রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ত্রাণ চুরির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রাণের চাল বিতরণে অনিয়ম-স্বজনপ্রীতি থেমে নেই। গতকালও টিসিবির পণ্য কালোবাজারে বিক্রির দায়ে কিশোরগঞ্জে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। সরকারি বরাদ্দকৃত জিআর চাল বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদে কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহ ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম মিয়ার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও ইউপি সদস্যরা। এ ছাড়া কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির পাশাপাশি ভুয়া তালিকা করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা জানান, কিশোরগঞ্জ শহরের সতাল বাজার থেকে টিসিবির বিপুল পরিমাণ পণ্যসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৪, সিপিসি-২। জব্দ পণ্যের মধ্যে রয়েছে ৫৮৮ লিটার সয়াবিন তেল, ৪৯ কেজি ডাল ও ৪৯ কেজি চিনি। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- টিসিবির ডিলার অলিউল্লাহ, বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক মাহতাব উদ্দিন, তাহের স্টোরের মালিক আবু তাহের ও মাইশা স্টোরের মালিক আবদুল হেকিম। র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার উপপরিচালক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার বিএন এম শোভন খান জানান, একটি ব্যবসায়ী চক্র টিসিবির পণ্য খুচরা মূল্যে বিক্রি করে আসছিল। যাচাই-বাছাই করে তথ্যের সত্যতা পাওয়ায় গতকাল দুপুরে অভিযান চালানো হয়। এসব পণ্য পাইকারি দরে কিনে খুচরা মূল্যে বিক্রি করছিল তারা। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। এদিকে ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য কামরুজ্জামান ওরফে জামানকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় কটিয়াদী উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গতকাল আদালতে হাজির করলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুন নূর তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জানা গেছে, জেলা পরিষদ থেকে কটিয়াদীতে ৪৫০ জনকে শুক্রবার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। বরাদ্দ করা ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে প্রত্যেককে ১০ কেজি করে চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার তেল, দুটি সাবান ও একটি মাস্ক দেওয়ার কথা। কিন্তু ১০ কেজি চালের মধ্যে প্রতি প্যাকেটে ১ থেকে ২ কেজি করে কম দেওয়া হয়। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসার পর তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন মানুষের মধ্যে সরকারি বরাদ্দকৃত জিআর চাল বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম মিয়ার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও ইউপি সদস্যরা। গতকাল দুপুরে ঘোগাদহ বাজারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে কর্মহীন নারী-পুরুষসহ ইউপি সদস্যরা অংশ নেন। এ সময় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ও নুরজাহান বেগম অভিযোগ করেন, কোনো ইউপি সদস্যের সঙ্গে সমন্বয় না করে মনগড়াভাবে চেয়ারম্যান এসব বরাদ্দ বিতরণ করেছেন। এতে প্রকৃত অসহায়-দুস্থ মানুষ চাল পাননি। পেয়েছেন চেয়ারম্যানের মনোনীত পছন্দের ব্যক্তিরা। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ইউপি সদস্যরা। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির পাশাপাশি ভুয়া তালিকা করে ত্রাণ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের ত্রাণবঞ্চিত দিনমজুর, দরিদ্র ও অসচ্ছল ব্যক্তি এবং ওয়ার্ড মেম্বাররা এ অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তারা বলেছেন, সরকারি ত্রাণ বিতরণে ওয়ার্ড মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চৌকিদারদের দিয়ে ওই সব দরিদ্র, দিনমজুর ও অসচ্ছল ব্যক্তির বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। চেয়ারম্যানরা প্রতিটি ওয়ার্ডে তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের নামের তালিকা করে ত্রাণ বিতরণ করছেন। জানা গেছে, উপজেলার মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের বৈরাগীর চর এলাকায় তার আপন ভাগ্নি ও মামাতো ভাই জহুরুল ইসলামসহ নজরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান হবি, আবদুর রাজ্জাক, রিপনসহ ৫০ জনের মধ্যে সরকারি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। ইউপি সদস্যের তালিকার কাউকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়নি বলে ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্য অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান শাহ অলমগীর বলেন, সরকারি ত্রাণ বিতরণে তার ইউনিয়নে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়নি।

সর্বশেষ খবর