শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চাল পিঁয়াজের বাড়তি দামে দিশাহারা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চাল ও পিঁয়াজের বাড়তি দামে দিশাহারা নিম্ন আয়ের মানুষ। করোনাকালে সীমিত আয়ে সংসারের খরচ সামাল দিতে গিয়ে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এর ওপর গত এক সপ্তাহ ধরে ‘বোঝার উপর শাকের আঁটি’র মতো এই দুটি পণ্যের বাড়তি দাম অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। ক্রেতারা বলছেন, মহামারীর কারণে তাদের আয় কমলেও কমছে না ব্যয়। নিত্যপণ্যের পেছনে অতিরিক্ত খরচে হিসাব মেলাতে পারছেন না তারা।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পিঁয়াজ (আমদানি) ৬৫ টাকা এবং দেশি পিঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ওপরে খোসা ছাড়া আরেক জাতের পিঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। পনেরো দিন আগেও আমদানি পিঁয়াজ ৪০ টাকা এবং দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। আর খোসাবিহীন পিঁয়াজের দাম ছিল ২০ টাকা কেজি। অর্থাৎ প্রকারভেদে কেজিপ্রতি পণ্যটির দাম বেড়েছে গড়ে ২০ টাকা করে। অপরদিকে চালের দাম বাড়ার পদ্ধতিটি ভিন্নরকম। ধীরে ধীরে কেজিতে এক দুই টাকা করে গত পনেরো দিনে মোটা ‘২৮’ চালের দাম ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে। মিনিকেট চালের দামও বেড়েছে। গতকাল রাজধানীর মিরপুর খুচরা বাজারে মোটা চাল ‘২৮’ এর ৫০ কেজি বস্তার দাম ছিল ২ হাজার ২৫০ টাকা এবং মিনিকেট প্রতি বস্তা ২ হাজার ৬৭০ টাকা। এক মাস আগেও এসব চালের বস্তাপ্রতি দাম প্রায় ১০০ টাকার মতো কম ছিল। রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকার টেলিভিশন মেকানিক্স                 আলাউদ্দিন জানান, করোনা মহামারীর কারণে মার্চের পর থেকে দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকায় কোনো আয় ছিল না। এখন দোকান খুললেও আগের মতো কাজ আসছে না। এই অবস্থায় চাল-পিঁয়াজের বাড়তি ব্যয়ে তাল সামলাতে পারছেন না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতার কারণেই হঠাৎ পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাওসার আলম খান বাবুল বলছেন, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই (উৎপাদনহীন) সময়টাতে চালের দাম বরাবরই বাড়ে। সে অনুযায়ী এবারও বাড়ছে। এ ছাড়া এ সময়ে কৃষকের হাতে চাল থাকে না। অনেক কৃষকও কিনে খান। ফলে চাহিদার কারণে অপেক্ষাকৃত মোটা চালের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে থাকে। আগামী ডিসেম্বরে নতুন আবাদ ওঠা পর্যন্ত এখন পণ্যটির দাম কিছুটা বাড়তির দিকে থাকবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (বাজার সংযোগ) মজিবর রহমান জানান, চালের দাম খুব একটা বাড়েনি, এটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। তবে হঠাৎ পিঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি তাদের ভাবাচ্ছে। মজিবর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে হঠাৎ দাম বাড়ানোর একটা প্রবণতা কাজ করে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এক ধরনের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে যারা আমদানি পণ্যের দাম বাড়াতে আন্তর্জাতিকভাবে ভূমিকা রাখছে। কৃষিপণ্যের বাজার দর নিয়ে কাজ করা এই কর্মকর্তা বলেন, তারা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পণ্যটির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে ব্যবসায়ীদের ফোনে খবরটি জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে দেশে মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও পণ্যটির দাম বেড়ে যায় যখন তখন। তিনি জানান, পিঁয়াজসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে গত রবিবার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা হয়। সেই সভায় তারা বাজার মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো, মজুদদারি ধরতে গোয়েন্দা সংস্থাকে মাঠে থাকার অনুরোধ জানানোসহ ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা না করার প্রেষণা (মোটিভেশন) দিয়েছেন। তবে এ ধরনের মোটিভেশনে কতটা কাজ হবে তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।

শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত মালিক সমিতির নেতা হাজী মাজেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার খালি আমাগো দোষে, ইন্ডিয়ায় যে দাম বেড়েছে পিঁয়াজেরÑ হ্যাগো সরকার তো কিছু কয় না... ।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর