গতকাল সন্ধ্যায় মাহে শাবানের সূর্য ডুবে গিয়ে মাহে রমজানের চাঁদ উঁকি দিয়েছে। বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছে, হে পৃথিবীর মানুষ! কল্যাণের মাস, বরকতের মাস, রহমতের মাস রমজান এসেছে। এ চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা পৃথিবীবাসীর জন্য আকাশের দুয়ার খুলে দেন। মৃতদের জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেন। জাহান্নামের আজাব বন্ধ করে দেন। এ মাসের মাহাত্ম্য এত বেশি যে, একবার রমজানের চাঁদ দেখার পর পর নবীজি (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, হে আমার সাহাবিরা! এ মুহূর্তে এমন এক মাস তোমাদের মাঝে এসেছে যে মাসের চেয়ে উত্তম কোনো মাস নেই। এ মাসে বান্দার ওপর অঝর ধারায় রহমতের বৃষ্টি ঝরে। এ মাসের বরকতে একটি নফল ইবাদত ফরজ ইবাদত হিসেবে লেখা হয়। আর একটি ফরজ ইবাদত লেখা হয় সত্তরটি ফরজ ইবাদত হিসেবে। হে আমার সাহাবিরা এ মাসের শেষ দশকে এমন একটি রাত আছে, যে রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোনো রাত নেই। সেই একটি রাত হলো লাইলাতুল কদর। এ রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। তোমরা যারা এ রাত পাবে অবশ্যই আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং দীর্ঘ সালাতে দাঁড়িয়ে থাকবে। হে পাঠক! পৃথিবী যখন ভয়ে নিথর, আতঙ্কে স্তব্ধ, মানুষ যখন ঘরবন্দী, এক বেলা খেলে আরেক বেলা খাওয়ার চিন্তায় যখন হাড়হাভাতে মানুষ পেরেশান, এমন সময় রহমতের বার্তা নিয়ে রমজান এসেছে। রমজান এলেই খোদার অফুরন্ত রহমতের বর্ষণ শুরু হয়। তাই আসুন খালেস অন্তরে আমরা আল্লাহর কাছে তওবা করি। হে আল্লাহ! জীবনের প্রতি মুহূর্তে জেনে-না জেনে অসংখ্য গুনাহ করে ফেলেছি। তোমার হুকুম অমান্য করেছি। তোমার বান্দার অধিকার নষ্ট করেছি। তাদের ওপর কতই না জুলুম করেছি। বাবা-মার অধিকার আদায় করিনি। আত্মীয়স্বজন থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিলাম। এমনিভাবে হে প্রভু আমি গুনাহের সমুদ্রে ডুবে ছিলাম। অশ্লীলতা-অন্যায়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছি। হে আল্লাহ! রমজানের এই প্রথম দিনে, যখন তোমার রহমতের স্রোতে পৃথিবী ভেসে যাচ্ছে, এ মুহূর্তে তোমার রহমতের অসিলা দিয়ে আমি তওবা করছি। হে আল্লাহ! তোমার প্রিয়তম হাবিবের অসিলায় আমার তওবা কবুল কর। হে আল্লাহ! এ জীবনে আর আমি গুনাহ করব না।
হে আল্লাহ! আজ আমরা আপনার রহমতের ভিখেরি। আমাদের মতো অসহায় আর কোনো সৃষ্টি নেই। তুমি আমাদের শ্রেষ্ঠ করে পাঠিয়েছিলে, আমরা নফসের গোলামী করে সেই শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়ে ফেলেছি। হে আল্লাহ! মাহে রমজানের অসিলায় তুমি আমাদের ওপর রহম কর। রহমতের দশকের অসিলায় পৃথিবীবাসীর ওপর তুমি দয়া কর। হে আমাদের পরওয়ারদেগার! এ মাসে তোমার বিশ্বাসী বান্দারা সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, দান, সদকাসহ কত ধরনের ইবাদতেই না ডুবে থাকবে, এসব ইবাদতের অসিলা দিয়ে বলছি, করোনা নামক মহামারী তুমি আমাদের থেকে হটিয়ে নাও।
হে রহমান খোদা! এ মাসেই তো তুমি অন্ধকার পৃথিবীতে আলোর দিশারি আল কোরআন নাজিল করেছিল, সেই কোরআন মতে জিন্দেগী পরিচালনা না করার কারণেই আজ তুমি আমাদের ওপর করোনার আজাব চাপিয়ে দিয়েছ। হে আল্লাহ! আমরা কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করব, আমাদের তুমি করোনা থেকে মুক্তি দাও। হে রহমানুর রহিম! এ মাসের শেষ দশকে লুকিয়ে আছে লাইলাতুল কদর নামক সোনালি রাত। এ রাতের অসিলায় তুমি আমাদের মুক্তি দাও। মাফ করে দাও। বাকি রোজাগুলো যেন সুস্থভাবে আদায় করতে পারি সে তৌফিক তুমি আমাদের দান কর।লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।
www.selimazadi.com