করোনাভাইরাস, সারা বিশ্বের এক আতঙ্ক। ইতিমধ্যে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস কেবল শ্বাসযন্ত্র অর্থাৎ ফুসফুসেই নয়, আক্রমণ করে মস্তিষ্ক এবং হৃদযন্ত্রেও। আর ভাইরাসটি মানবদেহে রক্তের গ্লুকোজকে অতি মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়, এমনকি পায়ের আঙ্গুলকেও ভাইরাসটি বাদ দেয় না। এমনটাই জানিয়েছেন ভাইরাসটি নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানী মালাথি টয়ের।
সম্প্রতি ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেন, ভাইরাসটি সংক্রমণ ঘটিয়ে সৃষ্টি করতে পারে নিউরোলজিক্যাল জটিলতা, যেমন- প্রদাহ। যুক্তরাজ্যের গবেষণায় জানা গেছে, প্রায় ৪৩ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্কের অকার্যকারিতা, স্নায়ুর ক্ষতিসাধন এমনকি স্ট্রোকের মতো ভয়াবহতা দেখা যায়। শুধু তাই নয়, এটি বৃহদান্ত্র আর ক্ষুদ্রান্ত্রের কোষ আস্তরণকেও সংক্রমিত করে। যার ফলে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে দেখা দেয় বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা এবং তরল মল। ভাইরাসটি ফুসফুসে আক্রমণ করলে ঘটে থাকে গুরুতর ইম্মুন প্রতিক্রিয়া। আরও গুরুতর হয় যখন ফুসফুসে ঘটে ARDS এর মতো প্রদাহ। যা শ্বাসযন্ত্রের জন্য ভয়ানক কষ্টদায়ক এবং বিপর্যয়ের। এটি মানবদেহে নিঃসৃত করে ইনসুলিন, এর প্রোটিন প্রভাবিত হয় ভাইরাসের দ্বারা। আর এর ফলে রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যায় দ্রুত। ভাইরাসটির থাবা থেকে পিত্তথলিও রেহাই পায় না। চিনের উহানে ভাইরাসটির আবিষ্কারের পর থেকে জানা যায় যে, ভাইরাসটি মানবদেহে হৃদযন্ত্রকেও আক্রমণ করে। যার ফলে হতে পারে হৃদযন্ত্রের ছন্দ চ্যুতি বা Arrythmia । এমনকি অনেক সময় হতে পারে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাকও। আমরা জানি, মানবদেহে সাধারণত যে নালিকাগুলো বর্জ্য নিষ্কাশন করে থাকে এদের বলা হয় ACE2 receptor । যা পরিপূর্ণ থাকে এই ACE2 receptor এ। এই রিসেপটরগুলো মূলত ভাইরাসের প্রবেশের দ্বার। আরও জানা গেছে, ভাইরাসটির প্রভাব ঘটে এন্ডথেলিয়াল কোষে। এই কোষগুলো মানবদেহের রক্ত নালির সংকোচন আর প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ভাইরাসটির আক্রমণের ফলে আক্রান্ত কোষ অকার্যকর হয়ে যায়। ফলে রক্তের জমাট পি- দেখা দেয়। এ জন্য পায়ের আঙ্গুলে দেখা দিতে পারে বেদনাময় ক্ষত। ভাইরাসটির সংক্রমণে আক্রান্ত রোগী হারায় মুখের স্বাদ এবং গন্ধ চেতনা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্ত রোগীর মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ রোগীর মুখের স্বাদ আর গন্ধ চেতনা সাময়িকভাবে লোপ পায়।