবরণ অনুযায়ী, গত শুক্রবার বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে। আর আক্রান্ত ছিলেন মোট ২২ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৮ জন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ পর্যন্ত যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন তার শতকরা ২১ ভাগই মারা গেছেন। করোনায় আক্রান্তের শতকরা চার ভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক, আর এমন গুরুতর রোগীর সংখ্যা ৫৭ হাজার ১৩৩।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে এ পর্যন্ত যত মানুষ মারা গেছেন তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এখন সবার শীর্ষে। দেশটিতে শুক্রবার পর্যন্ত মারা যান ৩৭ হাজার ১৭৫ জন। এর মধ্যে নিউইয়র্ক শহরে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান। সেখানে লাশ চাপা দিতে গণকবরের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কোনো কোনো হাসপাতালে লাশ রাখারও জায়গা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের পরই ইতালি। সেখানে মারা যান ২২ হাজার ৭৪৫ জন। স্পেনে মারা যান ২০ হাজার দুজন। এ ছাড়া ফ্রান্সে ১৮ হাজার ৬৮১, জার্মানিতে ৪ হাজার ৩৫২, ব্রিটেনে ১৪ হাজার ৫৭৬, বেলজিয়ামে ৫ হাজার ১৬৩, নেদারল্যান্ডসে ৩ হাজার ৪৫৯, চীনে ৪ হাজার ৬৩২, ইরানে ৪ হাজার ৯৫৮, তুরস্কে ১ হাজার ৭৬৯, সুইডেনে ১ হাজার ৪০০, সুইজারল্যান্ডে ১ হাজার ৩২৭ ও কানাডায় ১ হাজার ৩১০ জন মারা যান।

যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড মৃত্যু : আগের দিন ডোনাল্ড ট্রাম্প লকডাউন তুলে নেওয়ার কথা বলার পরদিনই মৃত-আক্রান্তের সর্বোচ্চ শিখর পেরিয়েছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৪৯১ জনের মৃত্যু হয়। দেশটিতে এর আগে এক দিনে এত মানুষের মৃত্যু হয়নি। জনস হপকিন্সের পরিসংখ্যান বলছে, মার্কিন মুলুকে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ১৫৪। উল্লেখ্য, বুধবার রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যার সর্বোচ্চ শিখর পার করে আসার পর এবার লকডাউন তোলার পালা। রাজ্যগুলোর গভর্নরদের সঙ্গে কথা বলে ধাপে ধাপে লকডাউন তোলার প্রক্রিয়া শুরু হবে। শিথিল করা হবে লকডাউনের নিয়মকানুনও। কানেকটিকাটের গভর্নর লকডাউন তোলার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে মৃত্যুর এ পরিসংখ্যান আসার পর নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে হোয়াইট হাউসের।

এর পরের টার্গেট আফ্রিকা : আফ্রিকা মহাদেশ করোনাভাইরাস মহামারী ছড়ানোর নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস সেখানকার অন্তত ৩ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে এবং প্রায় ৩ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিতে পারে বলে জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও আশঙ্কা করছেন। বিবিসি বলছে, গত সপ্তাহে আফ্রিকাজুড়ে কভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যায় বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখার পর সেখানকার প্রায় ১৩০ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। আফ্রিকার জন্য গঠিত জাতিসংঘের বিশেষ অর্থনৈতিক কমিশন মহাদেশটির জন্য ১০০ কোটি ডলারের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে। এ বলয়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত। জাতিসংঘের এ কমিশনই কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে কভিড-১৯-এ আফ্রিকায় ৩ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

করোনাভাইরাস এরই মধ্যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের রাজধানী থেকে অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মহামারী মোকাবিলায় এ দেশগুলোর হাতে পর্যাপ্ত ভেনটিলেটরও নেই, বলছে তারা। আফ্রিকার মোট জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশের বেশি সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত; শহুরে অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই বিভিন্ন বস্তিতে গাদাগাদি করে থাকে। এসব কারণে করোনাভাইরাস আফ্রিকায় ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলেও অনুমান ডব্লিউএইচওর। শুক্রবার পর্যন্ত আফ্রিকায় প্রায় ১৯ হাজার মানুষের শরীরে কভিড-১৯ শনাক্ত হয়; মৃতের সংখ্যা ছিল ১ হাজারের কাছাকাছি। উত্তর আফ্রিকার আলজেরিয়া, মিসর ও মরক্কোয় সংক্রমণের হার অন্যদের তুলনায় বেশি দেখা যাচ্ছে। আলজেরিয়াতেই ৩৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দেশ দুটিতেও আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার পেরিয়ে গেছে, মৃত্যু ১০০-এর বেশি।

ভারতের নৌবাহিনীতে করোনা : এবার ভারতীয় নৌবাহিনীতেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ২১ জন নৌসেনাকে নৌবাহিনীর হাসপাতাল আইএনএইচএস অশ্বিনীতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ভারতের মুম্বাইয়ের নৌসেনা ঘাঁটি আইএনএস অ্যাঙ্গরেতে কাজ করেন ওই নৌসেনারা। মোট ২১ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। ওই ঘটনায় কার্যত আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওই নৌঘাঁটি থেকেই নৌসেনা ওয়েস্টার্ন কমান্ডের লজিস্টিক্যাল ও প্রশাসনিক কাজকর্ম চলে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তাদের চিহ্নিতের চেষ্টা চলছে। আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে নৌসেনাসূত্রে আশঙ্কা করা হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শীর্ষে ইন্দোনেশিয়া : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। কিন্তু গত কয়েকদিনে সেখানে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে। দেশটিতে শুক্রবার পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫২০ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৯২৩। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪০৭ এবং মারা যান ২৪ জন।

তারাবি ও ঈদের নামাজ বাড়িতে : সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি বলেছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার অব্যাহত থাকলে পবিত্র রমজানের সময় তারাবির নামাজ বাড়িতে আদায় করা উচিত। একই কারণে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজও বাড়িতে আদায় করা উচিত। এক প্রশ্নের উত্তরে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ব্যক্তি এ কথা বলেন। দেশটির একটি পত্রিকার শুক্রবারের খবরের বরাত দিয়ে আলজাজিরা অনলাইন এ তথ্য জানায়। সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল শেখ বলেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে রমজানের তারাবি নামাজ মসজিদে আদায় করতে না পারলে তা বাড়িতে আদায় করা যেতে পারে। ঈদুল ফিতরের নামাজের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

প্রসঙ্গত, সৌদি আরবের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় আগেই আসন্ন রমজান মাসে বাড়িতে তারাবি নামাজ আদায়ের নির্দেশনাসংবলিত একটি ঘোষণা দিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশটির মসজিদগুলোয় জামাতে নামাজ আদায়ের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হবে না বলেও জানায় সৌদি সরকার। সৌদি আরবের ধর্মমন্ত্রী আবদুল লতিফ আল শেখ সম্প্রতি বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের ওপর যে স্থগিতাদেশ আছে, তা মসজিদে তারাবি নামাজ আদায়ের ওপর স্থগিতাদেশের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদ বা বাসায় যেখানেই তারাবি আদায় করা হোক, তা সর্বশক্তিমান আল্লাহ যেন কবুল করেন, আমরা সেই প্রার্থনা জানাই। আমরা মনে করি, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এখন বাড়িতে নামাজ আদায় করা অধিকতর মঙ্গলজনক। আল্লাহ যেন আমাদের সবার নামাজ কবুল করেন এবং বৈশ্বিক মহামারী থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেন, সে প্রার্থনা জানাই।’

যুক্তরাষ্ট্রের নয় রাজ্যে অর্থনীতি চালুর উদ্যোগ : হোয়াইট হাউস যুক্তরাষ্ট্রের নয়টি রাজ্য যেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কম, তাদের অর্থনীতি পুনরায় খোলার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। গত বুধবার রাতে হোয়াইট হাউস ভাইরাস টাস্কফোর্স সমন্বয়কারী ড. ডেবোরাহ বার্কস জানান, নয়টি রাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজারের কম এবং প্রতিদিন নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যাও কমছে। করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্র এবং এর অর্থনীতির ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে যার ফলে গত চার সপ্তাহে ২ কোটি ২০ লাখের বেশি শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিটি আবারও খোলার জন্য চাপ দিচ্ছেন। পয়লা মে দেশের এমন কিছু রাজ্যের অর্থনীতি খুলে দিতে চাইছেন যেগুলো করোনাভাইরাসের কারণে নিউইয়র্ক মহানগরের মতো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ড. ডেবোরাহ বার্কস ওই নয়টি রাজ্যের নাম উল্লেখ না করলেও স্বল্পজনবহুল রাজ্যগুলোর কথা উল্লেখ করেন যেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কম। আটলান্টিক উপকূলীয় রাজ্য মেইন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র হাওয়াই, পূর্ব আমেরিকার ভার্মন্ট ও পশ্চিম ভার্জিনিয়া, দক্ষিণাঞ্চলের আরকানসাস, মধ্য-পশ্চিমের নেব্রাস্কা, উত্তরে ডাকোটা ও পশ্চিমের মন্টানা ও ওয়াইয়োমিং।

ছন্দে ফিরছে ইউরোপের কিছু দেশ : করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে মারণ জীবাণুর গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসার পর ধাপে ধাপে সেই স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল করার তালিকায় সর্বাগ্রে নাম রয়েছে স্পেন, ইতালি, জার্মানির। তালিকায় রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্কসহ নরডিক দেশগুলোও। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, চলতি সপ্তাহ থেকে তার দেশ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে প্রস্তুত। ইউরোপের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাকে দ্রুত সচল করে তুলতে হবে। মেরকেল বলেন, ‘আমরা সাময়িক ফাঁড়া কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত। কোথাও কোথাও দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ফেরানো হচ্ছে। সেসব জায়গায় লকডাউন শিথিল করা হবে, তবে তা একেবারে বিধি মেনে, সাবধানে।’

জানা গেছে, একইভাবে ছন্দে ফিরবে চেক প্রজাতন্ত্রও। সেখানকার এক অ্যাথলেটের কথায়, ‘আবার কত দিন পর স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস করতে যেতে পারব। ভালো লাগছে। তবে গত দুই সপ্তাহ বাড়িতে থেকেও আমি অনেক কিছু শিখেছি। সবচেয়ে বড় কথা, লকডাউন কী এবং কেন- তা বেশ বুঝতে পেরেছি। এখন ১০০ শতাংশ নিরাপদ বোধ করছি।’ লকডাউন শিথিল হচ্ছে স্পেন, ইতালিতেও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় অঞ্চলের প্রধান ড. হান্স ক্লুগ জানিয়েছেন, ‘গত সপ্তাহে ইউরোপের করোনা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছিল। কারণ, সময়টা বিপজ্জনক ছিল। এমনিতেই বিশ্বের যে ১০টি দেশে করোনার থাবা সর্বাধিক, তার মধ্যে রয়েছে ইউরোপেরই সাত দেশ। তবে সপ্তাহটা পেরনোর পর আর তত ঝুঁকি নেই।’ তা সত্ত্বেও লকডাউন খুব ভেবেচিন্তে শিথিল করার পক্ষে তিনি। উল্লেখ্য, ইউরোপের দুই দেশ বেলারুশ, সুইডেন লকডাউনের পথেই হাঁটেনি। ফলে সেখানে জীবনযাত্রায় খুব হেরফের কিছু হয়ওনি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা বলছে, পশ্চিমের দেশগুলো প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে; যা কিছুটা আশাদায়কও।

করোনা যুদ্ধে শামিল সুইডেনের রাজকন্যা : বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা। প্রায় প্রতিটি দেশে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সামনে থেকে করোনা যুদ্ধে লড়ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিছুদিন আগে মিস ইংল্যান্ড ভাষা বন্দ্যোপাধ্যায় তার পুরনো পেশা ডাক্তারিতে ফিরে গেছেন। আর এবার করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় এগিয়ে এলেন সুইডেনের রাজকুমারী সোফিয়া। স্টকহোমের সোফিয়াহেমেট হাসপাতালে কাজ শুরু করেছেন তিনি। ৩৫ বছর বয়সী সুইডেনের এই রাজকুমারী এ হাসপাতালেরই একটি সম্মানীয় পদে রয়েছেন। নিজের হাসপাতালেই এখন তিনি স্বেচ্ছায় রোগীদের সেবার কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে সোফিয়া সরাসরি করোনা আক্রান্তদের সেবার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। পরিবর্তে তিনি হাসপাতালের অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য করবেন। অনলাইনে একসময় তিন দিনে একটি ইনটেনসিভ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন সোফিয়া। তার ভিত্তিতেই সংকটজনক এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অকুতোভয় সোফিয়া।

কেরালার কাছ থেকে যা শিখতে পারে গোটা বিশ্ব : করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভারতের কেরালা রাজ্যের গৃহীত পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে। প্রশংসায় ভাসছে ‘কেরালা মডেল’। ব্যাপকহারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে দ্রুত খুঁজে বের করা, দীর্ঘ সময় কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার পাশাপাশি হঠাৎ লকডাউনের কারণে আটকে পড়া হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিকের আশ্রয়ের ব্যবস্থা ও কয়েক লাখ শ্রমিকের কাছে নিয়মিত খাবার পৌঁছানোর মতো মানবিক উদ্যোগের কারণেই করোনা মোকাবিলায় সফল হয়েছে কেরালা। তাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো কীভাবে পুরো বিশ্বের জন্য করোনা মোকাবিলায় শিক্ষণীয় হতে পারে, তা তুলে ধরা হয়েছে এমআইটি টেকনোলজি রিভিউতে। এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একটি সাময়িকী। ১৮৯৯ সাল থেকে প্রকাশিত এ সাময়িকীর সম্পাদকীয় স্বাধীনতা আছে এবং এমআইটি এ ক্ষেত্রে কোনো হস্তক্ষেপ করে না। এমআইটির বিশ্লেষণে বলা হয়, কেরালায় অভিবাসনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেখানে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীরা নিয়মিত যাতায়াত করেন। নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে কেরালায়ও শুরু হয়েছিল সংকট। চীনের উহান থেকে আসা এক মেডিকেল শিক্ষার্থী প্রথম সেখানে করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হন। জানুয়ারির শেষ দিকে ওই রোগী শনাক্ত হওয়ার আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল সেখানে। তারা আগে থেকেই এ ধরনের পরিস্থিতিতে করণীয় ও কর্মপরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছিল। করোনার আক্রমণ টের পাওয়ার পরপরই তারা কাজে নেমে পড়ে। ভয়াবহ মহামারীর বিরুদ্ধে অবশ্য কেরালার আগে থেকেই লড়াই করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০১৮ সালে নিপাহ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে কেরালাকে। বাদুড় থেকে উদ্ভূত ওই ভাইরাস মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়েছিল। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার আলোকে কেরালা এবার প্রস্তুত ছিল। করোনাভাইরাসের যেখানে কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই, সেখানে কেরালা এর প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে সাফল্য দেখিয়েছে, তা অনুকরণীয়। প্রযুক্তিগত ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ মহামারী ব্যবস্থাপনার জন্য কেরালাকে ‘সাফল্যের মডেল’ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করছে।

সর্বশেষ খবর