বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিন উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তির প্রস্তাব বাংলাদেশের

টিকফা’র ভার্চুয়াল বৈঠক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশের ওষুধ ফ্যাক্টরিতে করোনার ভ্যাকসিন ও অন্যান্য ওষুধ উৎপাদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টম্যান্ট ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা)র ভার্চুয়াল বৈঠকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এতে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির বাণিজ্য দফতর ইউএসটিআর এর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী প্রতিনিধি ক্রিস উইলসন নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে অংশ নিয়েছেন এমন একটি সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভ্যাকসিন ও ওষুধ উৎপাদনে এই চুক্তির প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে তাদের দেশের সরকারি-বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, টিকফার এবারের বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল ঢাকায় গত মার্চে। এ লক্ষ্যে দুই পক্ষ আলোচনার এজেন্ডাও চূড়ান্ত করেছিল, যেখানে ১৮টি ইস্যুর মধ্যে ধোঁয়ার সাহায্যে তুলা জীবাণুমুক্ত করা, চাল রপ্তানিতে ভর্তুকি, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছিল। কিন্তু মার্চের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর তীব্রতা শুধু সেই বৈঠকটিকেই পিছিয়ে দেয়নি, এর আলোচনার এজেন্ডাও পাল্টে দিয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে যে ভার্চুয়াল বৈঠকটি হয়েছে তাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করোনার ভ্যাকসিন ও ওষুধ উৎপাদনের বিষয়ে চুক্তি এবং করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা যে অর্ডার বাতিল করেছে, সেগুলোর  ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়। এছাড়া জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের ইস্যুটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তোলা হলেও যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতো বলেছে, তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। টিকফা আলোচনার ৬ নম্বরে ছিল ভ্যাকসিন ইস্যুটি, যার শিরোনাম ছিল- ‘কনট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং অব দ্যা কভিড-১৯ ভ্যাকসিন অ্যান্ড আদার ফার্মাসিউটিক্যালস প্রোডাক্টস। এ বিষয়ে বৈঠকে অংশ নেওয়া সূত্রগুলো জানায়, আমরা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছি, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সারা পৃথিবীতে একশোর বেশি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচামালের সুবিধা, সহজলভ্য শ্রমশক্তি ও মেধাস্বত্ব সুবিধা পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে ওষুধ উৎপাদনে খরচ অত্যন্ত কম। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একটি প্যারাসিটামল উৎপাদনে এক টাকা খরচ হলেও যুক্তরাষ্ট্রে এই জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় হয়। করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর সেটি যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনে যে খরচ পড়বে, বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি তার চেয়ে অনেক কম মূল্যে দেশটিতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা ভ্যাকসিন ও জেনেরিক ওষুধ বাংলাদেশে উৎপাদনের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার পর সভায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন এবং তারা প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানান। সূত্রগুলো আরও জানায়, করোনা মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কোম্পানি অর্ডার বাতিল করেছে, বা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে তাদের অনেকের কাছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কোম্পানির বকেয়া রয়ে গেছে। সেই অর্থ পরিশোধের বিষয়ে দেশটির বাণিজ্য দফতরের সহায়তা চাওয়া হয়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, পাওনার পরিমাণ ও কোম্পানিগুলোর নামসহ তথ্য দিলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।  ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টিকফা চুক্তি সই হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এখন পর্যন্ত টিকফা ফোরামের মোট চারটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ চতুর্থ সভাটি অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। রীতি অনুযায়ী এ বছর সভার স্বাগতিক দেশ ছিল বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর