সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও আটজন মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, নাটোর, শরীয়তপুর, ঝালকাঠি, মৌলভীবাজার ও পঞ্চগড়ের বাসিন্দা। এর মধ্যে কেউ হাসপাতালে, আবার কেউ নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাগুলোতে। তাদের বাড়িঘর এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাত সোয়া ২টার দিকে মারা যান তিনি। পরে ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই নারীর নাম পূর্ণিমা (৩৫)। তিনি কেশরহাট পৌরসভার খড়পট্টির সুকুমারের স্ত্রী। কয়েকদিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশি ছাড়াও শ্বাসকষ্ট ও পাতলা পায়খানায় ভুগছিলেন পূর্ণিমা। মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবির বলেন, গভীর রাতে রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এরপর পরিবারের সদস্যরা তার লাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। রাতেই তার নমুনা সংগ্রহ করে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কুড়িগ্রামের উলিপুরে করোনা উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি, ও গলাব্যথা নিয়ে একজন ব্যক্তির (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাতে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই মাস্টার পাড়াগ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। এরপর রবিবার ভোররাতে এলাকাবাসীরা কেউ না এলে পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগের লোকজন তার লাশ দাফন করেন। এলাকাবাসীরা জানান, নিহত ব্যক্তি উলিপুরের গোড়াই মাস্টারপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর পুত্র টাঙ্গাইলের এক প্রবাসীর বাড়িতে কাজ করতেন।
করোনা উপসর্গ (জ্বর ও গলাব্যথা) নিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ২২ বছর বয়সী এক শ্রমিক মারা গেছেন। গতকাল দুপুরে সিভিল সার্জন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে রবিবার দিবাগত রাতে স্থানীয় চরআফজাল গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। রাত ১২টার দিকে করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করে রিপোর্টের জন্য পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মৃত ব্যক্তির বাড়িসহ দুই বাড়ি লকডাউন করা হয় বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।নাটোরের বাগাতিপাড়ায় জ্বর ও শ্বাসকষ্টে সুকুমার দাস (৩৫) নামে এক ভ্যানচালক মারা গেছেন। রবিবার রাতে উপজেলার নওশেরা গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি কয়েকদিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে অসুস্থ ছিলেন। সুকুমার মারা যাওয়ার পর তার বাড়িসহ আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ওই ভ্যানচালক মারা যাওয়ার পর মসজিদের মাইকে প্রতিবেশীদের মৃত ব্যক্তির বাড়িতে না যাওয়ার অনুরোধ করে ঘোষণা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি মেডিকেল টিম মৃতের নমুনা সংগ্রহ করেন।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে করোনা উপসর্গ নিয়ে মজিবুর রহমান মোড়লের (৬০) মৃত্যু হয়েছে। রবিবার করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়। গতকাল সকালে তিনি মারা যান। গতকাল আরও একজন শরীয়তপুরে জাজিরা বিলাশপুরে করোনায় আক্রমণ হয়েছেন।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার এক কিশোরী এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল জানবার আগেই অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, ১৬ বছরের ওই কিশোরী বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গতকাল ভোরে নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্য ঘোষণা করেন। নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মুনীবুর রহমান জুয়েল বলেন, হৃদক্রিয়া বন্ধে মেয়েটির মৃত্যুর কারণ বলেই আমরা প্রাথমিক ধারণা করছি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হতে মেয়েটির শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট এলেই বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারব।
করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের গাইঘাটা গ্রামে হাবিবুর রহমান রাজিব (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান আলী করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, বজলুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান রাজিব (১৬) জ্বর, গলাব্যথাসহ করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। রবিবার তাকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়। তবে জন্ডিসে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন। এলাকাবাসী জানান, তিন মাস আগে তার বড় ভাই মালদ্বীপ থেকে বাড়িতে আসেন। তার আরেক ভাই গাড়িচালক তিনিও কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরেন। এলাকার মানুষ বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত। বোদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান আলী জানান, করোনা সন্দেহে বিশেষ ব্যবস্থায় তার লাশ দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে রবিবার রাতে জ্বর জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে এক তরুণের (১৯) মৃত্যু হয়েছে। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা জানতে গতকাল দুপুরে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই তরুণের বাড়ি যে চা-বাগানে, সেখানে ১৭টি পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে।