শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

দুঃসময়ের অনিশ্চিত যাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুঃসময়ের অনিশ্চিত যাত্রা

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

প্রস্তাবিত বাজেটকে দুঃসময়ের অনিশ্চিত যাত্রাপথ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন অস্বাভাবিক সময়ের বাজেট গতানুগতিকতার বাইরে না গিয়ে উপায় নেই। রাজস্ব আয় মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি অনুপাতে ১২ শতাংশের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। যেখানে অর্থনীতি মন্দাভাব কাটিয়ে কতটা সচল হবে তা অনিশ্চিত। বাজেট ঘাটতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তো বহু বছর ধরে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত। কাজেই এই সংকটের সময় এ নিয়ে বাড়তি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে চরম মিতব্যয়িতার প্রয়োজন হবে। অত্যাবশকীয় নয়, এমন ব্যয়ের খাত ছেঁটে ফেলা দরকার হবে। এর মধ্যে চলমান এক হাজারের বেশি উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ সঙ্কুচিত করারও প্রয়োজন হতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে বরাদ্দ কাটছাঁট করলে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্ব হবে। কিন্তু আমরা তো বহু বছর ধরেই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত। কাজেই এই সংকটের সময় এ নিয়ে বাড়তি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। কিছু কিছু প্রকল্পের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ-ইআরজি’ চেয়ারম্যান বলেন, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প বা যেসব মেগা প্রকল্পে বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে অনেক আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা আছে বা যেসব প্রকল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি। তবে যেকোনো মূল্যেই অগ্রাধিকার খাতগুলোর বরাদ্দ কমানো তো যাবেই না এবং দরকার হলে বাড়াতে হবে। এগুলো হলো করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জনস্বাস্থ্য খাত, খাদ্য নিরাপত্তাসহ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ভর্তুকি ও প্রণোদনা। অস্বাভাবিক সময়ের বাজেট গতানুগতিকতার বাইরে না গিয়ে উপায় নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়িয়ে জিডিপির অনুপাতে প্রায় এক শতাংশের কাছাকাছি ধরা হয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ হার প্রায় দ্বিগুণ। যদিও এরপরও আমরা নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে থাকব। মহামারী কার্যকরভাবে সামলানোর জন্য দরকার হবে। বলা বাহুল্য, এবারের বাজেটকে সম্পদের কঠিন সীমাবদ্ধতার মধ্যে তৈরি করতে হয়েছে। রাজস্ব আয় মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি অনুপাতে ১২ শতাংশের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যেখানে অর্থনীতি মন্দাভাব কাটিয়ে কতটা সচল হবে তা অনিশ্চিত। অর্থনীতির এই গুণী শিক্ষক বলেন, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ইতিমধ্যে কিছু কিছু সাহায্যের আশ্বাস পাওয়া গেলেও তা বাজেটের প্রাক্কলিত প্রায় নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দিয়ে বাজেট ঘাটতির ৪০ শতাংশ পূরণ করার কথা, সে লক্ষ্যমাত্রার ধারে-কাছে পৌঁছানো যাবে বলে মনে হয় না। বাজেটের মোট ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ছয় শতাংশের সমান, যা বিগত বছরগুলোর গড় হারের প্রায় দ্বিগুণ। এই ঘাটতির বাকি অংশের বেশির ভাগ, ৪৫ শতাংশ মেটানো হবে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে, বাকিটা আসবে সরকারি সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে।

দেশের প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ আশার কথা শুনিয়ে বলেন, সরকারের দেশি-বিদেশি বিদ্যমান ঋণের বোঝা এত বেশি নয় যে, তা থেকে ভবিষ্যতের টেকসই বাজেট ব্যবস্থাপনার জন্য তেমন কোনো ঝুঁকি আছে। কাজেই বর্তমান সংকটকালে বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি থেকে তেমন ঝুঁকি নেই। উপরন্ত সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ চাহিদা মোটেও বড় অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বিশেষত, যেখানে বেসরকারি খাত চাঙ্গা হতে সময় লাগবে বলে ধরে নেওয়া যায় এবং সরকারের ঘোষিত বড় অঙ্কের প্রণোদনা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার সুযোগ থাকবে। অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারিত সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচিগুলোতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রভাব প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারতের কেরলার রাজ্য করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী একটা মডেল হিসেবে গণ্য হচ্ছে। সেখানে শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, সংক্রমণ শনাক্ত করা ও ত্রাণ বিতরণ করার ব্যবস্থা দিয়ে মহামারী মোকাবিলা করা গেছে।

সর্বশেষ খবর