বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও আমদানি স্বাভাবিক রাখতে ১২ সুপারিশ

► লকডাউনে শ্রমিকদের কাজের সুযোগ দিতে বিশেষ কার্ড ► ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠান চালু রাখা ► পণ্য বিপণনে জড়িতদের সারা দেশে চলাচলের সুযোগ ► ব্যাংকিং টাইম বৃদ্ধি ও এলসি করতে নির্দেশনা ► পুলিশি বাধা এড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান লকডাউনের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমদানি এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কল-কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের লকডাউনের আওতামুক্ত রাখাসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ১২ দফা সুপারিশ পাঠিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। প্রতিষ্ঠানটি মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু শাখা নির্বাচন করে সেগুলোর ব্যাংকিং টাইম বাড়ানোরও সুপারিশ করেছে।

সূত্রগুলো জানায়, ট্যারিফ কমিশনের এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে মঙ্গলবার একটি সভা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সভায় পরিবহন ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং পুলিশের আইজিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি উল্লিখিত ১২টি সুপারিশ বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেও চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার-ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পণ্য সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে চাল, ডাল, আদা, ছোলার দাম বেড়ে গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে ট্যারিফ কমিশনের এসব সুপারিশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বন্দরে পণ্যজটসহ সাধারণ ছুটির কারণে নিত্যপণ্য আমদানিতে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকগুলো সীমিত আকারে অল্প সময়ের জন্য খোলা থাকায় আমদানির জন্য এলসি করা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন দফতর ও সংস্থাকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছি। কারণ রমজানে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।’

যেসব সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন : ১. অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংক যেন অনীহা প্রকাশ না করে সে জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ গ্রহণ; ২. লকডাউন চলাকালীন নিত্যপণ্য আমদানি-সংক্রান্ত মূল ডকুমেন্ট লিয়েন ব্যাংকে না এলেও আগত স্ক্যান কপির ভিত্তিতে ডকুমেন্ট রিলিজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা জারি; ৩. মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু শাখা নির্বাচন করে এসব শাখার ব্যাংকিং সময় বৃদ্ধি করা; ৪. নিত্যপণ্য খালাসের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা; ৫. অত্যাবশ্যকীয় পণ্য উৎপাদনকারী মিলের মেশিনারিজ মেরামত ও এ-সংক্রান্ত সেবাদানকারী জনবল বা প্রতিষ্ঠানকে সীমিত আকারে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা; ৬. নিত্যপণ্য উৎপাদনকারী মিল যেসব এলাকায় অবস্থিত সে এলাকার সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান যেন মিলে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ সজর রাখে সে বিষয়ে নির্দেশনা; ৭. আমদানিকৃত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের কাঁচামাল, নিত্যপণ্য ও সহযোগী শিল্পের কাঁচামাল সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস খালাসে অগ্রাধিকার প্রদান; ৮. নিত্যপণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের লকডাউন চলাকালীন কাজে যোগদানের জন্য বিশেষ আইডি কার্ড প্রদান; ৯. দেশের তিনটি প্রধান নৌবন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসাকেন্দ্র চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ ও যশোরের নোয়াপাড়ায় পণ্য লোডিং ও আনলোডিংয়ের জন্য শ্রমিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে যোগ দিতে বিশেষ আইডি কার্ড প্রদান; ১০. পণ্য বিপণন কাজে নিয়োজিত জনবলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সব জায়গায় সীমিত আকারে লকডাউনের আওতামুক্ত রেখে বিপণন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা প্রদান; ১১. অত্যাবশ্যকীয় পণ্য প্যাকেজিং, লেবেলিং ও বোটলিংয়ের জন্য যেসব কারখানা চালু রাখা প্রয়োজন সেসব কারখানা চালু রাখা ও উৎপাদিত পণ্যকে নিত্যপণ্য বিবেচনায় এনে এদের সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ; ১২. নিত্যপণ্য ও এর কাঁচামাল এবং সহযোগী পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে যেন পুলিশি বাধার সৃষ্টি না হয় সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান। এসব সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারা দেশে এক মাস ধরে সাধারণ ছুটি কার্যকর থাকায় নিত্যপণ্য উৎপাদন ও আমদানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য চলতে পারে না। নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হলে পণ্য উৎপাদন ও আমদানির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সামগ্রিকভাবে সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমরা সে বিষয়গুলোতেই দৃষ্টি দিয়েছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর