সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সুস্থতার চেয়ে মৃত্যু বেশি

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৫ জন, মোট মৃত্যু ৯১, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৭, আরও ৩১২ আক্রান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুস্থতার চেয়ে মৃত্যু বেশি

এক দিনে আরও সাতজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯১ জন। গত এক দিনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও নয়জন। এ পর্যন্ত মোট ৭৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সে হিসাবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর চেয়ে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। অন্য বেশির ভাগ দেশের ক্ষেত্রেই এই সংখ্যাটা উল্টো। সেসব দেশের সুস্থ হওয়ার সংখ্যা মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করা সাতজনের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ এবং দুজন নারী। তাদের মধ্যে তিনজন ঢাকার এবং চারজন নারায়ণগঞ্জের।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বে গতকাল বিকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হওয়া ২৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫৩ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৫ হাজার ৭১৮ জন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৯ হাজার মৃত্যুর বিপরীতে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ৬৮ হাজার। স্পেনে ২০ হাজার মৃত্যুর বিপরীতে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ৭৭ হাজার। ইতালিতে ২৩ হাজার মৃত্যুর বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ৪৫ হাজার। ফ্রান্সে মৃত্যু হয়েছে ১৯ হাজার জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ১৯ হাজার। জার্মানিতে মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার, বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ৮৮ হাজার। চীনে সাড়ে ৪ হাজার মৃত্যু হলেও সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ৭৭ হাজার। তুরস্কে ১৮০০ মৃত্যুর বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার জন। ইরানে ৫ হাজার মৃত্যুর বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ৫৭ হাজার জন।

দেশে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল এক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করে আরও ৩১২ জনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ফলে আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে ২৪৫৬ জন হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া ৩১২ জনের মধ্যে ৬৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৪ শতাংশ নারী। তাদের ভিতরে ঢাকার রয়েছে ৪৪ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জে ৩১ শতাংশ বাকি ২৫ শতাংশ সারা দেশের।

গত কয়েক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনশর কাছাকাছি থাকাকে ইতিবাচক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এটা যদি আর না বাড়ে তাহলে আমরা ভাগ্যবান। সংক্রমণ এড়াতে সরকার জনসমাগম না করাসহ যেসব বিধিনিষেধ দিয়েছে, মানুষ তা না মানায় হতাশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, সংক্রমিত এলাকা থেকে লোকজন এখনো এমন এলাকায় যাচ্ছে যেখানে আগে সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। তাতে নতুন আক্রান্ত হচ্ছে, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বেড়ে যাচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন, বাংলাদেশ কভিড-১৯ মোকাবিলায় ‘সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায়’ পরিস্থিতি অনেক দেশের চেয়ে ভালো। আমরা এখন সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সপ্তম সপ্তাহে আছি। এ সময় ইউরোপ ও আমেরিকায় লাখ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছে হাজার হাজার লোকের। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি বেশি বেশি পরীক্ষা করার ওপর জোর দেন জাহিদ মালেক। করোনা যুদ্ধে মূলমন্ত্র ঘরে থাকা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে, ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঘরে থাকতে হবে। একটু কষ্ট করে ঘরে থাকুন, তাহলে আমাদের জয় আসবেই। সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলো এগিয়ে এসেছে। তার মধ্যে দুটি হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। নতুন করে কয়েকটি সরকারি হাসপাতালকেও প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভাগীয় শহরে করোনার জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে, জেলা শহরগুলোকেও প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিদেশের মহামারী পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে মন্ত্রী বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলেন, কভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ‘অক্সিজেন থেরাপি’ ভালো কাজে দিচ্ছে। এ জন্য আরও তিন হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করেছি। বর্তমানে সংগ্রহে আছে প্রায় দশ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার।

সর্বশেষ খবর