বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) ঠেকাতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সরকার চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। অথচ সরকারি আদেশ অমান্য ও স্থানীয় প্রশাসনে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া গিন্নি দেবী আগরওয়াল মহিলা কলেজে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জোর করে ডেকে এনে নেওয়া হচ্ছে পরীক্ষা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বুধবার সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে এইচএসসি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য কলেজ প্রাঙ্গণে ভিড় জমান। শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলাফেরা করেন। অনেক শিক্ষার্থী মুখে মাস্কও ব্যবহার করেননি। শরীর ঘেঁষে তারা চলাফেরা করছিলেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গল্প করা থেকে আড্ডা দিয়েছেন। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ শিক্ষাবর্ষের অধ্যয়নরত এইচএসসি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির তালিকা প্রস্তুত করার জন্য মেধা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাই পরীক্ষার জন্য তারিখ নির্ধারণ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় তারিখ জানানো হয় এবং মেধা যাচাই পরীক্ষার জন্য মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা ১০ আগস্ট, ব্যবসা শাখা শিক্ষার্থীরা ১১ মার্চ ও বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীরা ১২ আগস্ট কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন। শিক্ষার্থীরা জানান, সরকার যেখানে সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনার জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে, সেখানে কলেজ কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কলেজে এসে প্রবেশপত্র নেওয়ার জন্য কলেজে আসতে হয়েছে। তারা আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রবেশপত্র না নিলে বা এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করলে পরে ঝামেলা করতে পারে তাই প্রবেশপত্র নিতে আসতে হয়। আর পরীক্ষার ফি হিসেবে বিজ্ঞান শাখার জন্য ৭০০, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার জন্য ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ বদরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু বলেন, ‘কলেজের প্রিন্সিপাল আমাকে এ বিষয়ে কিছুই বলেননি। তিনি তার মতো করে কলেজ পরিচালনা করেন, কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তবে আমি শুনেছি উপবৃত্তির মেধা যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।’ জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার আলাউদ্দীন আল আজাদ বলেন, ‘আমি এই প্রথম শুনলাম শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনে ডেকে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। কলেজ প্রিন্সিপাল শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনে ডেকে পরীক্ষা নিয়েছেন। আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’ এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নুর কুতুবুল আলম বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে এই ধরনের কার্যক্রম করার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেহেতু কোনো কলেজ শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে পরীক্ষা নিতে পারবে না। তবে অনলাইনে অথবা বাসায় পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে।’