করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রেমডেসিভির ড্রাগ নিয়ে যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল, তা ব্যর্থ হওয়ার পর ব্রিটেনে শুরু হয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা। গত বৃহস্পতিবার এ ভ্যাকসিন শরীরে নিয়েছেন দুজন স্বেচ্ছাসেবী গবেষক। এর মধ্যে মহিলা বিজ্ঞানী এলিসা গ্রানাটোও একজন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষার জন্য ৮০০-এর বেশি স্বেচ্ছাসেবীকে নিয়োগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রথম দুজনের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে এই ভ্যাকসিন। এরপর আরও বেশ কয়েকজনকে একসঙ্গে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। বাকি কয়েকজনকে দেওয়া হবে কন্ট্রোল ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না, তবে মেনিনজাইটিসের বিরুদ্ধে কাজ করে। ভ্যাকসিন গ্রহণকারী বিজ্ঞানী এলিসা গ্রানাটো তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘?আমি একজন বিজ্ঞানী। সে কারণে আমি চেয়েছিলাম এই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াটির সঙ্গে থাকতে।’ প্রসঙ্গত, তিন মাসের চেষ্টায় এ ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল। তাদের প্রধান অধ্যাপক সারাহ্? গিলবার্ট বলেন, ‘?আমার বিশ্বাস, এই ভ্যাকসিনটি বিফলে যাবে না। তবে অবশ্যই আমাদের আগে পরীক্ষা করতে হবে। তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তার আগে কিছুই বলা উচিত নয়। দেখতে হবে, এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে করোনার সংক্রমণ রুখে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে কিনা।’? সারাহ্ গিলবার্টের দলে আরও যারা রয়েছেন তারা হলেন, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল ও ড. স্যান্ডি ডগলাস। এদিকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, মানব শরীরে ট্রায়ালের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের দুটি দলে ভাগ করা হয়েছে। একদলকে দেওয়া হচ্ছে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন, অপর একদলকে দেওয়া হবে মেনিনজাইটিস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন। তাদের সবার ওপরই বিশেষ নজর রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, জেন্না ইনস্টিটিউট ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হচ্ছে করোনা প্রতিরোধকারী ভ্যাকসিন। এখন পর্যন্ত এই ভ্যাকসিনের নাম রাখা হয়েছে ‘চ্যাডক্স ১’ ভ্যাকসিন। গত ১০ জানুয়ারি থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের কাজ শুরু করে অক্সফোর্ড। মার্চেই প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়েরও কাজ চলছে এখন। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১০ লাখ প্রতিষেধক তৈরির প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছেন অক্সফোর্ডের গবেষকরা। বিজ্ঞানী দলের এক সদস্য অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল জানিয়েছেন, বিশ্বের সাতটি জায়গায় এই প্রতিষেধক তৈরির কাজ চলছে। প্রস্তুতকারী অংশীদার হিসেবে রয়েছে ব্রিটেনের তিনটি সংস্থা, ইউরোপের দুটি, চীনের একটি এবং ভারতের একটি সংস্থা। ব্রিটেন ছাড়াও আমেরিকা এবং চীনের দুটি সংস্থাও এ প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে।করোনারোধে ব্যর্থ রেমডেসিভির ড্রাগ : করোনাভাইরাসের ওষুধ হিসেবে যে রেমডেসিভির ড্রাগের ওপরে ভরসা রেখেছিলেন বিশেষজ্ঞরা, মানুষের ওপর পরীক্ষায় তার ফল আশানুরূপ নয় বলে জানানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২৩৭ জন করোনা রোগীর মধ্যে ১৫৮ জনের ওপর এই ড্রাগ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। বাকি ৭৯ জনের সাধারণভাবে চিকিৎসা করা হয়। দেখা গেছে, রেমডেসিভির দেওয়া রোগীদের মধ্যে ১৩.৯ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। অন্য রোগীদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১২.৮ শতাংশের।
নিকোটিনই করোনার ত্রাস : ফ্রান্সের এক নতুন গবেষণায় সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এতে বলা হচ্ছে, করোনা থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে নিকোটিন। এ নিয়ে চলছে উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা। প্যারিসের এক হাসপাতালে ৩৪৩ জন গুরুতর করোনা আক্রান্ত এবং ১৩৯ জন সামান্য করোনা লক্ষণযুক্ত রোগীর ওপর গবেষণা চালানোর পর এই তথ্য সামনে এসেছে।
ফ্রান্সের Pasteur Institute-এর বিখ্যাত নিউরোবায়োলজিস্ট জঁ পিয়ের শাংজিউর এই থিওরি অনুযায়ী, নিকোটিন শরীরের সেল রিসেপ্টরে আটকে যায়। ফলে সেই স্তর ভেদ করে করোনাভাইরাসে শরীরের কোষে প্রবেশ করতে পারে না। ফ্রান্সের স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন পেলেই গবেষকদের এই দল পরবর্তী পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করবে বলে জানা গেছে।
তবে একই সঙ্গে মানুষকে সচেতন করে দিয়ে ফ্রান্সের স্বাস্থ্য আধিকারিক জেরোম সালোমঁ জানিয়েছেন, ‘নিকোটিনের ক্ষতিকারক দিকটা কখনোই ভুলে গেলে চলবে না। যারা ধূমপান করেন না তারা যেন কোনোভাবেই নিকোটিন সাবস্টিটিউট ব্যবহার না শুরু করেন। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি আসক্তি জন্মাতে পারে।’