চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেডের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা বাংলাদেশে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পেতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে অর্থ, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তুতি রাখতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দকৃত ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আট হাজার কোটি টাকা ব্যবহারের পরিকল্পনা চলছে।
গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তাদের সিনোভ্যাক কোম্পানি বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেবে। বাংলাদেশে তারা কিছু পরীক্ষাও করতে চায়, ট্রায়াল করতে চায়। সেই বিষয়ে আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছি। ভ্যাকসিনের সব বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি।’ তিনি বলেন, ‘ভারত, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের টিকার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী চিন্তাভাবনা করে আমাদের একটা নির্দেশনা দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা যেহেতু চাই দেশে ভ্যাকসিন আসুক, তাহলে তার তো ট্রায়াল লাগবেই। সেই ট্রায়ালটা কাদের ওপর করব? প্রস্তাব হলো, চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের ওপর আগে (ট্রায়াল) করা হবে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রায়াল করার বিষয়ে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা স্বেচ্ছায় আসবে, তাদের ওপরই শুধু ট্রায়াল হবে। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত এবং সিনোভ্যাক কোম্পানিকেও আমরা এ কথা জানিয়ে দিয়েছি।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘চীনের কাছ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে তাদের যেসব কর্মী এবং দূতাবাসের লোকজন রয়েছেন, তাদের ওপরও এ কোম্পানি ট্রায়াল করবে। আজ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অফিশিয়ালি আমরা জানিয়ে দিয়েছি, আপনারা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করুন আমাদের মন্ত্রণালয় এবং আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায়। চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের ওই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সব খরচ চীন বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত চীনের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব তা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা বলেছি আমাদের দেশে ট্রায়াল করার সুযোগ দেব, তবে আমরা যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিনটা পাই সে কথাটার ওপর জোর দিয়েছি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি) থেকে ভ্যাকসিন পেতে যেন দেরি না হয় এ জন্য প্রস্তুতি রাখছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য, পররাষ্ট্র, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে সম্প্রতি এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ভ্যাকসিন কেনার অর্থ বরাদ্দের জন্য পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গতকাল কমিটির ১৮তম অনলাইন সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা মো. শহীদুল্লাহ। সেখানে বলা হয়, কভিড-১৯ টিকা (ভ্যাকসিন)-এর ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর উভয় পক্ষ থেকেই পদক্ষেপ জোরদার করা হচ্ছে। যেহেতু প্রথমেই হয়তো দেশের সম্পূর্ণ জনসংখ্যার জন্য কভিড-১৯ ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে, তাই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বাছাই করে পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন প্রদান করা যেতে পারে। কভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণের ব্যাপারে ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ (নাইট্যাগ)-এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীতে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণের বিষয়ে গাইডলাইন প্রস্তুতের প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে যেসব জেলায় কভিড-১৯ পিসিআর টেস্টের সুবিধা নেই এবং সংক্রমণের হার বেশি সেখানে এন্টিজেন টেস্ট শুরু করা যায় বলে এ সভা মনে করে।