শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

জাতি হতাশ, মানুষের কষ্ট বাড়বে : বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রস্তাবিত বাজেটকে একটি অন্তঃসারশূন্য কল্পনাপ্রসূত কথার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এ বাজেট জনবান্ধব হয়নি, জাতিকে হতাশ করেছে। এতে মানুষের কষ্ট বাড়বে। মারণঘাতী করোনা কাটিয়ে একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বাজেটে নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রত্যাশিত অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। তা ছাড়া কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ এ বাজেটে দেওয়া হয়েছে সেটাও দুর্নীতিকে চলমান রাখার আরেকটি প্রয়াস মাত্র।

মির্জা ফখরুল রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসভবনে গতকাল বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নতুন বাজেট সম্পর্কে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনা সংকটের কারণে জাতি আজ এক মহাদুর্যোগকাল অতিক্রম করছে। মানুষের জীবন ও অর্থনীতিকে এ মহাসংকট থেকে উদ্ধারের জন্য তাই প্রয়োজন ছিল প্রথাগত গতানুগতিক বাজেট কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে একটি ‘বিশেষ করোনা বাজেট’। কিন্তু তা না করে অর্থমন্ত্রী একটি গতানুগতিক অবাস্তবায়নযোগ্য বাজেট ঘোষণা করেছেন। এ সরকারের কাছ থেকে অবশ্য এর বেশি কিছু আশা করেও লাভ নেই। কারণ, জনগণের কাছে এদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এক প্রশ্নেব জবাবে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, স্বাস্থ্য খাত পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত আর দাম্ভিকতা এ অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এখন আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আসলে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া এ ধরনের সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়। তার মতে বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি আপৎকালীন বাজেট করা উচিত ছিল। মির্জা ফখরুল বলেন, জাতি আশা করেছিল এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য চলতি অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেন। এ ছাড়া করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হলো জিডিপির ১.৩% মাত্র। অথচ আমরা স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫% বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলাম। তিনি বলেন, বরাদ্দ যাই হোক না কেন প্রয়োজন স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত ব্যবহার। সে বিষয়ে বাজেটে কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রকৃত অর্থে কোনো গঠনমূলক ব্যবস্থা কিংবা সংস্কার প্রস্তাবও নেওয়া হয়নি। এমনকি যেসব প্রকল্প নিয়ে অনেক সমালোচনা সেসব প্রকল্পগুলোকেই সরকারের বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ পরিবহন খাত ও বিদ্যুৎ খাতসহ এমন অনেক খাতে অনেক বেশি পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা এ মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল না। তিনি বলেন, বাজেটে ব্যাংকিং খাতসহ অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের কোনো সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাব নেই। বরং শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের ঋণ পরিশোধে আরও সময় বৃদ্ধি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা তো কোনো সংস্কার নয়। এটা ব্যাংকিং খাতকে আরও সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। আর্থিক শৃঙ্খলা আরও ভেঙে পড়বে। জিডিপি ও রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা দৃশ্যমানভাবেই প্রতারণার শামিল উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। বাজেটে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাজেটের বড় অংশ মেগা প্রকল্পগুলোকে দেওয়া হয়েছে যেগুলো এরই মধ্যে দুর্নীতির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব প্রকল্পকে বাজেটে আনয়নের প্রয়োজন ছিল না। দুর্নীতির যে ধারা চলমান তা অব্যাহত রাখাই এর কারণ বলে আমরা মনে করি। তা ছাড়া কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ এ বাজেটে দেওয়া হয়েছে সেটাও দুর্নীতিকে চলমান রাখার আরেকটি প্রয়াস মাত্র। আবাসন খাতের ফ্ল্যাটের পাশাপাশি এবার ১০% বাড়তি শুল্কে জমি কেনা ও উন্নয়ন, বিল্ডিং, নগদ টাকা, ব্যাংকে রক্ষিত টাকা এবং স্টক ডিভিডেন্ড, বন্ড ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে অনৈতিকতাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রশ্ন করার বিধানটিও উঠিয়ে দিতে যাচ্ছে যা অসাংবিধানিক এবং কোনোভাবেই কাম্য নয়। অনলাইন কেনাকাটা ও মোবাইল/ইন্টারনেট সেবার বর্তমান ব্যয় বহাল রাখার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেউ যদি ১০০ টাকার সেবা নিতে চান তাহলে ৭৫ টাকার সেবা নিতে পারবেন। ২৫ টাকা যাবে সরকারের পকেটে। মোবাইল সেবার ওপর কর প্রায় প্রতি বছরই বাড়ছে। করোনা সংকটকালে অবরোধ অবস্থায় আমরা দেখছি এসব সেবা কত প্রয়োজনীয়। এ সময় অনলাইন বেচাকেনা এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক আরও ৫% বাড়ানো সঠিক হবে না। ৩০ জুনের মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে-এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বানও জানান মির্জা ফখরুল। এ ছাড়াও ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর