মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

আত্তীকরণের প্রশ্নই আসে না

মন্তব্য পররাষ্ট্র সচিবের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আত্তীকরণের যে কোনো ধরনের চিন্তাকে নাকচ করে দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের কোনো চিন্তা সরকারের নেই। গতকাল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার কানাডিয়ান হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক ওয়েবিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। এতে দেশি-বিদেশি রাজনীতিক ও কূটনীতিকরা অংশ নেন।

মিয়ানমারের প্রতি বাংলাদেশ সব সময় প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করে আসছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, কঠিন যে বাস্তবতা আমাদের মনে রাখতে হবে সেটি হচ্ছে মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। সে দিক থেকে বাংলাদেশ মিয়ানমারের প্রতি সব সময় এক আদর্শ প্রতিবেশীর মতো আচরণ করে এসেছে। কিন্তু অনেক সময়ই মিয়ানমার সেই জায়গা থেকে বিচ্যুত ছিল। রোহিঙ্গা সমস্যার শুরু থেকে বাংলাদেশে কূটনৈতিকভাবে সমাধান করতে চেয়েছে। দুবার আমরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সমর্থন করেছি কিন্তু তারা তাদের দেশের মানুষদের ফেরত নিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভাসানচর নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু সাগর থেকে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে আমরা উদ্ধার করে ভাসানচরে রেখেছি। সেখানে তারা ভালো আছেন। অন্য রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। এর আগে সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি দেখানোর জন্য জাতিসংঘ প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীদের পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা সেখানে রোহিঙ্গাদেরও সরেজমিন নিয়ে যাব। সেখানকার অবস্থা ভালো মনে করলে বর্ষা মৌসুমের পরে তাদের সেখানে স্থানান্তর করা হবে।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা একটি জনগোষ্ঠীকে প্রান্তিকীকরণের জ্বলন্ত উদাহরণ। এর সমাধান মিয়ানমারেই আছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রীতিনীতি ভঙ্গ করে রোহিঙ্গাদের অত্যাচার চালানো হয়েছে এবং সেই কারণে দায়বদ্ধতার বিষয়টি আন্তর্জাতিকীকরণ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্ট ও আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে বিচার প্রক্রিয়া চলছে। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পরে রোহিঙ্গারা যেন জীবন জীবিকা অর্জন করতে পারে তার জন্য গ্রেড ৬ থেকে ৯ পর্যন্ত মিয়ানমার কারিকুলামে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে।

‘রোহিঙ্গা সমস্যা : পশ্চিমা, এশিয়ান এবং দ্বিপক্ষীয় প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সাঈদ হামিদ আলবার, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনোইট প্রেফোনটাইনি, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক। এতে সমাপনী বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম। 

মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার সমস্যার সমাধান হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেলে একজন মানুষের হৃদয় ভেঙে যাবে তাদের ওপর বার্মিজ বাহিনীর বর্বরতা দেখে। তবুও আমরা আশা রাখছি কূটনৈতিক পদ্ধতিতেই এ সমস্যার সমাধান হবে। আর এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ একা নয়। আমাদের সবার দায়িত্ব আছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখন পর্যন্ত ৯৫১ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের সহায়তা বাংলাদেশের প্রতি আমাদের অব্যাহত থাকবে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশ সব সময় মিয়ানমারকে সমর্থন করেছে। সেই ২০১৪ সাল থেকে জাতিসংঘের যে কোনো রেজ্যুলেশনে সব সময় মিয়ানমারের পক্ষে বাংলাদেশ সমর্থন দিয়েছে। ত্রিপক্ষীয় যে কোনো সমস্যায় বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজেছে। আগেও দুবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই পদ্ধতি সফল হয়েছে। কিন্তু এবার হয়নি। মিয়ানমার শুরু থেকেই সময়ক্ষেপণ করে আসছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি-কে দুবার বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আসেননি। তারপরও বাংলাদেশকে কূটনৈতিক পদ্ধতিতে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করে যেতে হবে।

কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনোইট প্রেফোনটাইনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নিজেদের অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছে কানাডা সরকার। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মানবিক সমস্যা সমাধানে অবদান রাখা, মিয়ানমারের ওপর চাপ বজায় রাখা, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা ও রোহিঙ্গাদের কণ্ঠ প্রসারের সুযোগ করে দেওয়া।

মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ হামিদ আলবার বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু মানবিক সমস্যা বরং এটি বৈশ্বিক ও রাজনৈতিক সমস্যা। রোহিঙ্গা সমস্যার প্রভাব সরাসরিভাবে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া অনুভূত হচ্ছে জানিয়ে আলবার বলেন, আসিয়ানের কয়েকটি সদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনলেও ওই সংস্থার এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো নীতি নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর