শনিবার, ১৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
সরকারি পর্যবেক্ষণ

অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে

করোনায় প্রধান চ্যালেঞ্জ খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও চাহিদা আর জোগানের সমন্বয়

মানিক মুনতাসির

বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের আঘাতে স্থবির হয়ে পড়েছে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। এর প্রভাবে বিশ্বের প্রায় ১৬০ কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে বলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সতর্কতা জারি করেছে। আর বিশ্বব্যাংক বলছে, বিশ্বব্যাপী ইকোনমিক গ্রোথ হবে শূন্য। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে তার ওপর একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করেছে সরকার। এতে মূলত কাজ করেছে অর্থ, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এতে নেতৃত্ব দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ওই পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে করোনার যে আচমকা আঘাত লেগেছে সেটার রেশ টানতে হবে অনেক বছর। সামনের অন্তত কয়েকটি বছর দেশের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে যাবে। আর চলতি বছর কাক্সিক্ষত জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের ও দেশের বাইরে শ্রমবাজারে যে ধস নেমেছে তা পুনরুদ্ধার করা খুবই কঠিন হবে। বিশেষ করে গত পাঁচ/ছয় মাসে অন্তত ৮ লাখ প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছেন, তাদের হয়তো আর নিজ নিজ কাজের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না। এ জন্য তাদের প্রশিক্ষিত করে ১০ লাখ টাকা করে ঋণ দিয়ে তাদের স্থানীয়ভাবে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ওই পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সামনের দিনে বাংলাদেশের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে খাদ্য নিরাপত্তা বিধান করা। কর্মসংস্থান ধরে রাখা ও নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। দেশের কৃষি ও শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখা। যেসব কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ রয়েছে, সেসব কারখানার মালিকরা বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনছেন। তাদের প্রণোদনা দিয়ে আবার উৎপাদনে ফেরানোও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি মানুষের চাহিদা আর পণ্যের জোগানের সমন্বয় সাধন করা। এর মধ্যে পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে যে কোনো উপায়ে সচল রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে সরকার। ওই পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক ব্যাংকিং ও হোল্ডিং কোম্পানি জে পি মর্গান চেসের মতে, করোনা মহামারীর প্রভাবে আগামী দুই প্রান্তিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখা দেবে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মতে চলতি বছর বৈশি^ক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১৯ সালের চেয়ে অর্ধেক কমে যাবে। আর ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারী বিশ্ব অর্থনীতিতে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের লোকসান ঘটাবে। যার ফলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিও কমে যাবে। এমনকি বাংলাদেশের প্রতিটি খাতেই এর প্রভাব পড়বে। যার রেশ থাকবে কয়েক বছর। এর প্রভাব মোকাবিলায় যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো যে কোনো উপায়ে দেশীয় উৎপাদন অব্যাহত রাখা। আমদানিতব্য খাদ্যপণ্য যেসব দেশ থেকে আমদানি করা হয় তার বিকল্প দেশ খুঁজে বের করা। যেমন চীন থেকে যেসব খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয় সেগুলো অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানি করা। একইভাবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এলেই বিশ্বব্যাপী যখন কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। তখন আবার প্রবাসী শ্রমিকের চাহিদা বাড়বে। এর আগাম প্রস্তুতিস্বরূপ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এখন থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে দেশে লকডাউন শিথিল করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরার চেষ্টা করছে বিশ্ববাসী। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে কর্ম হারাতে বসেছে বিপুলসংখ্যক লোক। শুরু হয়েছে বেকারত্ব আর কর্মহীনতার আতঙ্ক। বিশ্বের প্রভাবশালী অনেক শিল্পগোষ্ঠীই তাদের শিল্প টিকিয়ে রাখতে লড়াই করছে। কেউ কেউ কর্মী ছাঁটাইয়েরও ঘোষণা দিয়েছে। আবার কেউ কেউ নিজেরা বেতন কম নিয়ে ধাক্কা সামলানোর ঘোষণা দিয়েছেন। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতেও অন্তত ২৭ শতাংশ মানুষ বেকার হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা যেটা ধারণা করছি। আইএলও যেটা পূর্বাভাস দিয়েছে বাস্তব অবস্থা হয়তো এরচেয়েও ভয়াবহ হবে। মানুষ একদিকে চাকরি হারাবে। নতুন করে বেকার হবে। সঙ্গে আগের বেকারত্ব নতুন সংকট তৈরি করবে। একই সঙ্গে দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে। জাতিসংঘ বলছে, খাদ্য সংকট হবে। সেটা আমিও বলি সারা বিশ্বেই একটা দুর্ভিক্ষের অবস্থা তৈরি হবে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং চাদিহা স্বাভাবিক রাখতে পারলে আমরা হয়তো কিছুটা কম ক্ষতিগ্রস্ত হব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর