দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৩ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ৭৩৮ জনে। একই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৮০৯ জনের শরীরে। দেশে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭ জন। আইইডিসিআরের অনুমিত হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে আরও এক হাজার ৪০৯ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৫৫ হাজার ৭২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এসব তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩১ জন পুরুষ এবং ১৪ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, একজনের বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি। এ ছাড়া সাতজনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ১৩ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, সাতজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং দুজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের ২১ জন ঢাকা বিভাগের, ১০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন করে খুলনা ও সিলেট বিভাগের, দুজন করে রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের, একজন করে রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। ৪৩ জনের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩০ জন, বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১২ জন এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় একজনকে। নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৭ হাজার ৩৪টি নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। আগের নমুনাসহ ১৮ হাজার ৯৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৫টি পরীক্ষাগারে। এ পর্যন্ত দেশে মোট সাত লাখ ৩০ হাজার ১৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিবেচনায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক পাঁচ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, মৃতের হার এক দশমিক ২৬ শতাংশ। অনলাইন বুলেটিনে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের প্রতি অমানবিক হবেন না। যথাযথ সৎকারে সহায়তা করুন। যারা মৃত ব্যক্তিদের দাফনকাজ করছেন, তাদের প্রতি ও সব সম্মুখযোদ্ধার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
এদিকে সারা দেশের কোথায় কোথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং নতুন রোগী শনাক্ত হলেন তার সবশেষ খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা- দিনাজপুর : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃতসহ আরও ১৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এনিয়ে দিনাজপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৫৭৮ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৪০৯ জন, নারী ১৪২ জন ও শিশু ২৭ জন রয়েছে। এর মধ্যে ২৩৯ জন হোম আইসোলেশনে, ১০ জন প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে, ১১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং গত ২৪ ঘণ্টায় সদরে একজন রোগী মারা যাওয়ায় এ পর্যন্ত ১২ জন মৃত্যুবরণ করলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জন সুস্থসহ এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩০৬ জন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল কুদ্দুছ। গাজীপুর : জেলায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৭৪ জন। এনিয়ে গাজীপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল তিন হাজার ৩৪৪ জনে। গতকাল সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজীপুরে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৭৪ জনের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও সদরে ২৭ জন, কালিয়াকৈরে ১৮ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ছয়জন ও কাপাসিয়া উপজেলায় ২৩ জন। মানিকগঞ্জ : জেলায় আরও ১৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুজন চিকিৎসক, আটজন নার্স, ও একজন সাংবাদিক রয়েছেন। এনিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৬৮ জনে। মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ গতকাল এ তথ্য জানান। এদিকে মো. আতিয়ার রহমান নামের জেলা পুলিশের এক কনস্টেবল করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। শনিবার রাত ১০টার দিকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে তিনি মারা যান। গত ১৯ জুন মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন এবং ২৪ জুন ফলাফল পজিটিভ আসে। মাগুরা : জেলায় নতুন করে ১৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১১৬ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৪৬ জন। সিভিল সার্জন প্রদীপ কুমার সাহা জানান, গতকাল হাতে পাওয়া ১৯ জনের টেস্ট রিপোর্টে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা সদরে ১১ জন, শ্রীপুরে তিনজন, মহম্মদপুরে চারজন ও শালিখা উপজেলায় একজন। নোয়াখালী : জেলায় নতুন করে আরও ৪২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৪ জন। এনিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হলেন দুই হাজার ১৩ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জন ও সুস্থ হয়েছেন ৮২৭ জন। ফেনী : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্রামুজ্জামান। গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মারা যান। পারিবারিক সূত্রে জানা যায় ১৫ জুন থেকে তিনি জ্বর-কাশিসহ অসুস্থতা বোধ করলে বাসায় চিকিৎসা নেন। ১৯ জুন শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সন্ধ্যায় সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি আইসিইউতে ছিলেন। গত দুই দিন থেকে তিনি ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ছিলেন। ফেনীতে তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এলেও সেখানে তার করোনা পজিটিভ আসে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। অ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জামান ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালের সভাপতি ও ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন। তার মৃত্যুতে ফেনীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। ঝিনাইদহ : জেলায় নতুন করে আরও ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮৫ জন। গতকাল কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে ঝিনাইদহে ৬৭টি রিপোর্টে এসব তথ্য জানা গেছে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে শৈলকুপা ও কালীগঞ্জ উপজেলায় একজন করে মোট দুজনের।
চাঁদপুর : চাঁদপুরে আরও ৪২ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্তসহ জেলায় মোট আক্রান্ত ৮৪৭ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। গতকাল চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, দুই দফায় রিপোর্ট এসেছে ১০৬টি। তন্মধ্যে ৪২টি পজিটিভ, বাকিগুলো নেগেটিভ। ৪২ জনের মধ্যে হাজীগঞ্জের মৃত একজনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, আক্রান্ত ৪২ জনের মধ্যে চাঁদপুর সদরে ১৪, ফরিদগঞ্জে ৫ জন, হাজীগঞ্জে ৭, মতলব উত্তরে ১, মতলব দক্ষিণে ৭, কচুয়ায় ১ ও হাইমচরে সাতজন রয়েছেন। কুমিল্লা : হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ইউএনও ও তার সরকারি গাড়িচালক, পিয়ন, নাইটগার্ডসহ নতুন মোট ২০ জন করোনা আক্রান্তের রিপোর্ট এসেছে। এ নিয়ে উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৯ জনে। বরগুনা : বরগুনায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩২ জনের শরীরে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলেন ২২০ জন। এর মধ্যে বরগুনা সদরে ১০৩, আমতলীতে ৩৪, পাথরঘাটায় ২১, বামনায় ২৭, বেতাগীতে ২২ এবং তালতলী উপজেলায় ১৩ জন রয়েছে। এদের মধ্য পুরুষ ১৭১ মহিলা ৪৯ জন। আমতলী (বরগুনা) : উপজেলায় আরও আটজন আক্রান্ত হয়েছেন। এনিয়ে আমতলীতে ৩৪ ও তালতলীতে ১২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার আমতলী ও তালতলী উপজেলার করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকায় ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। শনিবার রাতে পাওয়া ওই রিপোর্টে আটজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। বিশ্বনাথ (সিলেট) : উপজেলায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এদের মধ্যে শনাক্তের ৫ দিন আগেই ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তার নাম নূর ঝিরন বিবি (৬০)। তিনি উপজেলার অলঙ্কারি ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের বাসিন্দা। উপসর্গ নিয়ে সিলেটের একটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর গেল ১৯ জুন নমুনা দেন তিনি। পরে ২২ জুন মৃত্যু ঘটে তার। তিনিসহ এ উপজেলায় নতুন আক্রান্ত ৬ জনের কভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে শনিবার রাত ১০টায়। আক্রান্ত অন্য ৫ জনের মধ্যে রয়েছেন সদরের সোনালী ও পূবালী ব্যাংকের দুজন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের একজন, দৌলতপুর ইউনিয়নের চরচ ী গ্রামের একজন ও হাবড়া বাজার এলাকার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা একজন। এ ছাড়াও ফলোআপ টেস্টে ফের পজিটিভ এসেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী-পুত্রের রিপোর্ট। এ নিয়ে উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৬ জনে।