শনিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

২১ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী

রফিকুল ইসলাম রনি

কেন্দ্রের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও মাঠ ছাড়েননি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভার ২১টিতেই রয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এরমধ্যে বেশ কয়েকটিতে শক্ত অবস্থানে দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী ‘স্বতন্ত্র’ বিদ্রোহীরাই। এ নিয়ে কয়েকটি পৌরসভায় দলের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এতে নিহতও হয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। আজ ভোট ঘিরে এ সংঘাত আরও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সকাল থেকে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে বসে মনিটরিং করবেন সবকিছু।   

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারাই পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও দমে যাননি বিদ্রোহী প্রার্থীরা। কিছু কিছু প্রার্থী নিজ এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় জোরেশোরে ভোটের মাঠ গরম করেছেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা করেননি তারা। আবার কোনো কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর পেছনে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন। যে কারণে সব চেষ্টার পরও ভোটের মাঠে বিদ্রোহীরা বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের বিপক্ষে যারাই প্রার্থী হয়েছেন, কিংবা কাজ করছেন তাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে বা হয়েছে। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও যারা এখনো প্রার্থী আছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগে তাদের কোনো পদ-পদবি থাকবে না।

দ্বিতীয় ধাপের ৬১ পৌরসভায় ফরম কিনেছিলেন ৩১২ জন। এর মধ্যে একটি পৌরসভার ভোট স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ৬০ পৌরসভায় আজ ভোট হবে। দ্বিতীয় ধাপে এসব পৌরসভার মধ্যে ২১টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তাদের অনেককেই এরই মধ্যে দল থেকে বহিষ্কার বা বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। তবুও তারা নির্বাচনী মাঠ ছাড়ছেন না। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনকে সামনে রেখেও দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। এ দুটি ধাপের নির্বাচনী মাঠে এখনো বেশ কিছু বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা। জেলার এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় এখানে ‘বিদ্রোহী’ হয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলাম। প্রথমে তাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলা হলেও তিনি শোনেননি। পরে তাকে অবশ্য বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার অভিযোগে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবুও তিনি এখনো নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভায় বিদ্রোহী হিসেবে লড়ছেন বর্তমান পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন বাবুল। গত নির্বাচনেও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে জিতেছিলেন। এবার বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পর তাকে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌরসভায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বেগম আশানুর বিশ্বাস। তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের স্ত্রী। এলাকায় গ্রুপিং রাজনীতি থাকায় পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজা। রেজার বড় ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাজেদুল। জানা গেছে, এই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে বিদ্রোহী প্রার্থীকে ‘মদদ’ দেওয়ার অভিযোগে তাকেসহ আরও কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌরসভায় প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর শাহী সুমন। পরে প্রার্থী পরিবর্তন করে দেওয়া হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমানকে। আলমগীর শাহী হন বিদ্রোহী প্রার্থী। এ ঘটনায় তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। তবুও তিনি এখনো নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহীর ভবানীগঞ্জে মামুনুর রশীদ মামুন, আড়ানীতে বর্তমান মেয়র মোক্তার আলী, গাইবান্ধা সদরে আহসানুল করিম লাচু ও সদস্য ফারুক আহমেদ এবং মতবুর রহমান, সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় খায়রুল হোসেন মাওলা ও দেবাশীষ সাহা, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় আবুল কাশেম, ফুলবাড়িয়ায় গোলাম মোস্তফা, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে মনিরুজ্জামান বকুল, কিশোরগঞ্জ সদরে শফিকুল গণি ডালি, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে হেলাল মিয়া ও আনোয়ার হোসেন, কুলাউড়া পৌরসভায় শফি আলম ইউনুস ও শাহজাহান মিয়া, হবিগঞ্জের মাধবপুরে শাহ মুসলেম ও পঙ্কজ সাহাসহ ২১ পৌরসভায় লড়ছেন দলীয় প্রার্থী ও দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর