করোনাভাইরাসে প্রতিদিনেই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। মারা যাচ্ছেন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। গতকালও ঢাকায় মারা গেছেন একজন চিকিৎসক, সাবেক পাইলট, ব্যাংকার ও একজন পুলিশ। আর চট্টগ্রামে মারা গেছেন একজন রাজনীতিবিদ ও সিএসই কর্মকর্তা। এর মধ্যে কেউ করোনায়, কেউ মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে।
গতকাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইউরোলজি সার্জন ডা. দেওয়ান মনজুর রশীদ চৌধুরী মারা গেছেন। রাজধানীর আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল সকাল ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ডা. দেওয়ান মনজুর রশীদ চৌধুরীর স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ডা. দেওয়ান মনজুর রশীদ চৌধুরী ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ কনসালটেন্ট। ঢামেক থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও সেবা প্রদান করেছেন। এ ছাড়া গতকাল সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক পাইলট আলী আশরাফ খান মৃত্যুবরণ করেছেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে মারা যান তিনি। আশরাফ বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাবেক সভাপতি ছিলেন। তার সহকর্মী ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আলী আশরাফ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আগে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। আলী আশরাফ খান, তার স্ত্রী, পুত্র-পুত্রবধূ এবং বাসার গৃহকর্মীসহ মোট সাতজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সম্প্রতি তার স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
সোমবার ঢাকায় ন্যাশনাল ব্যাংকের দিলকুশা শাখার একজন কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ৪৬ বছর বয়সী আবুল বাশার ওই শাখার হিসাব বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ছিলেন। রাজধানীর হলি ফ্যামেলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে তার মৃত্যু হয় বলে ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এ এস এম বুলবুল জানান। তিনি বলেন, ঈদের আগের দিন করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় আবুল বাশার হলি ফ্যামেলিতে ভর্তি হয়েছিলেন। তখনই দিলকুশা শাখা অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। ওই শাখার গ্রাহকদের পাশের অন্য শাখায় লেনদেন করতে নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দিলকুশা শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। চলমান করোনা যুদ্ধে জীবন দিলেন বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত আরও একজন সদস্য। তার নাম নিরোদ চন্দ্র মন্ডল (৫২)। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগে পল্লবী জোনে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। করোনা পজিটিভ হওয়ায় তিনি কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল দুপুরে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।তার বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পুলিশের ব্যবস্থাপনায় তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমান করোনাকালে জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে এ যাবত বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত ১৬ জন বীর সদস্য আত্মোৎসর্গ করলেন।
চট্টগ্রামে মারা গেলেন রাজনীতিবিদ ও সিএসই কর্মকর্তা : চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ কবির চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্য হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। জানা গেছে, সপ্তাহখানেক আগে কবির চৌধুরী হার্টের সমস্যায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেশ কয়েক দিন ধরে জ্বরও ছিল তার। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু করোনা সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো হাসপাতাল তাকে ভর্তিতে রাজি হয়নি। পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়ে গত ২৯ মে জেনারেল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠায়। কিন্তু রিপোর্ট পাওয়ার আগে তার অক্সিজেন গ্রহণের হার কমে যায়। এ সময় তাকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন দেখা দিলে আবারও করোনা সার্টিফিকেটের দোহাই দিয়ে কোনো হাসপাতাল ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। অনেক চেষ্টার পর ৩০ মে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সোমবার তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। কবির চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৯১ সালে আনোয়ারা থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) উপসর্গ জ্বর ও কাশি নিয়ে মারা গেছেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রশাসন বিভাগের ম্যানেজার মো. করিম উল্লাহ। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিএসই) মামুন উর রশিদ। তিনি বলেন, করিম উল্লাহ হার্ট অ্যাটাকে (হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে) মারা গেছেন বলে আমি শুনেছি। ওনার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে কি-না, সে বিষয়টি আমি জানি না। জানা গেছে, করিম উল্লাহ গতকাল সকালে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি-না নিশ্চিত হতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করেছে। রবিবার জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে সিএসইর এই কর্মকর্তা চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।