রবিবার, ১৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

যুক্তরাজ্যকে ছাড়াল ব্রাজিল, ভয়াবহতা বাড়ছেই ভারতে

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এখন চার লাখ ৩০ হাজারের কাছাকাছি। আর আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৮০ লাখে। এদিকে মৃত্যুর সংখ্যায় যুক্তরাজ্যকেও ছাড়িয়েছে ব্রাজিল। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরিস্থিতিও অনবরত খারাপ হচ্ছে।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার পর্যন্ত ব্রাজিলে কভিড-১৯ আক্রান্ত ৪১ হাজার ৮২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ৫৬৬। মৃত্যু সংখ্যায় যুক্তরাজ্যকে টপকানো ব্রাজিলের উপরে এখন কেবল যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শনাক্ত আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করোনাভাইরাস এক লাখ ১৭ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দেশটির আরও ২৫ হাজার ৯৮২ জনের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে শনাক্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ ২৮ হাজার ৮১০ জনে। আক্রান্ত সংখ্যায় আরও সপ্তাহখানেক আগেই বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ব্রাজিলে শুক্রবার কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ৯০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার থেকে ব্রাজিলে প্রতিদিন প্রাণঘাতী ভাইরাসে গড়ে এক হাজার ২০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর মিললেও শুক্রবার এ সংখ্যা খানিকটা কমে এসেছে।

এশিয়ায় মৃত্যুতে শীর্ষে ভারত : লকডাউন তোলার প্রথম পর্ব ‘আনলক-১’ শুরুর পর থেকেই ভারতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এরই মধ্যে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। শেষ একদিনে দেশটি নতুন রোগী বেড়েছে ১১ হাজার ৭৭৫ জন। ফলে ভারতে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ নয় হাজার ৩৬০ জন। বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ করোনায় আক্রান্ত দেশ এখন ভারত। তালিকায় তাদের ওপর রয়েছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও রাশিয়া। তবে এশিয়ার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যায় তো বটেই, মৃত্যুতেও সবার শীর্ষে ভারত। দেশটিতে এ পর্যন্ত অন্তত আট হাজার ৮৮৬ জন করোনায় মারা গেছেন। ভারতে বর্তমানে প্রতি ১৭.৪ দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কিছুদিন আগেও এটি ছিল ১৫.৪। ফলে সংক্রমণের গতি কিছুটা হলেও কমেছে মনে করে সান্ত্বনা নিচ্ছে ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মাস দুয়েক লকডাউন চলাকালে প্রতি ৩.৪ দিনে আক্রান্তের দ্বিগুণ হচ্ছিল বলেও মনে করিয়ে দিয়েছে তারা। ভারতে করোনা সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। এই একটি রাজ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ এক হাজার ১৪১ জন। দ্বিতীয় তামিলনাড়ু। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ৬৯৮ জন। তৃতীয় দিল্লিতে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৬৮৭ জন করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। আগামী এক-দুই মাসের ভিতর ভারত করোনা সংক্রমণের শিখরে পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এখন থেকেই। এমন পরিস্থিতিতে রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরও কঠোর করতে রাজ্যগুলোর কাছে বার্তা পাঠিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগামী ১৬ ও ১৭ জুন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।

বেইজিংয়ে ছয়জন আক্রান্ত হওয়ামাত্র লকডাউন : করোনাভাইরাসের নতুন করে প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কায় চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের কিছু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। করোনাভাইরাসে ছয়জন সংক্রমিত হওয়ার খবরে গতকাল এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এএফপির এক খবরে বলা হয়, বেইজিংয়ে স্থানীয় সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বেইজিংয়ের নগর কর্মকর্তাদের দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে জানানো হয়, বেইজিংয়ের ফেংতাই জেলার ১১টি আবাসিক এলাকার লোকজনকে বাড়ি থেকে বের না হতে বলা হয়েছে। নতুন করে করোনায় যারা সংক্রমিত হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগেরই অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে স্থানীয় একটি মাংসের বাজারের যোগসূত্র রয়েছে। কর্মকর্তারা বলেন, গত দুই মাসের মধ্যে বেইজিংয়ে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। সংক্রমিত ব্যক্তিরা অনেকে গত সপ্তাহে স্থানীয় সিনফাদি মাংসের বাজারে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে বেইজিংয়ের ভিতর বাইরের কারও আসা-যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

এ অবস্থায় বেইজিং বাজার পর্যবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ শহরজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি তদন্ত করতে টাটকা ও হিমায়িত মাংস, পোলট্রি ও মাছের বাজার, ওয়ারহাউস, কাটারিং সেবা-সব পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। রাতারাতি বড় সুপারমার্কেট চেইনগুলো রাজধানী থেকে তাদের স্যামন মাছ সরিয়ে ফেলেছে। অনেক রেস্তোরাঁ স্যামন মাছ পরিবেশন বন্ধ করে দিয়েছে। সিনফাদি বাজারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, সবার দ্রুত পরীক্ষার জন্য ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বাজারের কর্মীদের পরীক্ষা হচ্ছে।

দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয় আমেরিকায় : করোনা-সংক্রমণের গতি যদি আর নাও বাড়ে তাতেও সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ছুঁয়ে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একাংশ। কিন্তু সেই সঙ্গে এখন নতুন আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, করোনা-সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ হয়তো আছড়ে পড়তে চলেছে আমারিকায়। এই ইঙ্গিত মিলেছে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা দেখে। ফলে মার্কিন প্রদেশগুলোতে পরীক্ষা বাড়ানো হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে এই কারণটিও আছে বলে প্রশাসনের দাবি। টেক্সাস, অ্যারিজোনাসহ অন্তত ছয়টি প্রদেশের হাসপাতালে এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে স্থানাভাব। টেক্সাসে পরপর তিন দিন রেকর্ড সংখ্যক করোনা-রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হিউস্টনের মেয়র জানিয়েছেন, তারা একটি স্টেডিয়ামকে আপৎকালীন হাসপাতাল করার কথা ভাবছেন।

সর্বশেষ খবর