সোমবার, ১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

কতটা স্বাস্থ্যবিধিতে খুলেছে সব

নিজস্ব প্রতিবেদক

কতটা স্বাস্থ্যবিধিতে খুলেছে সব

দীর্ঘ ছুটির পর প্রথম দিনে গতকাল রাজধানীর মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় চিরচেনা যানজট ও কর্মব্যস্ততা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

টানা ছুটির পর প্রথম দিন অফিস-আদালতে ছিল বাড়তি সতর্কতা। কমলাপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই। তবে লঞ্চ ছেড়েছে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে। একইভাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী গাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। নগরীর বিভিন্ন সড়কে যেসব লেগুনা চলেছে সেগুলোয় স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না। ব্যাংকগুলোতে ছিল মানুষের বেশ ভিড়। অনেক ব্যাংকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বাস্থ্যবিধি মানলেও তা অনুসরণ করতে দেখা যায়নি সেবাগ্রহীতাদের। একইভাবে গতকাল নগরীতে গণপরিবহন না চললেও ব্যক্তিগত যানবাহনের উপস্থিতি ছিল বিপুল। ফলে অফিস-আদালত খোলার প্রথম দিন গতকাল তুলনামূলক ফাঁকা ছিল রাস্তাঘাট। তবে মতিঝিল ব্যাংকপাড়া, দৈনিক বাংলা এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে বেশ যানজট সৃষ্টি হয়েছিল। করোনাকালের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকা পুরনো চেহারায় ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির পর সরকার অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে ১৩ দফা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস, লঞ্চ, ট্রেন, বিমান ও গণপরিবহন খুলে দিয়েছে। এর মধ্যে গণপরিবহন চলবে আজ থেকে। কিন্তু সরকার সবকিছু খুলে দিলেও অনেক ক্ষেত্রেই মানা হয়নি সরকার-নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি। গতকাল প্রথম দিন সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলার পর কর্মজীবীরা সকাল থেকেই অফিসের পথে বাসা থেকে বের হন। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে অফিসে যেতে পারলেও ভোগান্তি নিয়েই অফিসে গেছেন সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে প্রথম দিন রাজধানীতে কিছু পরিবহন শারীরিক দূরত্ব মেনে যাত্রী পরিবহন করলেও বেশির ভাগ যাত্রীই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেননি। অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। শারীরিক দূরত্বের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি সীমাবদ্ধ ছিল। আবার বেশির ভাগ পরিবহনেও সেটিও মানা হয়নি।

এমনকি সরকারি কর্মচারীদের বহনকারী পরিবহনেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হয়নি। মধ্যে এক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহনের কথা থাকলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ১১-০৩০৬ নম্বরের গাড়িটিতে কোনো রকম আসন ফাঁকা না রেখেই যাত্রীরা বসেছেন। ওই বাসে ছিল না হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এমনকি ছিটানো হয়নি জীবাণুনাশক। একই চিত্র দেখা গেছে আরও অনেকগুলো পরিবহনে। একইভাবে সরকারি অনেক স্টাফ বাসেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। সচিবালয়সহ সরকারি অফিসগুলোতে যেসব কর্মকর্তা নিজেদের গাড়িতে করে সরাসরি সচিবালয়ে ঢুকেছেন, সচিবালয়ে প্রবেশের মুখে ফটকে তাদের গাড়িতে কোনো রকম জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়নি। এমনকি এসব কর্মকর্তার বেশির ভাগই গাড়ি থেকে নেমে সরাসরি নিজেদের দফতরে ঢুকেছেন। একই অবস্থা অন্য অফিসগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি স্টাফ বাসে দেখা গেছে, কর্মচারীরা কোনো রকম শারীরিক দূরত্ব না মেনেই পাশাপাশি বসেছেন। নগরীর বিভিন্ন রুটে, বিশেষ করে রাজারবাগ, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, বাসাবো, খিলগাঁও রেলগেট ও গুলিস্তানে চলাচলকারী লেগুনাতে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। এসব পরিবহনে কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। তবে গতকাল যেসব স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে সেগুলোতে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ট্রেনগুলো অর্ধেক আসন খালি রেখে যাত্রী পরিবহন করেছে। রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা বনলতা ট্রেনটি মধ্যের একটি আসন ফাঁকা রেখে ঢাকার পথে যাত্রা করে। যাত্রীদের সবাই বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করেছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বিরতিহীন আন্তনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস সব রকম নিয়ম মেনে চট্টগ্রাম ছাড়ে। চট্টগ্রাম রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রেলওয়ের পক্ষ থেকে সব রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্টেশনে আসা যাত্রীরা নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে প্রবেশ করছে কি না সেটি নিশ্চিত করেছে রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী, রেলপুলিশ ও রেলের কর্মীরা। রেলওয়ের পক্ষ থেকে যাত্রীদের প্রত্যেককে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেন ছাড়ার আগেই বগিগুলো জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। যাত্রীদের এক গেট দিয়ে প্রবেশ এবং অপর গেট দিয়ে বের হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনে দায়িত্বরত কর্মীরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন। তাদের মাস্ক, গ্লাভস পরা নিশ্চিত করা হয়েছে। একইভাবে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোও সীমিতসংখ্যক যাত্রী নিয়ে নিয়ম মেনে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। অপরদিকে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোও নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যাত্রা করেছে। রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন কমলাপুরে উপস্থিত হয়ে সরেজমিন সবকিছু দেখেছেন। তবে ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য নদীবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করা যাত্রীবাহী লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। প্রায় সব লঞ্চেই ছিল মানুষের ভিড়। শারীরিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি কাউকে। এদিকে আজ থেকে শুরু হচ্ছে গণপরিবহন চলাচল। এসব পরিবহন স্বাস্থ্যবিধি কতটা অনুসরণ করে যাত্রী করতে পারবে তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

সর্বশেষ খবর