গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়, বর্তমানে প্রশাসনই রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রশাসনকে এখন আর জনগণের সেবকের ভূমিকায় দেখা যায় না। তারা নিজেরাই এখন রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। অনেকেই নিজেদের রাজনৈতিক নেতৃত্বও দাবি করছেন। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বে সবচেয়ে বড় দুর্যোগ। এই ইস্যুতে আমাদের জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছার একটি সুযোগ ছিল। কিন্তু এখানেও আমরা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে পারিনি। এটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, করোনাকালীন এই সময়ে একটি দুর্বৃত্ত শ্রেণি ব্যবসা শুরু করেছে। স্থাস্থ্য ব্যবস্থাও পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর পুরোপুরি ব্যর্থ। মাস্ক জালিয়াতি, সার্টিফিকেট জালিয়াতিসহ স্বাস্থ্য সেক্টরের নানা দুর্নীতি বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে। কিছুদিন আগেও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ নিয়ে নানা অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু এখন সব বন্ধ রয়েছে। শুধু স্বাস্থ্য খাতেই নয়, সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখন দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। করোনাকে নিয়েও এখন ব্যবসা হচ্ছে। এখন ভ্যাকসিন নিয়ে কী ব্যবসা হয়, সেটাই দেখার বিষয়।
মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, এখন দেশের টাকা পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, শেয়ারবাজার লুট হয়ে যাচ্ছে। কোনো দুর্নীতি, অনিয়মের বিচার সেই অর্থে হচ্ছে না। হাতে গোনা কিছু দুর্নীতিবাজের বিচার করা হচ্ছে। দুর্নীতির রাঘববোয়ালরা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। এগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।দ্বিধাবিভক্ত গণফোরামের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, আগামী ৯ জানুয়ারি গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আমরা বসব। আশা করি, আবারও গণফোরাম ঐক্যবদ্ধ হবে। ড. কামাল হোসেন নিজেই এই উদ্যোগ নিচ্ছেন। ওই দিনই সবকিছু পরিষ্কার হবে। আমাদের ৫-৭ জন সিনিয়র নেতা সেখানে উপস্থিত থাকবেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, দুর্ভাগ্য যে, আমরা একটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ ডিসেম্বর রাতেই হয়ে গেল। প্রশাসন সেই সহযোগিতা করল। জনগণের জবাবদিহিমূলক সরকার না থাকায় এখন গুম, খুন হচ্ছে। প্রতিনিয়তই মানুষ মারা যাচ্ছে। কোনো বিচার নেই। মেজর সিনহা হত্যা বা গ্রিন রোডে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের বিচার হতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার কোনো অধিকারই নেই। প্রতিটি মানুষের জন্য সমঅধিকার, এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিন্তু সেটা পুরোপুরি অনুপস্থিত।
গণফোরামের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশে এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী কার্যক্রম চলছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। সুশাসনের চরম অভাব। বাকস্বাধীনতা নেই। আমরা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধ করেছিলাম সেই চেতনা এখন ভূলুণ্ঠিত। লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই। তিনি বলেন, আজ প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের মতো একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানও সরকারের পক্ষ হয়ে নগ্নভাবে কাজ করেছে। আজিজ কমিশনকেও হার মানিয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ওই সময় যে ভূমিকা পালন করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু এখন সীমান্তে যেভাবে বাংলাদেশিদের হত্যা করা হচ্ছে এটাও কোনোভাবেই কাম্য নয়। দুই পক্ষই বলছে, সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে হবে। সীমান্তে হত্যা হবে কেন? কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ওই দেশের আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে। ট্রায়াল করা যেতে পারে। কিন্তু পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা উচিত নয়। এই বিষয়টি সবাইকে বুঝতে হবে। এখন মনে হচ্ছে, আমরা কাশ্মীর সীমান্তে অবস্থান করছি। সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নতুন ধরন পাওয়ায় সমস্ত বিশ^ এখন ইংল্যান্ড থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখনো ফ্লাইট অব্যাহত রেখেছে। এটা কেন? এটা চলতে থাকলে বাংলাদেশ আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে। অতীতেও ইতালি প্রবাসীরা ঢাকায় পৌঁছে কোনো কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে সারা দেশে করোনা ছড়িয়ে দেয়। এখন ফ্লাইট চলাচল অব্যাহত থাকলে ইংল্যান্ডের নতুন সংক্রমণ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে টানাপোড়েন সম্পর্ক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমি এখন কিছু বলতে পারব না। কারণ, আমি নিজেই অনেক দিন ধরে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিচ্ছিন্ন। এর মাঝে আমার স্ত্রী মারা গেছেন। নানাবিধ সমস্যার কারণে আমি নিজেই ব্যস্ত ছিলাম। এখন ৯ জানুয়ারি গণফোরামের কার্যক্রম কী হয়, তা দেখেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।