বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ফের কর্মব্যস্ত সব পেশার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা ছুটির পর সীমিত পরিসরে অফিস আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহনসহ সব কিছু খুলে দেওয়ার পর এখন কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রায় সব পেশার মানুষ। আগের মতোই তারা সকাল থেকে ছুটছেন কাজে। কেউ যাচ্ছেন সরকারি দফতরে, কেউবা বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত কিংবা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠনে। আবার ভোর থেকে ছুটতে শুরু করছেন গার্মেন্টমুখী হাজার হাজার নারী-পুরুষ। গত চার দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বড় শহরগুলোতে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

গত রবিবার থেকে সব কিছু খুলে দেওয়ার পর থেকে প্রায় সব পেশার মানুষ ধীরে ধীরে নিজেদের কাজে যোগ দেওয়া শুরু করেছেন। সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। নগরীর কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে অফিসপাড়া, ব্যাংক, শেয়ার মার্কেট, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান, পাড়া-মহল্লার দোকানপাট সর্বত্রই ব্যস্ত কর্মজীবী মানুষেরা।

গতকাল সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মতোই মানুষের ভিড় লেগে আছে বাজারজুড়ে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মাছ, মাংস, সবজি, ফলমূলসহ সব ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বাজারে। একইভাবে ছোট ছোট সবজি, মাছ ও ফল বিক্রেতারা ভ্যানে করে নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় সকাল থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সরকারি অফিস আদালতে সীমিত পরিসরে কাজ শুরু হওয়ায় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ২৫ শতাংশের বেশি না হওয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকার কারণে সরকারি দফতরগুলোতে আগের মতো ভিড় নেই। তবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আর ব্যাংকগুলোতে সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। যদিও কিছু কিছু ব্যাংক তাদের শাখা অফিসগুলোতে কর্মকর্তাদের উপস্থিতির বিষয়ে রোস্টার অনুসরণ করছে। অর্থাৎ কর্মকর্তাদের কে কোন দিন কাজে থাকবেন সেটি ভাগ করে দিয়েছে। বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি এবং ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। অবশ্য রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কর্মরতদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে গত দুই-তিন দিনে। প্রায় সব বেসরকারি অফিস, প্রাইভেট ফার্মে কাজে যোগ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অনেকটা চাকরি হারানোর ভয়েই তারা বাধ্য হয়ে যোগ দিয়েছেন কাজে। এসব কারণে ধীরে ধীরে কর্মব্যস্ত মানুষের পদভারে সচল হযে উঠছে সব কিছু। রাজধানীর চারপাশে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া এবং রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা, মগবাজারসহ যেসব এলাকায় গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে সেগুলোতে সকাল থেকেই শুরু হয় কর্মব্যস্ত মানুষের উপস্থিতি। যার ফলে সকাল থেকেই দেখা যায় রাজধানীসহ গার্মেন্ট শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত এলাকায় কর্মজীবী মানুষের পদচারণা ও ব্যস্ততা। গণপরিবহন, ট্রেন ও লঞ্চ চালু হওয়ায় নগরীর রাস্তাঘাটেও মানুষের উপস্থিতি এবং ব্যস্ততা বেড়েছে। নগরীতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। পরিবহন শ্রমিকরাও টানা ৬৭ দিন পর আবারও কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। দেশের বিভিন্ন শহর থেকে কর্মজীবী মানুষেরাও প্রতিদিন ছুটে আসছেন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে। সাধারণ ছুুটির সময়ে যারা গ্রামে চলে গিয়েছিলেন তারা ছুটে আসছেন কর্মস্থলে। এসব কারণে কর্মজীবী মানুষের চাপ এবং ব্যস্ততা বেড়ে গেছে রাজধানী ঢাকাতে। দূরপাল্লার গণপরিবহনে যাত্রীদের চাপ কম থাকলেও ট্রেনে যাত্রীদের উপস্থিতি অনেক বেশি। গত তিন-চার দিনে দেখা গেছে ট্রেনে করেই বেশি সংখ্যক মানুষ ঢাকায় আসছেন। যাদের বেশির ভাগই কর্মজীবী। এ কারণে ট্রেনের সংখ্যা গতকাল থেকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিন থেকে ১৬টি ট্রেন বিভিন্ন রুটে চলাচল করলেও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আরও ২২টি ট্রেন চালু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ট্রেনে যাত্রী বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখা গেছে, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। যা বাস বা লঞ্চের ক্ষেত্রে খুব একটা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বিভিন্ন পেশার কর্মজীবী মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে ধীরে ধীরে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বিভিন্ন পেশার লোকজন আশা করছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সব কিছু পুরো স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

সর্বশেষ খবর