বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

জলবায়ু ও করোনা নিয়ে কর্মপরিকল্পনার আহ্বান

দ্য গার্ডিয়ানে শেখ হাসিনার নিবন্ধ

প্রতিদিন ডেস্ক

জলবায়ু ও করোনা নিয়ে কর্মপরিকল্পনার আহ্বান

জলবায়ু পরিবর্তন ও কভিড-১৯ মহামারী থেকে উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা বর্তমানে বৈশ্বিক হুমকি। এই উভয় ঝুঁকি প্রশমনে আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। আর তা করতে হবে ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে। ক্লাইমেট ভারনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি শেখ হাসিনা ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে লেখা এক নিবন্ধে এ কথা বলেন। নিবন্ধটি মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়। নিবন্ধে শেখ হাসিনা লেখেন, আগস্টে আমার দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। প্রায় দেড় কোটি মানুষ এতে বাস্তুচ্যুত হয়। লাখ লাখ হেক্টর জমির ধান বন্যার পানিতে ভেসে যায়। ফলে লাখ লাখ মানুষের জন্য এ বছর খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন হবে। দুর্যোগ কখনো এককভাবে আঘাত হানে না। মে মাসে বন্যার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়। এর পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে ইতিমধ্যে ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়েছে।

কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে শেখ হাসিনা লেখেন, করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। করোনার কারণে লকডাউন আমাদের বস্ত্রশিল্প ও রপ্তানিকে আঘাত করেছে। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বর্তমানে বেকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিগ্রস্ত অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও লাখ লাখ মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য পরিচর্যা পদ্ধতি ও অর্থনীতিকে নিরাপদ করার চেষ্টা করছে। বিশ্ববাসীর গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছাড়া সাফল্যজনকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি সামাল দিতে পারবে না মতপ্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক মোট কার্বন গ্যাস নিঃসরণের ৮০ শতাংশের জন্য জি-২০ দেশগুলো দায়ী। প্রত্যেকের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছাড়া বিশ্ব সাফল্যজনকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি সামাল দিতে পারবে না। বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি এখনো আমাদের জন্য সেরা সুযোগ। এ পর্যন্ত ১৮৯টি দেশ এই চুক্তিটি অনুমোদন করেছে। এতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বন্ধে নিঃসরণ কমাতে সম্মিলিত পদক্ষেপের অঙ্গীকার রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু সংকট আর মহামারী, দুটোই জটিল সমস্যা, এগুলোর প্রভাব বহুমুখী। হয় সবাই মিলে এর সমাধান করতে হবে, না হয় কোনো সমাধানই হবে না। কোনো একটি দেশ যদি শুধু নিজেদের জন্য কভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারও খরচ করে, তাতে সুফল আসবে না, যদি অন্য দেশে মহামারী বেড়ে চলে। ঠিক একইভাবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ কার্বন গ্যাস নিঃসরণের লাগাম টেনে পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি গড়ে তুললেও তাতে কাজ হবে না, যদি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্যাস নিঃসরণকারী দেশগুলো একই পথ অনুসরণ না করে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৯টি দেশ ওই চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না হতে পারে, সেজন্য নিঃসরণের মাত্রা সম্মিলিতভাবে কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছে ওই চুক্তিতে। আর সম্ভব হলে তা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখেন, দ্বিতীয় ওই লক্ষ্য, যেটা আরও উচ্চাভিলাষী, তার প্রস্তাব করা হয়েছিল ক্লাইমেট ভারনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) পক্ষ থেকে, বর্তমানে আমি যার প্রধান। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য অন্যায়ভাবে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে এমন ৪৮টি দেশ এই ফোরামের সদস্য, বাংলাদেশ তার একটি। জলবায়ু ঝুঁকি প্রশমন ও অভিযোজনের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে সিভিএফ দেশগুলোই সামনের কাতারে রয়েছে। মজবুত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ এবং উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য নতুন করে ম্যানগ্রোভ বনায়ন সৃষ্টির উদ্যোগকে তারা উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। আর এ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন এ মাসেই ঢাকায় তাদের অফিস খুলতে যাচ্ছে, যাতে এই কাজগুলো পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আজকের এই জলবায়ু সংকট, কভিড-১৯ আর অর্থনৈতিক বিপর্যয় আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছে, সহযোগিতার গুরুত্বের কথা বলছে। আজ এই সময়ে পুরো বিশ্বকে পিঠ দেখিয়ে উল্টোপথে চলা কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়। জাতিসংঘের আগামী জলবায়ু সম্মেলনে প্রত্যেকটি দেশকে তাদের নিজ নিজ ভূমিকা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। আর কেবল তখনই আমাদের অন্য সব সমস্যা মোকাবিলা করার আশা জাগাবে, যেসব সমস্যা আমাদের সবার অস্তিত্বকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

সর্বশেষ খবর