বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সাহেদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

১৫০ অভিযোগের তদন্তে র‌্যাব, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাহেদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

এনআরবি ব্যাংকের ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিমসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ কার্যালয় বিষয়টি জানিয়েছে। এদিকে সাহেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা জালিয়াতির মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে র‌্যাব। ইতিমধ্যেই মামলাটি ডিবি থেকে র‌্যাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যদিকে সাহেদের গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও মাদকের মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশই (ডিবি) তদন্ত করবে। সাহেদের বিরুদ্ধে ১৫০ অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে র‌্যাব।

জানা গেছে, সাহেদের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইব্রাহিম খলিল, এনআরবি ব্যাংকের করপোরেট হেড অফিসের সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার মো. সোহানুর রহমান ও ব্যাংকটির ভাইস প্র্রেসিডেন্ট ওয়াহিদ বিন আহমেদকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এনআরবি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সুদসহ ১ কোটি ৫১ লাখ ৮১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে দুদকের দাবি। দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের চলতি হিসাবটি খোলার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো টাকা জমা গ্রহণ করা হয়নি। সাহেদ এনআরবি ব্যাংকের একজন নতুন গ্রাহক। তিনি ১৭ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে হিসাবটি খোলেন। কিন্তু হিসাব খোলার আগের দিন প্রিন্সিপাল অফিসার মো. সোহানুর রহমান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদ বিন আহমেদ এসএমই ব্যাংকিং ঋণ মঞ্জুরির জন্য সুপারিশ করেন। ঋণ মঞ্জুরির পূর্ব পর্যন্ত উক্ত হিসাবে কোনো লেনদেন ছিল না। সাহেদের হাসপাতাল ব্যবসার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। অন্য কোনো ব্যাংকে বা অন্য কোনো ব্যবসায় সাহেদের কী ধরনের বিনিয়োগ বা লেনদেন ছিল, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি। ঋণের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত জামানত গ্রহণ করা হয়নি। ঋণ বিতরণের পূর্বে বা পরে যথাযথ তদারকি করা হয়নি। গ্রাহকের ব্যবসায়িক সুনাম, ঐতিহ্য, অভিজ্ঞতা যাচাই করা হয়নি। ঋণ মঞ্জুরিপত্রের শর্তানুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়নি। সাহেদ স্বেচ্ছায় কখনো ঋণের টাকা পরিশোধ করেননি। তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের জন্য ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। সাহেদসহ অন্যরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক এনআরবি ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৫১ লাখ ৮১ হাজার টাকা আত্মসাতের অপরাধ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা জালিয়াতির মামলার তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর মামলাটি হস্তান্তর করা হয়। তবে রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদকে নিয়ে অভিযানে উদ্ধার অস্ত্র ও মাদকের মামলা ডিবিই তদন্ত করবে।’ অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, ‘সাহেদকে গ্রেফতার থেকে শুরু করে র‌্যাব কাজ করেছে। মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় ডিবিও তদন্ত করছিল। গত পাঁচ দিন আমাদের কাছে রিমান্ডে ছিল সাহেদ। অনেক তথ্য আমরা পেয়েছি। র‌্যাবে আসামি হস্তান্তর করা হবে।’

১৫০ অভিযোগ : সাহেদের অপকর্মের তথ্য জানতে র‌্যাব যে হটলাইন চালু করেছে সেখানে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৫০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে ১৩০টি অভিযোগ এসেছে টেলিফোনে। আর বাকি ২০টি ই-মেইলে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর ভুক্তভোগীদের আইনি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এসব অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে।

রিকশাওয়ালাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন সাহেদ : মহাপ্রতারক সাহেদের বিরুদ্ধে রিকশাওয়ালাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাহেদের একাধিক সাবেক কর্মী জানান, কয়েক বছর আগে সাহেদ উত্তরা এলাকায় একটি স্লোগান নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। তার স্লোগান ‘প্যাডেল যার, রিকশা তার।’ বিনামূল্যে রিকশা সরবরাহের নাম করে একটি বিদেশি এনজিও থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি। আসলে কোনো মানুষকে তিনি বিনামূল্যে রিকশা দেননি। যাদের রিকশা দেওয়া হয়েছিল তাদের বলা হয়- রিকশা কেনার টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত দিনে ২০০ টাকা জমা দিতে হবে। এভাবে রিকশাওয়ালাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন আবার এনজিওর কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর