মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
অর্থনীতি সমিতির তথ্য

কাজ হারিয়েছে পৌনে চার কোটি মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ঘোষিত ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে ৩ কোটি ৬০ লাখ (প্রায় পৌনে ৪ কোটি) মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এ সময়ে ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের শ্রেণি কাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে দুই কোটি ৫৫ লাখ মানুষ হতদরিদ্র হয়েছেন। তবে অতি ধনীদের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।

গতকাল ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এক বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থানকালে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত। এ সময় সমিতির পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলাসহ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও পুনর্জীবিত করতে ২০২০-২১ অর্থবছরের ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বাজেট রাখার প্রস্তাব করা হয়। যা বর্তমান বাজেটের প্রায় তিনগুণ ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) ৫৫ শতাংশ। দেশের বর্তমান বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা।

‘বিকল্প মডেল বাজেটের প্রস্তাব’ উল্লেখ করে আবুল বারকাত বলেন, আগামী বাজেটের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর আয় ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতির মধ্যে ৭০ হাজার কোটি টাকা বা অর্ধেকের বেশি আসবে বন্ড বাজার থেকে। আর সঞ্চয়পত্র থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে আসবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

আবুল বারকাত বলেন, ব্যাংক ও বৈদেশিক ঋণমুক্ত বাজেটে রাজস্ব আহরণের টার্গেটের প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ হাজার কোটি টাকার। যা মোট বাজেটের ৯১ শতাংশ। তিনি বলেন, বাজেটে নতুন করে ২১টি খাতের কর আদায়ের কথা বলেছি। এর মধ্যের চারটি খাত থেকে ব্যাপক আয় করা যাবে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-সম্পদ কর, অতিরিক্ত মুনাফা কর, অর্থপাচার, কালো টাকা থেকে কর এবং বিদেশিদের কাছ থেকে করসহ ২২ খাত থেকে মোট ২ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা কর আদায় করতে পারবে সরকার। তিনি বলেন, উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ ৫৭ শতাংশ আর ৪৩ শতাংশ হবে পরিচালন শতাংশ রাখার প্রস্তাবিত করা হয়েছে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ কর ৭৯ শতাংশ থেকে আর পরোক্ষ কর ২১ শতাংশ ধরা হয়েছে। ফলে সমাজে আয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বৈষম্যের বাজেট। ড. আবুল বারকাত বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব এখন মহাবিপর্যয়কাল অতিক্রম করছে। ২১৩টি রাষ্ট্র ও ৮০০ কোটি মানুষ আজ মহাসংকটে। অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ ৮ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইএলওর হিসাবে বিশ্বের ৫০ ভাগ জীবিকা হারাবেন। আর বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও একই পথের পথিক। তাই আসন্ন বাজেট হবে কভিড থেকে মুক্তির বছর। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে দরিদ্র মানুষের বেহাল দশা। লকডাউনের ৬৬ দিনে নবদরিদ্র ও অতি দরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে ৫ কোটি ৯৫ লাখ বা প্রায় ৬ কোটি।

বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ বিষয়ে অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটে বলা হয়, আমরা নতুন করে বিদেশ থেকে কোনো ঋণ নেব না। পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করব। তবে স্বৈরাচারী আমলের বৈদেশিক ঋণ অস্বীকার করার মতো দক্ষতা আমাদের অর্জন করতে হবে। আমরা যদি পাকিস্তান আমলের ঋণ অস্বীকার করতে পারি তাহলে কেন স্বৈরাচারী আমলের ঋণ অস্বীকার করতে পারব না। এজন্য অর্থনৈতিক কূটনীতি শক্তিশালী করার কথা বলা হয়। আবুল বারকাত বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগে আমাদের কর্মে নিয়োজিত ছিল ৬ কোটি ১০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপে ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের শ্রেণি কাঠামো পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, লকডাউনের আগে অতি ধনী যে এক কোটি ৭০ লাখ ছিল তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। ‘তবে উচ্চ-মধ্যবিত্তে থাকা তিন কোটি ৪০ লাখ থেকে এক কোটি ১৯ লাখ মধ্য-মধ্যবিত্তে নেমে গেছে। মধ্য-মধ্যবিত্তে থাকা তিন কোটি ৪০ লাখ থেকে এক কোটি দুই লাখ নিম্ন-মধ্যবিত্তে নেমেছে।’ তিনি বলেন, নিম্ন-মধ্যবিত্তে থাকা পাঁচ কোটি ১০ লাখ থেকে এক কোটি ১৯ লাখ দরিদ্র হয়েছে। দরিদ্র থাকা তিন কোটি ৪০ লাখ থেকে দুই কোটি ৫৫ লাখ হতদরিদ্র হয়েছে। সব মিলিয়ে লকডাউনের মাত্র ৬৬ দিনে পাঁচ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের শ্রেণি কাঠামো পরিবর্তন হয়েছে। এ মানুষগুলো এক ধাপ নিচে নেমে গেছেন।

সর্বশেষ খবর