সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
ফাঁড়িতে যুবক খুন

রায়হান হত্যার দায় স্বীকার করতে চায় না কেউ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্যাতনে যুবক রায়হান আহমদ হত্যার ঘটনায় আট দিন করে রিমান্ড শেষ হয়েছে দুই পুলিশ সদস্যের। রিমান্ডে আছেন আরও একজন। রিমান্ডে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ড সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন পুলিশের এ তিন সদস্য। কিন্তু তাদের কেউই রায়হানকে নির্যাতনের দায় স্বীকার করেননি। রাজি হননি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে। মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

রায়হান হত্যার ঘটনায় বন্দরবাজার ফাঁড়ির দুই এসআইসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১১ অক্টোবর রায়হানের মৃত্যুর পরদিন সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও কনস্টেবল তৌহিদ মিয়াকে। একই দিন ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয় এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজীব হোসেনকে। সাময়িক বরখাস্তের পর লাপাত্তা হয়ে যান এসআই আকবর। আর তাকে পালাতে সহযোগিতা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ফাঁড়ির টু আইসি (দ্বিতীয় কর্মকর্তা) এসআই হাসানকে।

এর মধ্যে ২০ অক্টোবর পুলিশ লাইন থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া টিটু চন্দ্র দাসকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরে দুই দফায় তাকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ২৮ অক্টোবর তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে ২৩ অক্টোবর রাতে পুলিশ লাইন থেকে গ্রেফতার করা হয় কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে। পরদিন তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। পরে আদালত তার আরও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড চলাকালে টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গতকাল আট দিনের রিমান্ড শেষে হারুনুর রশিদকে কারাগারে পাঠানো হয়। একইভাবে ২৮ অক্টোবর রাতে পুলিশ লাইন থেকে গ্রেফতার করা হয় এএসআই আশেক এলাহীকে। পরদিন তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে এএসআই আশেক এলাহীকে মুখোমুখি করা হয় কনস্টেবল হারুনুর রশিদের। সূত্র জানায়, মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে রিমান্ডে নেওয়া তিন পুলিশ সদস্য মৃত্যুর আগে রায়হানকে নির্যাতনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু নির্যাতন করে হত্যার দায় কেউই নিতে রাজি হননি। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতেও রাজি হননি তারা। তাই তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মো. খালেদুজ্জামান জানান, রিমান্ডে নেওয়া আসামিদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের ব্যাপারে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু কেউই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। মামলার তদন্তে ঘটনার সঙ্গে যাদের নাম উঠে আসবে তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অভিযুক্ত কেউই ছাড় পাবে না।

এদিকে হত্যার ঘটনার ২০ দিন পার হলেও এখনো মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া রয়ে গেছেন অধরা। তিনি দেশে আছেন, না পালিয়ে গেছেন তাও বলতে পারছে না কেউ। পুলিশ ও মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই কেউই শনাক্ত করতে পারছে না আকবরের অবস্থান। সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ জানান, আকবরের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই পুলিশের কাছে। তবে তার অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ঘটনার পর ২০ দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় তার অবস্থান শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রঙ্গত, ১০ অক্টোবর রাতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নেওয়া হয় নগরীর নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদকে। পরদিন ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী। প্রথমে ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হান মারা গেছেন বলে দাবি করে পুলিশ। পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ফাঁড়িতে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তোলা হলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন সদস্যকে প্রত্যাহার করে। রায়হানের স্ত্রীও হত্যা এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন।

সর্বশেষ খবর